আজ খবর ডেস্ক- দুপুরে খাওয়ার পর অধিকাংশ মানুষেরই কিছুটা ঘুমিয়ে নেওয়ার অভ্যাস থাকে। বিশেষ করে বাঙালিদের মধ্যে এই ভাত-ঘুম বহুল প্রচলিত। অনেকেই দুপুরে খাওয়ার পর ঘুমোনোকে আলসেমি বা অস্বাস্থ্যকর বলে মনে করেন। কিন্তু খাওয়ার পর দশ থেকে কুড়ি মিনিটের ভাত-ঘুমের অনেক উপকারিতা রয়েছে। আর বিষয়টি বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত।

সব বয়সের জন্যই এই ভাত ঘুম উপকারী। এমনকি নতুন এক গবেষণায় দাবি করা হয়েছে, এটি হয়ত আপনাকে আরও বেশি দিন বাঁচতেও সাহায্য করবে।

ভাত-ঘুমের অভ্যেস :

ভাত-ঘুমকে অনেকেই বাঙালির বদভ্যাস বলে মনে করেন। কিন্তু শুধু বাঙালিই নয়, এই সংস্কৃতি রয়েছে বিশ্বের আরও অনেক দেশে। ইউরোপের খানিকটা গরম আবহাওয়াসম্পন্ন দেশ যেমন গ্রীস ও স্পেনেও সিয়েস্তা নামে পরিচিত এই ভাত-ঘুম । সেখানকার মানুষের জীবনে এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। বলা হয়, দুপুর ২ টোর পর ওই দেশগুলো আরও ঝিমিয়ে পড়ে। জানা গিয়েছে, ইউরোপের কিছু শহরে মানুষের সিয়েস্তার আইনি অধিকার রয়েছে।

সতেজতার চাবিকাঠি

দিনভর নানা কাজের চাপের ভাত-ঘুম ‘পাওয়ার ন্যাপের ‘ কাজ করে। যা শরীরকে সতেজ রাখতে পারে। দুপুরের পর দিনের বাকি সময়টুকু সতেজ বোধ করা এবং মন মেজাজ ভালো রাখতে ভাত-ঘুম বেশ কার্যকরী।

যে ধরনের কর্মশক্তি নিয়ে আমরা দিনের শুরু করি, দিন গড়ানোর সাথে সাথে সেই কর্মশক্তি কমে আসতে থাকে। ন্যাপ বা ভাত-ঘুম শরীরের কর্মশক্তি বাড়াতে সহায়তা করে, বলে মনে করেন লন্ডনের ঘুম বিষয়ক একটি প্রতিষ্ঠান, দ্যা স্লিপ স্কুলের একজন প্রতিষ্ঠাতা ও ঘুম বিশেষজ্ঞ, গাই মেডোজ।

তিনি বলেন , “আমরা যখন ঘুম থেকে উঠি, আমাদের মস্তিষ্কে এডেনোসিন নামে একটি রাসায়নিকের ক্ষরণ বাড়তে থাকে। আমরা যত বেশি সময় ধরে জেগে থাকি, আমাদের মস্তিষ্কে এর উপস্থিতি ধীরে ধীরে কমতে থাকে এবং শরীরে ঘুম-ভাব তৈরি হতে থাকে।”

সেই সঙ্গে গাই মেডোজ আরও বলেন , “যখন আমরা ন্যাপ নেই তখন এডেনোসিনের ব্যাবহার কমে আসে, এটি সংরক্ষিত হয়। যার ফলে কর্মশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং আমরা সতেজ অনুভব করি, মেজাজ ভালো বোধ করি।”

দুপুরের খাওয়ার পর একটু ঘুম, বিকেলের কাজে মনোযোগী হতে সাহায্য করে। তাতে কাজে ভুল হওয়ার সম্ভাবনাও কমে যায়। তবে, ভাত-ঘুমের সময় হওয়া উচিৎ ১০ থেকে ২০ মিনিট। ভাত-ঘুম উচ্চ রক্তচাপ কমাতে, হৃদপিণ্ড ও কিডনির স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

আর শরীরের এই যন্ত্রগুলি ভাল থাকলে আরও অনেক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গও সুস্থ থাকে। ঘুম বিষয়ক গবেষক এবং “টেক এ ন্যাপ, চেঞ্জ ইওর লাইফ” বইয়ের লেখক সারা মেডনিক বলেন, ন্যাপ সবচেয়ে বেশি কাজ করে যদি এর সময়কাল ৬০ থেকে ৯০ মিনিট এর মধ্যে হয়। তার কথায়, “যদি আমরা মস্তিষ্কের স্মরণশক্তি, সৃজনশীলতা, কোন কিছু বোঝার ক্ষমতা বাড়াতে চাই তাহলে ৯০ মিনিট পর্যন্ত ন্যাপ দরকার হয়।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *