আজ খবর ডেস্ক- অবশেষে ৩ কৃষি আইন ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা করলো কেন্দ্রীয় সরকার। গুরুনানক জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে এদিন জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেওয়ার সময় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তিন কৃষি আইন ফিরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা করেন। চলতি মাসের মধ্যেই পুরো প্রক্রিয়া শেষ করা হবে বলে জানান হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী মোদী জানান, ‘গুরুনানকের প্রকাশ পর্বে সকল দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছি। এই উপলক্ষে খুলেছে কর্তারপুর করিডোর। গুরু নানকের দেখান সেবার পথে হেঁটেই দেশবাসীর জন্য কাজ করছে সরকার। আমি গত পাঁচ দশকে কৃষকদের দুর্গতি দেখেছি। তাই ২০১৪ সালে যখন দেশ আমাকে নির্বাচিত করে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে কাজ করার সুযোগ দেয়, তখন থেকে ছোট কৃষকদের জন্যে কাজ করতে চেয়েছি। আজকে গুরু পর্বে কারোর উপর দোষারোপ করার সময় নয়।’

কৃষকদের প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দেশের ১০০ জনের মধ্যে ৮০ জন ছোট কৃষক। তাদের জমির পরিমাণ ২ হেক্টরের কম। তাদের জীবনের আধার এই ছোট জমি। প্রায় ১০ কোটি এমন ছোট কৃষক আছে। এই ছোট জমিতেই তারা নিজেদের পরিবারের মুখে খাবার তুলে দেওয়ার জন্য কাজ করছে। তাই বীজ, বীমা, বাজার আর সেভিংসের ক্ষেত্রে কাজ করেছি। আমরা ফসল বীমা যোজনাকে আরও কার্যকরী করেছি। আরও বেশি সংখ্যক কৃষককে এর অধীনে নিয়ে এসেছি। বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কিষাণ সয়েল হেলথ কার্ড দিয়েছি। এতে ফলন বেড়েছে। ছোট কৃষকদের ১ লক্ষ ৬২ হাজার কোটি টাকা দিয়েছি। কৃষকদের কষ্ট যাতে সঠিক দাম পায়, সেই কাজ করেছে সরকার। গ্রামীণ বাজারকে শক্তিশালী করেছি। আমরা এমএসপি বাড়িয়েছি। পাশাপাশি সরকার রেকর্ড পরিবার ফসল কিনেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘১০০০-এর বেশি মণ্ডি করেছি, দেশের মণ্ডিগুলিকে আধুনিক করতে কয়েক কোটি টাকা খরচ করেছি। আমাদের সরকারের কৃষি বাজেট বিগত কয়েক দশকে সবথেকে বেশি। কৃষকদের বিস্তারের জন্য আমরা এই কাজ করছি। ছোট কৃষকদের শক্তি বাড়াতে তাদের সংগঠন তৈরির কাজ চলছে। মাইক্রো ইরিগেশন ফান্ড দুই গুণ করে ১০ হাজার কোটি টাকা করা হয়েছে। পশু পালন ও মৎস পালনের সঙ্গে যুক্ত কৃষকরাও কিষাণ ক্রেডিট কার্ডের সুবিধা পেতে শুরু করে দিয়েছে। কৃষককদের সামাজিক পরিস্থিতি ভালো করতে আমাদের সরকার কাজ করছে।’

কৃষক-কেন্দ্র বিরোধ :

কেন্দ্রের ৩ টি কৃষি বিল নিয়ে বিগত এক বছরের বেশি সময় ধরে লাগাতার প্রতিবাদ করে চলেছে কৃষকেরা। ফলত তাদের দীর্ঘদিনের দাবি না মানায় কেন্দ্রের উপর ক্ষোভ তৈরি হতে থাকে কৃষকদের। এই প্রসঙ্গে মোদী বলেন, ‘দেশের ছোট কৃষকদের কথা ভেবেই তিনটি কৃষি বিল আনা হয়েছিল। দেশের কৃষক সংগঠন, কৃষি অর্থনীতিবিদদের এই দাবি বহুদিনের। এর আগের সরকারও এই নিয়ে ভেবেছে। এরপরই সংসদে কৃষি বিল নিয়ে আলোচা করে বিল পাশ করানো হয়। কয়েক কোটি কৃষক এই বিলকে সমর্থন জানিয়েছে। ভালো মনে এই আইন আনা হয়েছিল। কৃষকদে স্বার্থে আনা এই বিল আমরা কয়েকজনকে বোঝাতে পারিনি। কয়েকজন কৃষকই এর বিরোধিতা করছেন। তাও এটা আমাদের জন্য বড় বিষয়। তাদেরকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি আমরা। আমরা তাদের কথাও বোঝার চেষ্টা করেছি। সরকার আইন বদলাতেও রাজি ছিল। এরই মাঝে মামলাটি সুপ্রিম কোর্টে চলে গিয়েছে।’

বিল প্রত্যাহার :

এরপর প্রধানমন্ত্রী কৃষিবিল প্রত্যাহার প্রসঙ্গে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে বলেন, ‘আমি দেশবাসীর কাছে ক্ষমা চাইছি। আমি বলতে চাই যে হয়ত আমাদের তপস্যাতেই খামতি ছিল। তাই কৃষি আইন প্রত্যাহার করা হচ্ছে। এই মাসের সংসদের শীতকালীন অধিবেশনে এই কৃষি বিল প্রত্যাহার করব। আমি সবাইকে অনুরোধ করব, আন্দোলন ছেড়ে একটি নয়া সূচনা করি।’ তিনি জানিয়েছেন এই মাসের মধ্যেই ৩ কৃষি বিল বাতিলের প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। তার জন্য একটি বিশেষ কমিটি তৈরি করা হবে। সেই কমিটিতে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের প্রতিনিধি ও কৃষি বিশেষজ্ঞ থাকবে।

প্রধানমন্ত্রীর এই ঘোষণায় শেষ পর্যন্ত সফল হল কৃষকদের দীর্ঘদিনের প্রতিবাদ কর্মসূচি। তবে জানিয়ে রাখি, কিছুদিন পরই পাঞ্জাবে বিধানসভা নির্বাচন। বিগত কিছু সময় সেই রাজ্যে কংগ্রেসের প্রভাব এতটাই বেড়েছে, যে সেখানে খাতা খুলতে পারেনি বিজেপি। তার মধ্যে কৃষি বিল সংক্রান্ত বিষয়টি নিয়ে কৃষকদের মধ্যে জমা ক্ষোভ, কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের সঙ্গে তাদের দূরত্ব তৈরি করেছিল । আসন্ন নির্বাচনে তাই এবারও বিজেপি সেখানে খাতা খুলতে পারবেনা বলেই মনে করছিল একাংশ। শুধু রাজ্যই নয়, বিজেপি বিরোধী জোটে বিরোধীদের অন্যতম আক্রমণের হাতিয়ার ছিল এই কৃষিবিল।

মোদীর আজকের ঘোষণা কোথাও গিয়ে সেই মূল অস্ত্রকে ভেঙে দিল। পাশাপাশি এই ঘোষণার পিছনে পাঞ্জাব দখলের যে কোনো রাজনৈতিক অভিপ্রায়ও থাকতে পারে মোদী সরকারের, সেই বিষয়টিকেও এড়িয়ে যাওয়া যাচ্ছে না ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *