আজ খবর ডেস্ক : যেন একটা যুগের অবসান হল ! প্রয়াত হলেন বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ সুব্রত মুখোপাধ্যায়। পঞ্চায়েত মন্ত্রীর প্রয়াণে রাজ্য রাজনীতিতে এই মুহূর্তে শোকের ছায়া।বৃহস্পতিবার রাত ৯টা বেজে ২২ মিনিটে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। দীর্ঘ দিনের রাজনৈতিক সঙ্গীর প্রয়াণের খবর পেয়েই হাসপাতালে ছুটে যান স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। যান মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, অরূপ বিশ্বাস-সহ প্রায় সকল তৃণমূল শীর্ষ নেতৃত্ব। এসএসকেএম হাসপাতালের বাইরে ভিড় করতে থাকেন তাঁর অনুগামীরাও।

এরপর ওইদিন রাতেই সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতা পুরসভার পিস ওয়ার্ল্ডে। সারা রাত সেখানেই রাখা হয় মরদেহ। জানা গিয়েছে, শুক্রবার সকালে প্রথমে রবীন্দ্রসদনে নিয়ে যাওয়া হবে পঞ্চায়েতমন্ত্রীর মরদেহ। দুপুর পর্যন্ত সেখানেই থাকবে দেহ। চলবে শ্রদ্ধাজ্ঞপন। এরপর সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের দেহ নিয়ে যাওয়া হবে তাঁর নিজের বিধানসভা কেন্দ্র বালিগঞ্জে। সেখান থেকে মরদেহ নেওয়া হবে মোহনবাগান ক্লাব এবং একডালিয়া এভারগ্রিন ক্লাবে। এই দুটি জায়গার সাথেই খুব ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল সুব্রত বাবুর। শেষে নিজে যাওয়া হবে তাঁর বাসভবনে। সেখান থেকেই শেষকৃত্যের জন্য কেওড়াতলা মহাশ্মশানে নিয়ে যাওয়া হবে।

মে মাসে নারদাকাণ্ডে গ্রেপ্তারির পর পর হৃদযন্ত্রের সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ২৪ শে অক্টোরর রুটিন চেকআপের জন্য SSKM- এ ভর্তি হন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পরই দ্রুত শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থাকে তাঁর। একসময় এতটাই অবনতি হয় যে, আর ঝুঁকি নিতে চাননা চিকিৎসকরা। প্রথমে উডবার্নের আইসিসিউ-তে, পরে কার্ডিওলজি বিভাগের আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে । তারপর ‘নন ইনভেসিভ ভেন্টিলেশন’ বা বাইপ্যাপ সাপোর্টে রাখা হয়েছিল রাজ্যের মন্ত্রীকে। দেওয়া হয় অক্সিজেনও। তারপরই আবারও বুকে সংক্রমণ ধরা পড়ে।মাঝে কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠার পরও হৃদযন্ত্রের দুটি আর্টারিতে ব্লকেজ পাওয়া যায়। সেই মতো সোমবার অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি করে হৃদযন্ত্রে স্টেন্ট বসান হয় তাঁর। অস্ত্রোপচারের পর টানা ২ দিন আইসিইউতেই ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এরপর শুক্রবার সকালেই উডবার্ন ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। হাসপাতাল সূত্রে খবর, দুপুরের পর থেকে ফের শারীরিক অবস্থার অবনতি ঘটতে থেকে সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের। পর পর দু’বার হৃদরোগে আক্রান্ত হন। তড়িঘড়ি কার্ডিওলজি বিভাগের আইসিইউতে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা শুরু হয়েছিল, তবে শেষরক্ষা হল না। ঘড়ির কাটায় তখন রাত ৯টা বেজে ২২ মিনিট। প্রয়াত হন মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়।

রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের খুব কাছের মানুষ ছিলেন সুব্রত মুখোপাধ্যায়। তাই হাসপাতালে গিয়েও প্রিয় ‘সুব্রত দা’র মরদেহ দেখলেন না মুখ্যমন্ত্রী। হাসপাতালের ভিতরে মানুষদের কাছে তিনি বলেন, “সুব্রতদার মরদেহ আমি দেখতে পারব না।” বাইরে বের হতে তাঁর চোখে মুখে ফুটে ওঠে প্রিয়জন হারানোর শোক। এরপর শোকবার্তায় মুখ্যমন্ত্রী লেখেন, “রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন এবং রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ ও শিল্প পুনর্গঠন মন্ত্রী সুব্রত মুখার্জীর প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৭৫ বছর। পাশাপাশি সুব্রতদা ক্রেতা সুরক্ষা, স্বনির্ভর গোষ্ঠী ও স্বনিযুক্তি দপ্তরের মন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেছেন। হাসিমুখে তিনি জেলায় জেলায় ঘুরে আমাদের সরকারের কাজে অতুলনীয় অবদান রেখেছেন। এছাড়া কলকাতার মেয়র হিসাবে কলকাতার সামগ্রিক উন্নয়নে তাঁর বিশেষ ভূমিকা স্মরণীয়।”

প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরীসুব্রত মুখার্জি বলেন, ‘আমাদের প্রিয় সুব্রত দা যার সাথে গত ১ লা নভেম্বরেও আমি কলকাতার পিজি হাসপাতালে দেখা করে এলাম, গল্প করলাম, সে আর নেই ভাবতে পারছি না। বাংলার কংগ্রেস রাজনীতির ত্রিমূর্তি ― প্রিয়, সুব্রত, সোমেন এক এক করে চলে গেল। একজন outstanding legislator, একজন দক্ষ প্রশাসক, একজন হাসি খুশি, খোলামেলা অথচ বিজ্ঞ রাজনীতিবিদের নাম সুব্রত মুখার্জি। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি। তাঁর শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি আমার সমিবেদনা রইলো।’

বিজেপির সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের শোক প্রকাশ করে লেখেন, ‘প্রবীণ জননেতা, সফল রাজনীতিবিদ, প্রাক্তন মেয়র বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের মাননীয় পঞ্চায়েত মন্ত্রী শ্রী সুব্রত মুখার্জির আকস্মিক প্রয়াণে আমরা গভীরভাবে শোকাহত। আমি তাঁর বিদেহী আত্মার সদগতি কামনা করি।’

পাশাপাশি কিছুদিন আগেই তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়া রাজ্যের প্রধান বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী টুইট করে বার্তা দেন , ‘প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং পশ্চিমবঙ্গের বর্ষীয়ান ক্যাবিনেট মন্ত্রী শ্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত ও মর্মাহত।ওনার পরিবারের সদস্য, ভক্ত ও সমর্থকদের জন্য আমার সমবেদনা রইলো। ওনার আত্মা চির শান্তি লাভ করুক। ওম শান্তি। ‘

হয়তো এটাই একজন যথার্থ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সাফল্য, যে তার মৃত্যুর পর শুধুমাত্র নিজের দল নয়, বিরোধী দলগুলির তরফ থেকেও একইভাবে শোক বার্তা প্রেরণ করা হচ্ছে। সুব্রত মুখোপাধ্যায়ের মৃত্যু নিঃসন্দেহে রাজ্য রাজনীতির কাছে এক অপূরণীয় ক্ষতি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *