আজ খবর ডেস্ক : সম্প্রতি জ্বালানির উপর থেকে শুল্ক কমিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। ফলত পেট্রলের দাম লিটার প্রতি ৫ টাকা কমেছে এবং ডিজেলের দাম কমেছে ১০ টাকা। এরপর সাধারণ মানুষের সুবিধার্থে রাজ্যগুলিকেও জ্বালানির উপর থেকে ভ্যাট কমানোর আর্জি জানায় কেন্দ্র। কেন্দ্রের এই আর্জিতে বেশ কিছু রাজ্য থেকে ইতিবাচক সাড়া মিললেও, পশ্চিমবঙ্গ সহ বেশ কিছু রাজ্যের সরকার তাদের ভ্যাট কমায়নি। সেই প্রতিবাদেই আজ কলকাতার রাজপথে প্রতিবাদ মিছিলের আয়োজন করে রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব। কিন্তু করোনার আবহে সেই মিছিল করার অনুমতি দেয়নি পুলিশ। তবে পুলিশের বারণ তোয়াক্কা না করেই মিছিল করলো বিজেপি। মিছিল শুরু হওয়ার কথা ছিল রাজ্য বিজেপির সদর দপ্তর থেকে। তাই মিছিল আটকাতে বিশাল পুলিস বাহিনী মোতায়েন করা হয়। দলের নেতাদের বক্তব্যের পরই পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙে রাস্তায় ওঠার চেষ্টা করেন বিজেপি সমর্থকরা। মুরলীধর লেন ও সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউয়ের সংযোগস্থলে ব্যারিকেড খাড়া করে রাখে পুলিশ। সেই সব বাঁধা পেরিয়েই বিজেপি সমর্থকরা রাস্তায় ওঠার চেষ্টা করেন। পুলিশের তরফ থেকে বারবার মাইকিং করে সতর্ক করা হয়, যেন তারা আর না এগোয়। তাহলে সেখানেই তাদের গ্রফতার করা হবে। এরপর পুলিশ ও বিজেপি সমর্থকদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। ব্যারিকেড না ভাঙার জন্য বিজেপি নেতৃত্বকে বোঝানোরও চেষ্টা করেন পুলিশ আধিকারিকরা। কিন্তু শেষপর্যন্ত পুলিশের তরফে বিজেপি সমর্থকদের গ্রেপ্তার করা হলেও, পরবর্তী সময় জামিনও দিয়ে দেওয়া হয়।
এরপরই রাজ্য বিজেপির প্রধান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ঘোষণা করেন, আগামী ৭ দিনের মধ্যে রাজ্যে জ্বালানীর দাম না কমলে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে এগোবেন তাঁরা। এমনকি নবান্ন অভিযানও করা হতে পারে।মিছিলে এসে রাজ্য সরকারের তীব্র সামালোচনা করেন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। তিনি বলেন, “একটা ছোট আন্দোলন করতে চেয়েছিলাম। আমাদের কর্মীদের ধরে নিয়ে গিয়ে দূরে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। দিদির কাছে আমাদের বক্তব্য, আপনি তো মুখ্যমন্ত্রী হয়ে প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লিখেছিলেন। এখন প্রধানমন্ত্রী তাঁর কাজ করেছেন। আর এখন আপনি কী করেছেন? বাংলা কি পিছিয়ে থাকবে? যে বাংলা এক সময় এগিয়ে থাকতো সেই বাংলাকে এখন পেছনে তাকিয়ে দেখতে হচ্ছে সামনে কারা রয়েছে! দিদি আপনাকেও শুল্ক কমাতে হবে।”
তেলের দাম কমানোর দাবিতে মিছিলে উপস্থিত ছিলেন দীলিপ ঘোষও। তিনি বলেন, “আপনি (মুখ্যমন্ত্রী) রাজ্যের মানুষকে গরিব করে রেখেছেন। তাই কেন্দ্র রেশন বন্ধ করাতেই পশ্চিমবঙ্গে হাহাকার উঠেছে। অন্য কোনও রাজ্যে এজিনিস হয়নি। বাংলার মানুষ তৃণমূলকে ভোট দিয়েছে। তার জন্য বেশি দামে পেট্রোল ডিজেল কিনতে হবে! এমন তো কথা ছিল না! আমরা চুপ করে বসে থাকব না।” মিছিলে এসে রাজ্য বিজেপির প্রাক্তন সভাপতি দিলীপ ঘোষ আরও বলেন, “দেশের অর্থনীতি চাঙ্গা হয়েছে। তাই দেশের মানুষকে সুবিধে দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তাই তেলের দাম কমেছে। তাই নরেন্দ্র মোদীকে কোটি কোটি ধন্যবাদ। লকডাউনের এত কষ্টের মধ্যেও মোদীর সঙ্গে দেশের মানুষ রয়েছেন। দিদির সঙ্গে কেউ যাননি। রিগিং করে উপনির্বাচন জেতা যায়। মানুষের মন জেতা যায় না। দেশের ৭০ ভাগ মানুষ মোদীর সঙ্গে রয়েছেন। দিদিমনির এক ভাই চিঠি লিখেছেন, দয়াকরে রেশন বন্ধ করবেন না। কেন? দিদিতো বলেছিলেন আজীবন রেশন দেব। এখন মোদীজি বলছেন সংকট কেটে গিয়েছে। মানুষের হাতে পয়সা এসে গিয়েছে তাই ফ্রি রেশন আর দেব না। তাহলে কেন দিদির ভাইরা চিঠি লিখছেন? কারণ মোদীর টাকায় দিদির ফুটানি চলছিল।”
শুভেন্দু অধিকারী এব্যাপারে আরও বলেন, “এখানে আইন ভাঙতে আসিনি। কিন্তু দেখুন এদিকে ঘেরা। ওদিকেও ঘেরা। কলকাতা পুলিশ শুধু নয়, রাজ্য পুলিশও নিয়ে চলে এসেছে। ২০০-৩০০ মিটার এলাকা ঘিরে ফেলা হয়েছে। শুনে রাখুন বিজেপিকে যত মারবেন বিজেপি তত বাড়বে। মাননীয় মুখ্যমন্ত্রী আপনি নিদ্রা ভাঙুন। সাধারণ মানুষকে যে আশ্বাস দিয়েছিলেন তা রাখুন। কেন্দ্রের মতো শুল্ক কমিয়ে রাজ্যের মানুষের সমাস্যার সুরাহা করুন।” তাঁর কথায়, “প্রধানমন্ত্রী এতবড় দেওয়ালীর উপহার দিয়েছেন। এর আগের সরকার হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিয়েছে। সেই টাকা শোধ করতে হবে। প্রধানমন্ত্রী চান আত্মনির্ভর ভারত। আর আমাদের মুখ্যমন্ত্রী চান নির্ভরশীল বাংলা। তাঁর কাজই হল ভাতা, ভিক্ষা, ভর্তুকি। এই মুখ্যমন্ত্রী সিলিন্ডার নিয়ে মিছিল করেছেন। কেন্দ্র শুল্ক কমিয়েছে। দেশের ২২ রাজ্য শুল্ক কমিয়েছে। আর বাংলার মেয়ে এখনও ঘুমাচ্ছেন। তার ঘুম এখনও কাটেনি। “পূর্ব ইতিহাস টেনে এনে মুখ্যমন্ত্রীকে কটাক্ষ করে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “সরকার নন্দীগ্রামের ফলটা ভুলে গিয়েছে। দীপাবলির আগের নরেন্দ্র মোদী পেট্রোল ও ডিজেলের উপর থেকে শুল্ক কমিয়েছেন। আন্তর্জাতিক বাজারে পেট্রোপণ্যের দাম কমা বাড়ার উপরে জ্বালানীর দাম নির্ভর করে। এক্ষেত্রে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার তাদের শুল্ক কমাতে পারে। রাজ্য সরকার যে শুল্ক পায় তার পুরোটাই সে নেয়। আর কেন্দ্র যে শুল্ক পায় তার ৬০ শতাংশ রাজ্যকে ফিরিয়ে দেয়। ফলে ৪০ টাকারও বেশি রাজ্য সরকার পায়।”
মিছিলে উপস্থিত বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “রাজনৈতিক দলকে পুলিশ আটকালে তারা যেভাবে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে আমরা সেভাবেই করব। বিজেপি কোনও হরিনাম সংকীর্তনের দল নয়। “
রাহুল সিনহার মন্তব্য, “পুজো হচ্ছে, উৎসব হচ্ছে। মানুষের জমায়েত হচ্ছে সেখানে কিছু নেই। আর এখানে আটকানো হচ্ছে কেন?” মিছিলে হাজির হলেন দীনেশ ত্রিবেদী ও প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী দেবশ্রী চৌধুরী। সেখান থেকে ত্রিবেদী রাজ্য সরকারের দিকে প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, এভাবে আমাদের আটকে দেওয়া হচ্ছে, এটা গণতন্ত্র?
বিজেপি সদর দপ্তরের সামনে এসে দলের নেতা জয়প্রকাশ মজুমদার বলেন, “বুর্জ খলিফায় যখন মানুষের জমায়েত হচ্ছিল তখন অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে ছিল পুলিশ। এখন মানুষের প্রয়োজনে যখন আমরা রাস্তায় নেমেছি তখন আমাদের বাধা দেওয়া হচ্ছে। এই এলাকাকতে দুর্গ বানিয়ে ফেলেছে।”
বিজেপি সমর্থকদের আটকাতে মুরলীধর স্ট্রিটে বিজেপি সদর দপ্তরের সামনেও ব্যারিকেড খাড়া করে দেয় পুলিশ। কলুটোলার দিকের রাস্তাতেও মিছিলকারীদের আটকানের ব্যবস্থা করা হয়েছিল।