আজ খবর ডেস্ক- রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই জাতীয় রাজনীতিতে পদার্পণ করতে সক্রিয় ভূমিকা নিতে দেখা গিয়েছে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে।

সেই লক্ষ্যেই গোয়া, দিল্লির পর এবার তিনি যাচ্ছেন মুম্বই সফরে। আজ অর্থাৎ মঙ্গলবার বিকেলেই দু’দিনের সফরে বাণিজ্যনগরীতে পৌঁছবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী। এদিন রাতেই মুম্বই পৌঁছনোর কথা রয়েছে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। মূলত শিল্প সম্মেলনে উপস্থিত থাকতেই তিনি এই সফরে যাচ্ছেন বলে জানান হলেও, মমতার মুম্বই সফরের নেপথ্যে কোন গভীর রাজনৈতিক অভিপ্রায় রয়েছে বলেই মত রাজনৈতিক মহলের।

সম্প্রতি দিল্লি সফরের শেষ দিনে সোনিয়া গান্ধীর সঙ্গে দেখা করা নিয়ে তৃণমূল নেত্রীকে প্রশ্ন করায় কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করেছিলেন তিনি। সাংবাদিকদের রুক্ষ সুরে জবাব দেন, “দিল্লি এলে কি সোনিয়ার সঙ্গে দেখা করাটা বাধ্যতামূলক?”, সেই সঙ্গে তখনই তিনি নভেম্বরের গোড়ার দিকে নিজের মুম্বই সফরের কথা ঘোষণা করেছিলেন। জানিয়েছিলেন, সেখানকার একটি শিল্প সম্মেলনে তাঁকে আমন্ত্রণ জানান হয়েছে। মুম্বাইয়ে পৌঁছে মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরে ও এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ারের সঙ্গে দেখা করতে পারেন বলেও তখন জানিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। তবে পরে উদ্ধবের শারীরিক অসুস্থতার কারণে সেই সাক্ষাৎ সম্ভব নাও হতে পারে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী। তবে উদ্ধবের সঙ্গে দেখা না হলেও, ছেলে আদিত্য ঠাকরে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর হোটেলে এসে দেখা করবেন বলে জানান তৃণমূল নেত্রী। এরপরই তৃণমূল নেত্রীকে কটাক্ষ করে অমিত মালব্য বলেন, ” ত্রিপুরার ভরাডুবির পর, এটাই আকাঙ্ক্ষিত।”

আজ দুপুর ৩ টে নাগাদ মুম্বইয়ের উদ্দেশ্যে উড়ে যান তৃণমূলনেত্রী। তবে যাওয়ার আগে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে নিজের মুম্বাই কর্মসূচির কথা খোলসা করেন মমতা। জানান – বিমানবন্দর থেকে প্রথমেই যাবেন সিদ্ধিভিনায়ক মন্দিরে। সেখান থেকে যাবেন সেখানকার পুলিশ মেমোরিয়াল পরিদর্শন করতে। তারপর আগামীকাল অর্থাৎ বুধবার সিভিক সোসাইটির সঙ্গে বৈঠক সেরে মুখ্যমন্ত্রী দেখা করবেন এনসিপি নেতা শরদ পাওয়ারের সঙ্গে। বৈঠকে আসন্ন লোকসভা কেন্দ্রকে লক্ষ্য রেখে অবিজেপি দলগুলিকে সমবেত করে, আরও শক্তিশালী করার প্রসঙ্গে কথা হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে। তারপর তিনি যোগ দেবেন বাণিজ্য সন্মেলনে। সন্মেলন শেষেই রওনা দেবেন কলকাতার উদ্দেশ্যে।

ইতিমধ্যেই মমতাকে স্বাগত জানাতে সাজ সাজ রব মুম্বইয়ে। শহরের বিভিন্ন স্থানে লাগানো হয়েছে তৃণমূল নেত্রীর ছবি সম্বলিত ‘ওয়েলকাম হোর্ডিং’। বিমানবন্দরে মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে উপস্থিত থাকতে পারে শিবসেনা-এনসিপি নেতৃত্ব।
শোনা যাচ্ছে, বিমানবন্দর থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে হাজির থাকতে পারেন মহারাষ্ট্রের উপ মুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ারও।

প্রসঙ্গত, বুধবারের মূল কর্মসূচি অর্থাৎ ওয়াইপিও সামিটে বক্তৃতা রাখতে দেখা যাবে মুখ্যমন্ত্রীকে। সেখানে দেশের অধিকাংশ প্রথম সারির শিল্পপতিরা উপস্থিত থাকবেন। তারমধ্যে আগামী বছর এপ্রিল মাসে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন (বিজিবিএস) – এর কথা মাথায় রেখে তাঁদেরও রাজ্যের বাণিজ্য সম্মেলনে আহ্বান জানতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন মমতা । তাই আশা করা যায়, মুম্বইয়ের মঞ্চ থেকে বাংলার শিল্পায়নের সম্ভাবনার কথাও তুলে ধরতে দেখা যেতে পারে তাঁকে।

সব মিলিয়ে বাংলার মুখ্যমন্ত্রীর মুম্বই সফর যে বর্তমান জাতীয় ও রাজ্য রাজনীতির প্রেক্ষাপটে বেশ গুরুত্বপূর্ণ, সে বিষয় কোন সন্দেহ নেই। এই নিয়ে ইতিমধ্যেই জল্পনার পারদ চড়তে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলের অন্দরে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *