আজ খবর ডেস্ক : ইট পাথরের জঙ্গলে, প্রকৃতির দেখা মেলা ভার শহরবাসীদের। আচ্ছা যদি ঘরের ভিতরেই হয় প্রকৃতির আনাগোনা ! কেমন হত তবে? ঘরের মধ্যে প্রকৃতিকে টেনে আনতে এমনই অসাধ্য সাধন করলেন সবুজ সিদ্দিকী। বাড়িটি বাংলাদেশের সাভার উপজেলায় অবস্থিত। তিনি ফ্যাশন হাউস দেশালের ব্যবস্থাপনা অংশীদার এবং চিত্রশিল্পী। বাড়িতে সবুজ সিদ্দিকী, তাঁর স্ত্রী কাজী তানিয়া ফারজানা এবং তাঁদের মেয়ে পাতা অংরূপিণী ও ছেলে মাহাদী মোস্তফা মিলিয়ে মোট সদস্য সংখ্যা চার জন। বাবা আর মেয়ের নাম মিলিয়েই বাড়িটির নাম রাখা হয় সবুজ পাতা।

বাড়িটিকে দূর থেকে দেখলে মনে হবে যেন সবুজের টিলা। এমনকি ঘরের ভেতর প্রবেশ করলেও বোঝার উপায় নেই যে, ঘরের ভিতরে রয়েছি না প্রকৃতির মাঝে। ঘরের খোলামেলা পরিবেশে মুক্ত চিত্তে খেলে বেড়ায় আলো বাতাস। জানা গিয়েছে ঘরের একটি বিশেষ মুক্ত অংশ দিয়ে, পূর্ণিমা রাতে চাঁদের রুপালি আলো নাকি এক অপূর্ব দৃশ্য তৈরি করে ঘর জুড়ে। বাড়িটির নির্মাণে এতই অভিনবত্ব রয়েছে যে, ঘর আর উঠোনের কোন পার্থক্য নেই।সবুজ বললেন, “২০১০ সালে জমিটা কিনি। সাড়ে একুশ শতাংশ। এরপর গাছ লাগিয়ে দেই। আমি যখন চারুকলার (ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদ) ছাত্র, তখন পরিচয় হয় বুয়েটের স্থাপত্য বিভাগের ছাত্রী দীপা আপার (আছিয়া করিম) সঙ্গে। সে সময় আমি বলি, ‘আমার বাড়ি কিন্তু আপনি ডিজাইন করে দেবেন।”

স্ত্রী কাজী তানিয়ার কথায়, “বাসা বা ঘর ব্যক্তিগত। সেটা কত ভালো করা যায়, কত ভালোভাবে থাকা যায়, সেই চেষ্টা আমাদের ছিল। আমাদের মেয়ের বয়স নয় আর ছেলের বয়স তিন বছর। এরা প্রকৃতির সঙ্গে বেড়ে উঠছে, এটাই বড় পাওয়া।” তিনি আরও বলেন, “বাড়ির যেখানেই বসবেন, সেখান থেকেই শুধু মাথা ঘুরিয়ে আকাশ আর সবুজ দেখতে পাবেন। বাস্তুশাস্ত্রের নিয়ম মেনে বাড়ির গাছপালা লাগানো হয়েছে। এ বাড়িতে কোনো ক্যাকটাস, বনসাই নেই। দেয়ালে শিকড় বসে যায়, এমন কোনো গাছও নেই। তাই তো মাধবীলতা, মধুমঞ্জুরির মতো লতা ছেয়ে আছে বাড়িজুড়ে।”বাড়িটি তিনতলা বরাবর একটি অংশ পুরোটাই খোলা। দোতলার ঘরগুলোও বেশ খোলামেলা। প্রাকৃতিক ছোঁয়াতেই তৈরি হয়েছে ঘরেরে অন্যান্য জায়গা গুলিও। দোতলায় উঠেই রয়েছে একটি দক্ষিণমুখী বাড়ির বারান্দাও।

সবুজ বললেন, “দোতলা ২২০০ বর্গফুটের। এখানে আমাদের সবার থাকার ঘর। প্রতিটি ঘরের সঙ্গেই বারান্দা আছে, এক বারান্দা থেকে আরেক বারান্দা দেখা যায় না। তিনতলার কিছু অংশে আমার স্টুডিও।”বাড়িটির চারপাশে আম, জাম, কাঁঠাল, পেয়ারা, সফেদা, লোনা, বেল, পেঁপে, নারকেল, ডালিম, বড়ই, জামরুল, আঙুর ফলের নানান ধরনের গাছ থাকায় সারাবছর ধরেই পাখিদের আগমন লেগে থাকে। নানান মৌসুমে গন্ধ ছড়ায় বেলি, জবা, গন্ধরাজ, শিউলি, বকুল, কাঠগোলাপ, কনকচাঁপা, জারুল, কামিনী, কদম ইত্যাদি। ১২ মাস ধরে ফুলফলে ভরা বাড়িটিতে, ঘরে বসেই দেখা যায় দোয়েল, শালিক, চড়ুই, ঘুঘু, কাঠঠোকরা, ফিঙে, মৌটুসি, কোকিল, বুলবুলি, কানাকুয়া, হরিয়াল, বক, পানকৌড়ি, ডাহুক, পেঁচা, সরালি ইত্যাদি পাখি। এমনকি লতানো গাছের ঝোপে অনেক সময় বাসা বাঁধতেও দেখা যায় ঘুঘু, টুনটুনিদের।

বাড়িটি সম্প্রতি এশিয়ার স্থপতিদের সংস্থা আর্কিটেক্টস রিজিওনাল কাউন্সিল এশিয়ার (আর্কেশিয়া) পুরস্কার ‘আর্কেশিয়া অ্যাওয়ার্ডস ফর আর্কিটেকচার ২০২১’ পেয়েছে। স্থপতি আছিয়া করিম ও স্থপতি নাঈম আহমেদ কিবরিয়া এবং তাঁদের প্রতিষ্ঠান ইনডিজেনাস সিঙ্গেল ফ্যামিলি রেসিডেন্সিয়াল প্রজেক্ট বিভাগে বিশেষ সম্মাননা পুরস্কার পেয়েছে। এবার ‘দ্য স্টেটসম্যান’ নামে, ঢাকার একটি আবাসন প্রকল্প মাল্টি ফ্যামিলি রেসিডেন্সিয়াল কমপ্লেক্স বিভাগে আর্কেশিয়া পুরস্কার পেয়েছে। এর নকশা করেছেন স্টুডিও মরফোজেনেসিস লিমিটেডের দুই স্থপতি শাহ্‌লা কে কবির ও শুভ্র শোভন চৌধুরী।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *