আজ খবর ডেস্ক- শারীরিক কারণেই সক্রিয় রাজনীতি থেকে বেশ কিছুটা দূরে। তিনি রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। কিন্তু, রাজনৈতিক মহল মনে করে তিনি “সেভাবে” না থেকেও প্রবলভাবে আছেন। আর তারই প্রমাণ মিলল আরও একবার।
আলিমুদ্দিন সূত্রে খবর, রবিবার অশোক ভট্টাচার্য কে ফোন করে কথা বলেন বুদ্ধদেব। তারপরেই জল্পনা ছড়ায়, কী বললেন তিনি? জানা গেছে, শিলিগুড়ি পুরভোটে লড়ার জন্য এখানকার প্রাক্তন মেয়র অশোক ভট্টাচার্যকে পরামর্শ দিয়েছেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

জানা গেছে, রবিবার সকালে হঠাৎই অশোককে ফোন করেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী। শিলিগুড়িতে আবার বামফ্রন্টের নেতৃত্ব দেওয়ার কথা বলেন বুদ্ধদেব। এমনকি, পরে সাংবাদিকদের অশোক নিজেও জানান, প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে ফোন করেছিলেন। পুরভোটে লড়ার পাশাপাশি শিলিগুড়িতে দলকে জেতানোর কথাও অশোককে বলেন প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী।

সম্প্রতি পত্নী বিয়োগ হয়েছে অশোকের। তার আগে হার্টে অপারেশন হয় তাঁর। চোখেও সমস্যা আছে। তাই পুরভোটে আর লড়তে চান না বলে কিছু দিন আগে নিজেই জানিয়েছিলেন প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তথা পুরমন্ত্রী অশোক ভট্টাচার্য। এ বার বিধানসভা ভোটেও হেরে গেছিলেন তাঁরই রাজনৈতিক শিষ্যের কাছে ।
ভোটের পরে দলের কাজ করলেও আগের চেয়ে দৌড়ঝাঁপ কমিয়ে দিয়েছিলেন। বয়স-নীতির কারণে জেলা কমিটি থেকে অব্যাহতি নিতে হয়েছে। এ সব কারণেই এ বার আর পুরভোটে নিজে লড়তে চান নি। বরং পরামর্শদাতার ভূমিকায় থাকতে চান বলে দল কে জানিয়ে দেন অশোক। কিন্তু শিলিগুড়িতে এখনও তাঁর বিকল্প তেমন কোনও মুখ বামেদের কাছে না থাকায় বামফ্রন্টের তরফে অশোককে নতুন করে রাজি করানোর চেষ্টা শুরু হয়েছে বলে খবর। তাঁর পুরনো ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে তিনি দাঁড়াতে পারেন বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী নিজে তাঁকে ফোন করায় বিষয়টি অন্য মাত্রা পেল বলে সবার ধারণা। অশোককে শিলিগুড়িতে ভোটের কান্ডারি হওয়ার কথাও বলেন তিনি। অশোক এ দিন বলেছেন, ‘‘বুদ্ধবাবু টেলিফোন করেছিলেন। শিলিগুড়িতে আমাদের আবার জিততে হবে, সেই কথা বলেছেন। ওঁর শরীরের খোঁজ নিয়েছি। বাকিটা দলীয় আলোচনা।’’
প্রসঙ্গত, সম্প্রতি কলকাতা হাই কোর্টে রাজ্য সরকার জানিয়েছে, শিলিগুড়ি-সহ রাজ্যের বাকি পুর-নিগমগুলিতে ভোট হতে পারে আগামী ২২ জানুয়ারি।

ঘাসফুল শিবিরের খবর, তৃণমূল এ বার গৌতম দেবকে সামনে রেখে লড়াইয়ের প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিজেপি সামনে এগিয়ে দিয়েছে শিলিগুড়ির বিধায়ক শঙ্কর ঘোষকে। যিনি বিধানসভা ভোটের আগে পর্যন্ত সিপিএমে অশোকেরই অনুগামী ছিলেন। সেখানে বামেদের মুখ কে হবে, তা নিয়ে দলের মধ্যে জোর আলোচনা শুরু হয়েছে। গত দু’দিনে সিপিএমের জেলা কমিটি, জেলা সম্পাদকমণ্ডলী এবং জেলা বামফ্রন্টের বৈঠক হয়েছে। প্রতিটি বৈঠকেই অনেকে অশোককে ফের দাঁড়ানোর আর্জি জানিয়েছেন। রাজ্য কমিটির তরফেও অশোকের কাছে নতুন করে প্রস্তাব পাঠান হয়। প্রাক্তন মেয়র এখনও রাজি না হলেও দলের হয়ে ভোটে কাজ করছেন। এর মধ্যেই বুদ্ধদেব এ দিন তাঁকে ফোন করেন।

বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য মুখ্যমন্ত্রী থাকাকালীন অশোক বহু দিন রাজ্যের পুরমন্ত্রী ছিলেন। তবে অশোকের ভোটে দাঁড়ানো বা নেতৃত্ব দেওয়া নিয়ে আবার দলের অন্দরে দ্বিমতও রয়েছে। ফ্রন্ট নেতৃত্বের একাংশ মনে করছেন, বিধানসভা ভোটে হারের পরে ফের পুরসভায় খারাপ ফল হলে তা অশোকের মতো নেতার পক্ষে গৌরবজনক হবে না। দলের অন্দরে অনেকেই মনে করিয়ে দিচ্ছেন রাজ্যের প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী অসীম দাশগুপ্তর কথা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *