আজ খবর ডেস্ক:

ইচ্ছে আর চেষ্টা থাকলে কী না হয়! তারই নজির গড়ে সকলকে চমকে দিলেন ঝাড়গ্রামের শুভঙ্কর বালা। কোনও রকম টিউশন ছাড়া নিজের চেষ্টায় ২৬ বছর বয়সী এই যুবক UPSC পরীক্ষায় ৭৯ তম স্থান পেলেন। না, কোনও কোচিং ক্লাস ছিল না। শুধু একমুঠো স্বপ্নকে অবলম্বন করে দিনে ১১ ঘণ্টা করে কঠোর অধ্যাবসায় দিয়ে এই সাফল্য অর্জন করেছেন তিনি।

২৬ বছরের শুভঙ্করের নিজের বাড়ি ঝাড়গ্রাম শহরের রঘুনাথপুরে। শুভঙ্কর ছোট থেকেই বাংলা মাধ্যমে পড়াশোনা করেছেন। ঝাড়গ্রাম KKI স্কুল থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর বেঙ্গালুরু চলে যান ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তে। ২০১৭ সালে ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ করে বেঙ্গালুরুতেই একটি বেসরকারি সংস্থায় দু’বছর ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে চাকরি। সেই সময়েই বেঙ্গালুরুতে ২০১৯সালে প্রথমবার UPSC পরীক্ষা দিয়েছিলেন। প্রথমবার পরীক্ষা দিয়েই প্রিলিমিনারিতে পাশ করেন। কিন্তু মেইনে আটকে যান। তারপরই আরও জোর দিয়ে UPSC-র জন্য পড়াশোনা করতে চাকরি ছেড়ে দিল্লি পাড়ি দেন শুভঙ্কর।
সেখানেই একটা ঘর ভাড়া নিয়ে m UPSC-এর প্রস্তুতি শুরু করেন। ২০২০ সালে আবারও পরীক্ষায় বসেন। আর তারপরেই বাজিমাত। প্রিলিমিনারীতে পাশ করে মেইনে ৭৯ ব়্যাঙ্ক করেন শুভঙ্কর।

শুভঙ্করের আদি বাড়ি গোপীবল্লভপুরের শাশড়ায় । বাবা রাজনারায়ণ বালা পেশায় অবসরপ্রাপ্ত সরকারি হাসপাতালের হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসক। শুভঙ্করের দুই দিদি রয়েছেন। শুভঙ্কররা যখন ছোট ছিলেন তাঁদের পড়াশোনার স্বার্থে তাঁর বাবা গ্রামের সমস্ত জমি বাড়ি বেচে ঝাড়গ্রামে একটি ভাড়া বাড়িতে উঠে আসেন। বাবা সরকারি চিকিৎসক হওয়ার কারণে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জায়গায় পোস্টিং থাকত। তাই মা ছবি বালা দেবী সংসার সামলানোর পাশাপাশি ছেলে-মেয়ের পড়াশোনার দিকটাও দেখতেন। বাবা মায়ের সমস্ত পরিশ্রম আর ত্যাগের শ্রেষ্ঠ উপহার তাঁদের দিয়েছেন ছেলে শুভঙ্কর। জানিয়েছেন , ‘আমার IAS হওয়ার ইচ্ছা রয়েছে, যদি IAS না পাই তাহলে আমি IPS হব পশ্চিমবঙ্গ ক্যাডারে যাওয়ার ইচ্ছে রয়েছে।’

স্কুল টিমের প্যারেড কমান্ডার থাকাকালীন সময় থেকেই IPS হওয়ার স্বপ্ন দেখতেন শুভঙ্কর। সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “যখন স্কুল টিমের প্যারেড কমান্ডার ছিলাম তখন দেখতাম স্কুলের অনুষ্ঠানে SDO, SDPO-রা আসতেন। তখন থেকে একটা ধারণা ছিল এটা খুব সম্মানীয় ও উঁচু জায়গা। এখানে পৌঁছনোর জন্য অনেক পরিশ্রম করতে হয়। এর সঙ্গে অনেক দায়িত্ব রয়েছে এবং প্রচুর ক্ষমতাও রয়েছে । ছোট থেকে সিভিল সার্ভিস সম্পর্কে অতটা ধারণা ছিল না। কলেজ পাশ করার পর আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায় সিভিল সার্ভিস সম্পর্কে। … দিল্লিতে আমি কোনও কোচিং সেন্টারে ভর্তি হইনি। নিজেই পড়াশোনা করেছি । কোচিং সেন্টারে গিয়ে কেবলমাত্র মকটেস্ট দিতাম। এখন অনলাইনে পড়াশোনার সমস্ত কিছু পাওয়া যায় আর দিল্লিতে যেখানে থাকতাম সেখানে সিভিল সার্ভিস পড়াশোনার জন্য সবকিছু সহজে পাওয়া যায় । নোট সহজে পাওয়া যায়। এই দু’বছর আমি আমার ফেসবুক , ইনস্টাগ্রাম , হোয়াটসঅ্যাপ সব বন্ধ রেখে ছিলাম। বন্ধ না রাখলে ওই দিকেই সব সময় লক্ষ্য থাকত”। ‘

ঝাড়গ্রামে ফিরে ছাত্র-ছাত্রীদের পড়াশোনা আর সিভিল সার্ভিস নিয়ে লেকচার অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে চান শুভঙ্কর। বাবা রাজনারায়ণ বালা বলেন, “ছেলেকে কখনও কাজ করতে বা চাকরি করতে বলিনি। তাঁকে তাঁর ইচ্ছামত যাতে যতদূর খুশি পড়াশোনা করতে পারে এটাই বলেছিলাম। তাঁর ইচ্ছে ছিল IAS হওয়ার। আজ পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে।নিজেকে খুব গর্বিত মনে করছি”।
তাই জঙ্গলমহলের লাল মাটির নতুন স্বপ্নের নাম এখন শুভঙ্কর বালা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *