আজ খবর ডেস্ক : দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা ঠাকুরদাস বাহাদুর ও তাঁর স্ত্রী পারুল বাহাদুর। ঠাকুরদাস ভূমিহীন শ্রমিক ও পারুল বেশ কিছুটা লেখাপড়া জানা সত্ত্বেও পাঁচ-ছয় বাড়ি পরিচারিকার কাজ করেন। ক্লাস সেভেনে পড়া ছোট ছেলেকে ভালভাবে মানুষ করতে দিন রাত উদয়াস্ত পরিশ্রম করেন ওই দম্পতি। দক্ষিণ কলকাতার একটি টিনের চালায় থাকলেও, তাঁদের মূল বাড়ি ক্যানিং স্টেশনের আগে তালদি গ্রামে। স্টেট ব্যাংক অফ ইন্ডিয়ার তালদি শাখায় ওই দম্পতির একটি যৌথ সেভিংস একাউন্ট রয়েছে। ছেলের ভবিষ্যতের কথা ভেবে এস-বি-আই লাইফ প্রকল্পের জন্য এই সেভিংস একাউন্টে অর্থ জমা করেন তাঁরা।

অক্টোবর ২০২১ এর মাঝামাঝি সময় আচমকা পাসবুক আপডেট করার পর তাঁরা জানতে পারেন, ১লা সেপ্টেম্বর এই অ্যাকাউন্ট থেকে সম্ভবত অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ফোন অথবা কোনও অনলাইন পেমেন্ট উইন্ডো ব্যবহার করে ১০০ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। পরে দেখা যায়, গোটা সেপ্টেম্বর জুড়ে ওই অ্যাকাউন্ট থেকে একাধিক লেনদেনের মাধ্যমে মোট ৫০০০০ টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে। অথচ ওই দম্পতি কোনওরকম নেট-ব্যাঙ্কিং বা মোবাইল ব্যাঙ্কিং ব্যবহার করতে জানেন না। এমনকি, ব্যাঙ্ক থেকে দেওয়া এ.টি.এম কার্ড ব্যাবহার করতে না জানায় সেই কার্ডও তাঁরা স্টেট ব্যাঙ্কের ওই শাখায় ফিরিয়ে দেন। তবে কে নিল সেই টাকা ?

ফলত অনুমান করা হয় এটি কোন দুষ্কৃতী বা জালিয়াতি চক্রের কাজ। পারুল দেবী যেই বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেন সেখানে স্বপন কুমার ঘোষাল নামের এক স্বহৃদয় ব্যক্তি ওই দম্পতির হয়ে ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকে অভিযোগ জানিয়ে মেল করেন। এরপর ১৯ তারিখ ক্যানিং থানায় গিয়ে ওই দম্পতি একটি অভিযোগ দায়ের করান। বিনিময়ে থানার পক্ষ থেকে তাঁদের হাতে একটি নাম ও নম্বর লেখা চিরকুট ধরিয়ে দেওয়া হয়। সেই মতই সাইবার ক্রাইম অফিসেও যান তাঁরা। কিন্তু সেখান থেকে কোনও সাহায্য মেলে নি। তাঁরা জানান, স্থানীয় থানা থেকে অভিযোগ আসতে হবে। তারপরই কাজ হবে।এরপর পারুল দেবী যে বাড়িগুলিতে কাজ করেন তারই মধ্যে এক বাড়ির আরেকজন স্বহৃদয় ব্যাক্তি উমাপদ কর ২ নভেম্বর তালদির ব্রাঞ্চ ম্যানেজারকে একটা অভিযোগপত্র লেখেন টাকা উদ্ধারের দাবি জানিয়ে। ওই দম্পতি সেই কপি ব্যাঙ্কে জমা করে আরেকটি ডুপ্লিকেট কপিতে প্রাপ্তির স্বাক্ষর করিয়ে নেয়। চিঠি পেয়ে ব্রাঞ্চ-ম্যানেজার একটু নড়েচড়ে বসেন। চেষ্টা করবেন বলে জানিয়ে সাতদিন পর যেতে বলেন। সাতদিন পর যথারীতি ব্যাংকে গেলে জানান, তারা চেষ্টা করে কিছুই করতে পারেননি। তারপর থানায় খোঁজ-খবরের জন্য যাওয়া হয়, যে আদৌ অভিযোগ সাইবার ক্রাইম দপ্তরে পাঠানো হয়েছে কিনা? কিন্তু থানাও কোনও সহযোগিতা করেনি। স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, তাদের যা করার তা করবে।

ধনী-দরিদ্র প্রত্যেকটি মানুষ নিজেদের পুঁজি সুরক্ষিত থাকবে ভেবেই ব্যাঙ্কে টাকা রাখেন। সে ক্ষেত্রে এই ধরনের উদাসীনতা সত্যিই আশঙ্কার কারণ। তার ওপর প্রশাসনিক উদাসীনতা ! বিগত কিছু বছরে শুধুমাত্র এই রাজ্যেই নয় গোটা ভারতবর্ষে সাইবারক্রাইমের সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে। তার পরেও সেই বিষয়ে মানুষের সাহায্য না করে প্রশাসনের এই ধরনের গাছাড়া আচরণ যথেষ্ট হতাশাজনক। পারুল ও ঠাকুরদাসের মত মানুষেরা নিজেদের জীবনের সমস্ত পুঁজি একত্রিত করে কোন একটি বিশেষ আশায় ব্যাংকে টাকা রাখেন। সেক্ষেত্রে তাদের প্রতি এই ধরনের আচরণ যথেষ্ট দুঃখজনক।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *