আজ খবর ডেস্ক:
বাম ছাত্র-যুবদের আজ স্লোগান ছিল, “কাঁপাতে ১৪ তলা, চলো ধর্মতলা।”
স্লোগান যে হিট, বলাই বাহুল্য! এদিন ধর্মতলায় (SFI-DYFI Rally at Esplanade) বাম ছাত্র যুবদের “ইনসাফ সভা” (Insaf Sabha) কার্যত বিস্মিত করেছে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোকে।
৩টি বড় মিছিল ধর্মতলার “ইনসাফ সভা”য় বেলা একটার মধ্যে পৌঁছয়। একটি মিছিল শিয়ালদহ থেকে আসে, দ্বিতীয়টি হাওড়া স্টেশন থেকে এবং তৃতীয়টি পার্কস্ট্রিট থেকে।


এর মধ্যে শিয়ালদহ স্টেশন ও হাওড়া স্টেশন থেকে রওনা দেয় দুটি বড় মিছিল। পার্কস্ট্রিট থেকে শুরু হওয়া মিছিলটিতে মূলত কলকাতা জেলার বাম ছাত্র-যুব কর্মীরা অংশ নেন। বাকি দুটিতে উত্তরবঙ্গ, জঙ্গলমহল, দুই ২৪ পরগণা, নদিয়া, মুর্শিদাবাদ এবং বর্ধমান জেলার কর্মী সমর্থকরা ছিলেন। এছাড়াও, বেশ কিছু মিছিল কলকাতার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ধর্মতলায় আসে।

প্রত্যাশার থেকেও ভিড় ছিল অনেক বেশি। ভিড়ের চাপে বদলাতে হয় বাম “ইনসাফ সভা”র জায়গা। প্রথম থেকেই পুলিশের অনুমতি মেলেনি। ফলে মঙ্গলবার সকালেও ধর্মতলা ট্রাম ডিপোর পাশে এই সভা হওয়ার কথা ছিল। সেই মত সভার ব্যবস্থাও করা হয়ে গিয়েছিল।
কিন্তু বেলা বাড়তেই ভিড় উপচে পড়ে রাস্তায়। পরে খানিক বাধ্য হয়েই সভার জায়গা পরিবর্তিত হয় ধর্মতলার মোড়ে, ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে।
ভিক্টোরিয়া হাউসের সামনে প্রতিবছর নিয়ম করে তৃণমূল কংগ্রেসের (TMC) “একুশে জুলাই” (Ekushe July) সমাবেশ হয়। মাস কয়েক আগেও সেই সমাবেশ হয়েছে। এদিন সেখানে পুলিশের তরফে অনুমতি পায়নি এসএফআই (SFI) ডিওয়াইএফআই (DYFI)। যদিও কার্যক্ষেত্রে দেখা গেল, সেই ভিক্টোরিয়া হাউসের কাছে ধর্মতলার মোড়েই হল “ইনসাফ সভা”।
ধর্মতলার ট্রাম টার্মিনাসের সভাস্থলে দাঁড়িয়ে ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী (Minakshi Mukherjee) বলেন, ‘‘১২টা বাজতে দিন তার পর দেখবেন।’’

এদিনের সভায় আনিস খান (Anis Khan), মইদুল মিদ্দা, সুদীপ্ত গুপ্ত, স্বপন কোলে ও সাইফুদ্দিনের বিচার চেয়ে পথে নেমেছিল সিপিএম-এর ছাত্র-যুব সংগঠন।
সভায় বক্তৃতা দেন সিপিআইএমের (CPIM) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম (Md Selim), ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি, সিপিআইএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আভাস রায়চৌধুরি, এসএফআইয়ের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্য (Srijan Bhattacharyya), এসএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি প্রতীকুর রহমান, এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ময়ূখ বিশ্বাস, ডিওয়াইএফআইয়ের রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা। এ ছা়ড়াও উপস্থিত ছিলেন নিহত ছাত্র নেতা আনিস খানের বাবা সালেম খান।
ধর্মতলায় মঞ্চে দাঁড়িয়ে ছেলে আনিস খানের জন্য ‘ইনসাফ’ চাইলেন সালেম।

মহম্মদসেলিম একযোগে আক্রমণ করলেন, তৃণমূল ও বিজেপিকে। তাঁর নিশানায় ছিল আরএসএস (RSS) ও। সিপিআইএম রাজ্য সম্পাদক বলেন, “আরএসএসকে নিয়ে আসতে তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি হয়েছে। বাংলায় লুঠেরাদের জায়গা নেই। বাংলার পুলিশকে বলছি রাস্তা বন্ধ করে মিছিল আটকানো যাবে না। জাগ্রত জনতার সামনে পুলিশের ঢাল কাজ করবে না, দেখিয়েছে বর্ধমান। আজ আনিস খানের বাড়ির লোকেদের নামে এফআইআর করছে পুলিশ। তৃণমূল মানে টাকা মারা কোম্পানি”।


আনিস খান হত্যা থেকে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি (SSC Scam), কয়লা ও গরু পাচার থেকে সরকারি অনুষ্ঠানে ভুয়ো নিয়োগপত্র প্রদান; সব সমস্যার বিহিত চেয়ে মঙ্গলবার ধর্মতলায় এই “ইনসাফ সভা”র ডাক দিয়েছিল এসএফআই ও ডিওয়াইএফআই।


রাজনৈতিক মহল বলছে, পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে জোরালো বেগ দিতে তৈরি বামেরা। গত কয়েক দিন ধরে পরপর যে সভা হয়েছে সেখানে ভিড় এ কথাই প্রমাণ করছে। এক্ষেত্রে গেরুয়া শিবিরের থেকেও বাংলার “লাল ফৌজ”কে অনেকটাই এগিয়ে রাখছেন বিশেষজ্ঞরা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *