আজ খবর ডেস্ক- বিধানসভা ভোটের পর থেকে ক্ষয় অব্যাহত বঙ্গ বিজেপিতে। বিধায়ক সংখ্যা কমছে। বাড়ছে দলীয় হোয়াটস অ্যাপ গ্রুপ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সংখ্যা।
এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে
সম্প্রতি হয়ে যাওয়া কলকাতা পুরসভার ভোট। যেখানে কার্যত ভরাডুবির পর প্রকাশ্যে দলীয় অন্তর্ঘাতের অভিযোগ তুলেছিলেন একাধিক দলীয় প্রার্থী। এবার তাই নড়েচড়ে বসেছে গেরুয়া শিবির।
কলকাতায় এসে সেই সব ঘটনাকে একত্রিত করে সতর্কবার্তা দিয়ে গেলেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতা বিএল সন্তোষ। রাজ্য ও জেলা নেতাদের তিনি বলে দিয়েছেন, আলোচনায় অংশ নেওয়া যাবে। কিন্তু কথায় কথায় সমালোচনা করা যাবে না। একই সঙ্গে সতর্কতার সুরেই চুপ থাকার পরামর্শ শিখিয়ে দিয়ে গিয়েছেন।
নতুন ঘোষিত রাজ্য কমিটিতে মতুয়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব নেই অভিযোগ তুলে সম্প্রতি পাঁচ বিজেপি বিধায়ক বিদ্রোহ করেছেন। তারই মধ্যে জেলা সভাপতি পছন্দ না হওয়ায় একই পদ্ধতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাঁকুড়ার বিধায়করা। তারও আগে সদ্যসমাপ্ত কলকাতা পুরসভা নির্বাচনের সময়ে বারংবার দলবিরোধী বক্তব্য পেশ করে গেরুয়া শিবিরের অস্বস্তি বাড়িয়েছেন রাজ্যসভার সাংসদ রূপা গঙ্গোপাধ্যায়।
সাংগঠনিক ভাবে বিজেপিতে সভাপতির পরেই গুরুত্বপূর্ণ পদ সাধারণ সম্পাদকের (সংগঠন)। সেই দায়িত্বে-থাকা বি এল সন্তোষ বিজেপি-র নতুন রাজ্য কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর দিনই দিল্লিতে নিজের বাড়িতে ডেকেছিলেন রাজ্যের তিন শীর্ষনেতাকে। গত বৃহস্পতিবার সেই বৈঠকে হাজির ছিলেন বঙ্গ বিজেপির প্রাক্তন ও বর্তমান রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ এবং সুকান্ত মজুমদার। ছিলেন রাজ্যের সাধারণ সম্পাদক (সংগঠন) অমিতাভ চক্রবর্তী। সূত্রে খবর, সেই বৈঠকেই
সন্তোষ রাজ্য নেতাদের বুঝিয়ে দেন, এ বার পশ্চিমবঙ্গে নতুন পথে সংগঠন তৈরির পরিকল্পনা করছেন বিজেপি-র কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। তরুণদের দলে বেশি গুরুত্ব দেওয়ার পাশাপাশি সংগঠনের শৃঙ্খলারক্ষাকে বাড়তি গুরুত্ব দেওয়া হবে। যে কোনও বিষয়ে মুখ খোলা বন্ধ রেখে নেতাদের ‘সংযমী’ হতে হবে। সেই বৈঠকের পরে গত সোমবার কলকাতায় এসে নতুন রাজ্য কমিটির নেতাদের নিয়ে বৈঠকে সংযমের পাঠ দিয়ে গিয়েছেন সন্তোষ।
বিজেপি সূত্রে জন গেছে, সম্প্রতি কলকাতায় জাতীয় গ্রন্থাগারের ভাষা ভবনের রুদ্ধদ্বার বৈঠকে সন্তোষ সরাসরি নেতাদের মুখ খোলার নিন্দা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘‘অপ্রয়োজনে বেশি কথা বলা উচিত নয়। জেলা বা মণ্ডলের বৈঠকে আলোচনার সময় কেউ কথা বলেন না। অথচ সমালোচনা করতে ছাড়েন না! এটা ঠিক নয়।’’ সেখানেই না থেমে তিনি বলেন, ‘‘আমরা দীর্ঘ সময় বাংলায় থাকার জন্য এসেছি। কেউ ভাবতে পারেন আমি পাঁচ বছরের জন্য বিধায়ক, আমি ৬ বছরের জন্য রাজ্যসভার সাংসদ হয়েছি। কারও যদি বয়স হয়ে যায়, অথবা শরীর সঙ্গ না দেয় তবে তিনি অবসর নিতে পারেন। কিন্তু তার পরে তাঁদের উত্তরাধিকারীরা এখানে রয়ে যাবেন।’’
সন্তোষ আরও বলেন, ‘‘সংযম চাই। বৈঠকের মধ্যে অনেক কথা বলে দিতেই পারি। কিন্তু বলব না। সঠিক জায়গায় গিয়ে বলব। সামনের মানুষটা ভুল করলেও সঙ্গে সঙ্গে বিরোধিতা করার দরকার নেই। থামতে জানতে হবে। কথা বলে বড় হওয়া যায় না। চুপ থেকেই বড় হওয়া যায়।’’
আগামী দিনে বাংলায় গেরুয়া শিবির কোন পথে রাজনীতি করবে, তার দিশাও দিয়েছেন সন্তোষ। রাজ্য নেতৃত্বকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, তৃণমূলকে ক্ষমতাচ্যূত করার রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জের বাইরেও বিজেপি-র অন্য উদ্দেশ্য রয়েছে। দলের সেই আদর্শ মেনে রাজনীতি করতে হবে।