আজ খবর ডেস্ক- বিজেপির একটি ত্রৈমাসিক পত্রিকায় অপ্রত্যাশিত ভাবে প্রশংসিত হলেন তৃণমূল নেত্রী তথা রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের (আরএসএস) বাংলা মুখপত্র ‘স্বস্তিকা’ । সেই মুখপত্রে মুখ্যমন্ত্রীর জাতীয় রাজনীতিতে পদার্পণের উচ্চাকাঙ্ক্ষা সম্পর্কে প্রশংসার বন্যা বইয়ে দিল গেরুয়া শিবির।

সম্প্রতি, প্রকাশিত বেশ কয়েকটি নিবন্ধে, ম্যাগাজিনটিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি এবং মমতা বন্দ্যোপধ্যায়কে কংগ্রেস-মুক্ত ভারত গড়ার “অবিভাজ্য স্বপ্ন” – এর কান্ডারী বলেও অভিহিত করা হয়েছে।

সেখানে বলা হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাফল্য মানেই দুর্বল হবে কংগ্রেস। এই বিষয় স্বস্তিকাতে বলা হয়েছে : “প্রধানমন্ত্রীর বয়স এখন ৭৩ বছর, দল থেকে ৭৫ বছর বয়সে অবসর নেওয়ার নীতির কারণে তাঁর হাতে রয়েছে আর মাত্র তিন বছর। মমতার বয়স এখন ৬৭ । ৩ বছর পর, তাঁর বয়স হবে ৭০ – ৭১। এরমধ্যে তাঁর জন্য যা কিছু সংরক্ষণ করা হয়েছে, তা তৃণমূল কংগ্রেসের নিজের হিসেবেই পরিলক্ষিত হবে এবং এই দলের বয়সের কোনো সীমাবদ্ধতা নেই।”

এর সর্বশেষ সংস্করণে , ম্যাগাজিনটিতে নির্বাচনী কৌশলবিদ প্রশান্ত কিশোরের ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) প্রতি করা মন্তব্য এবং বিজেপি সাংসদ ও জাতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষের বেশ কিছু মন্তব্য সংকলিত করা হয়েছে। সেখানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই বিরোধী জোটের নেতৃত্ব দেবেন। কারণ কংগ্রেসের অন্তর্বর্তী সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধীর “দিন শেষ হয়ে গেছে”।

মুখপত্রটিতে প্রশান্ত কিশোরের কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যিনি মমতা ব্যানার্জিকে এই বছর বাংলায় বিধানসভা নির্বাচনে জয়ী হতে সাহায্য করেছিলেন। সেই সময় প্রশান্ত – বেশিরভাগ সময় দেশের বাইরে থাকার জন্য কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধীর সমালোচনা করেছিলেন এবং বলেছিলেন যে একটি “গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টির নেতৃত্ব কোন ব্যক্তির ঐশ্বরিক অধিকার নয়”। সেই কথাও এতে উল্লেখ করা হয় । সেই সঙ্গে এতে মমতার সম্প্রতি করা দিল্লি সফরের মন্তব্যের কোথাও বলা হয়েছে যে , “ইউপিএ (ইউনাইটেড প্রগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স) কী? ইউপিএ নেই।”

কিন্ত আশ্চর্যের বিষয়, এই একই ম্যাগাজিন তার গত ৬ ই ডিসেম্বরের সংস্করণে দাবি করেছিল যে, মমতা যেহেতু মোদিকে টার্গেট করতে পারেন না, তাই তিনি সোনিয়া এবং কংগ্রেসের পিছনে যাচ্ছেন। সেখানে বলা হয়েছিল – “মোদি ও দিল্লি উভয়ই মমতার নাগালের বাইরে। সোনিয়া তার নাগালের মধ্যে আছেন। তাই কংগ্রেসের কফিনে শেষ পেরেকটি পোতার চেষ্টা করছেন তিনি। তিনি গোয়া, ত্রিপুরা, হরিয়ানা এবং উত্তর প্রদেশে শুধু বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছেন না, বরং ওই রাজ্যগুলিতে কংগ্রেস কি ভাবে তার অস্তিত্ব হারিয়েছে তাও দেখেছেন।”

আগামী ১৯ ডিসেম্বর কলকাতায় পুরভোট । তার আগেই ‘স্বস্তিকা’ র সর্বশেষ সংস্করণে মোদী এবং মমতার মধ্যে একটি সমন্বয়ের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, “ মোদি এবং মমতার মধ্যে রহস্য জোটে অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলি স্টিকি উইকেটে রয়েছে।”

এই বিষয় রাজনৈতিক ভাষ্যকার এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতার অধ্যাপক অঞ্জন বেরা বলেছেন, ” তৃণমূল কংগ্রেস সবসময় আরএসএসের ছত্রছায়ায় ছিল, যার এজেন্ডা হল সমস্ত ধর্মনিরপেক্ষ রাজনৈতিক দলগুলিকে শেষ করা,” তিনি আরও বলেন, “এটা উল্লেখ্য যে টিএমসি এবং মমতা একবারও আরএসএসের সমালোচনা করেননি। বিপরীতে, টিএমসি আবার ক্ষমতায় আসার সাথে সাথেই আরএসএস এই রাজ্যে সুচারুভাবে কাজ করছে।”

রাজ্যে “টিএমসি বাম-বিরোধী ক্রোনি পুঁজিবাদীদের প্রিয় হয়ে উঠেছে” বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন “তাদের এজেন্ডা হল দেশের ক্রনি পুঁজিবাদের সমস্ত শক্তিকে একত্রিত করা। আরএসএস-এর রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষা পূরণের জন্য এই ধরনের শক্তি প্রয়োজন।”

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালে একটি সম্পাদকীয়তে, আরএসএসের জাতীয় সাপ্তাহিক মুখপত্র পাঁচজন্য মমতাকে “দেবী দুর্গা” বলে প্রশংসা করেছিল। তার পরিপ্রেক্ষিতে মমতাও সংগঠনটিকে “সত্যিকারের দেশপ্রেমিক” বলে অভিহিত করেছিলেন।

তাই স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠছে, বিগত কিছুদিন ধরে তৃণমূলের সঙ্গে কংগ্রেসের রাজনৈতিক সম্পর্কে চিড় ধরেছে, সেই সুযোগেই কি এবার তৃণমূলকে দলে টানতে চাইছে গেরুয়া শিবির? তবে কি প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন বাবুর আশঙ্কা সত্যি হল ? উত্তর দেবে ভবিষ্যৎ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *