অভিশ্রুতি মজুমদার : কিছুদিন আগেই বিকাশ ভবনের সামনে ৫ শিক্ষিকার বিষ খেয়ে আত্মহত্যার চেষ্টা! প্রতিবাদের এই ঘটনা এখনও তাজা প্রত্যেকের স্মৃতিতে। তারমধ্যেই নতুন চমক। আগামী ২১ শে নভেম্বর ডায়মন্ড হারবারে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে তৃণমূলে যোগ দিতে চলেছে শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ। বিষ খেয়ে সরকারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ কর্মসূচি চালান সেই ৫ শিক্ষকও থাকবেন ওই অনুষ্ঠানে। ঐদিনের যোগদান সভায় উপস্থিত থাকতে পারেন রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসুও।
শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চের অন্যতম প্রধান নেতা মইদুল ইসলাম, aajkhobor.com কে জানিয়েছেন, “আমরা গত সাড়ে তিন বছর ধরে পেশাগত দাবিতে চরম লড়াই করেছি। সে আদি গঙ্গায় নেমে হোক বা বিধানসভার গেটে বা বিকাশ ভবনের সামনে। নবান্ন অভিযান করেছি। সেখানে এই সরকার আমাদের কিছু দাবি মিটিয়েছে, কিছু বাকি আছে। ফলে আমরা মনে করেছি শুধু বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করে বা অন্য রাজনৈতিক দলকে ফায়দা দিয়ে লাভ নেই। মাননীয় সংসদ ( অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়) ও মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন তাঁদের যে জনমুখী প্রকল্প , সেখানে সরকারের সঙ্গে আপনার আলোচনা করুন। আপনাদের দাবি যদি ন্যায্য হয় তবে নিশ্চিতভাবে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী সেই দাবিকে মান্যতা দেবেন।”
মইদুল ইসলাম কে প্রশ্ন করা হয়েছিল, প্রতিবাদ কর্মসূচির শুরুতে সিপিএম সাংসদ তথা আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্যের সাহায্য নিয়ে আন্দোলন শুরু করে, এখন তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন কেন? এই শিক্ষক নেতা aajkhobor.com কে জানান, “বিকাশবাবু যে কোনও শিক্ষকদের স্বার্থে মামলা করে থাকেন। সে বিষয়ে তাঁর কাছে আমরা কৃতজ্ঞ। কিন্তু আমরা যে কারণে তৃণমূলে যাচ্ছি, সেটা হল বৃহত্তর স্বার্থে। জাতীয় শিক্ষানীতি কেন্দ্রীয় সরকার চালু করেছে। তাতে শিক্ষা ও শিক্ষক স্বার্থ বিঘ্নিত হচ্ছে। ফলত সেই জাতীয় শিক্ষানীতি থেকে বাঁচতে হবে। দেশকে বেসরকারীকরণ এর হাত থেকে বাঁচাতে হবে। শিক্ষার প্রভূত উন্নতি করতে হবে।”
সূত্রের খবর, গত ১৪ ই ফেব্রুয়ারি পার্থ চট্টোপাধ্যায় আন্দোলনরত শিক্ষকদের তৃণমূলে যোগদানের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু সেই সময় ওই প্রস্তাব নিয়ে বিবেচনা করা হবে বলে জানান হয়েছিল। শেষমেশ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে দীর্ঘ আলোচনার পর সেই প্রস্তাবে সম্মতি জানাল শিক্ষক ঐক্য মুক্ত মঞ্চ।শিক্ষকদের জন্য প্রতিবাদে সরকারের বিরুদ্ধে জোরালো লড়াই দিতে পারেনি বামফ্রন্ট। সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন মইদুল ইসলাম। জানা গিয়েছে, ঐদিনের সভায় দার্জিলিং থেকে শুরু করে কোচবিহার, কাকদ্বীপ সব মিলিয়ে প্রায় ১ লক্ষ ৩০ হাজার শিক্ষাকর্মী যোগ দেবেন তৃণমূলে।
এ বিষয়ে বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল aajkhobor.com। সিপিএম সাংসদ জানান, “এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। বোঝা যাচ্ছে ওদের চাপের মুখে রেখে, বিভিন্নভাবে এদিক ওদিক বদলি করে দিয়ে , ভয় দেখিয়ে, তৃণমূল বাধ্য করেছে তৃণমূলে যোগ দিতে।”তারা কোন বৃহত্তর আদর্শভিত্তিক আন্দোলন গড়ে তুলতে না পারায়, বৃহত্তর সামাজিক আন্দোলন থেকে নিজেদের সরিয়ে নেওয়ায় বিচ্ছিন্নতাবোধ থেকে শাসকের কাছে আত্মসমর্পণ করাই একমাত্র রাস্তা ছিল তাঁদের বলে মনে করেছেন তিনি।
টালি নালা সাঁতরে মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি পৌঁছে যাওয়া থেকে বিকাশ ভবনের সামনে বিষ খাওয়া। শিক্ষক নেতারা নানাবিধ উপায়ে আন্দোলন চালিয়েছিলেন রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে। শেষে সেই শাসক দলেই যোগদান! অসমর্থিত সূত্রে খবর, শিক্ষক সংগঠনের এই নেতাদের ত্রিপুরায় কাজে লাগাতে চায় তৃণমূল। সম্ভবত, বিজেপি সরকারের বিরুদ্ধে গোটা ত্রিপুরা জুড়ে যেভাবে শিক্ষকদের ওপর দমন-নিপীড়নের অভিযোগ উঠেছে, তাকে বিরোধী হিসেবে ব্যবহার করতে চায় ঘাসফুল শিবির।