আজ খবর ডেস্ক : ঝাড়গ্রামের কেশিয়াপাতা রাঙাডিহার মেয়ে মমতা হাঁসদা। খড়ের চাল দেওয়া এক চিলতে মাটির ঘর। বাড়ির এক কোণে বাবার পাশে শুয়ে ছোট্ট মমতা নিজের স্বপ্ন স্বপ্ন দেখেছিল, ভারতের হয়ে খেলছে সে। আর তার সেই স্বপ্নই পূরণ হতে চলেছে। অল ইন্ডিয়া ফুটবল ফেডারেশন (এআইএফএফ) কেরলে মেয়েদের জাতীয় দলের বাছাইয়ের জন্য স্কাউটিং চালাচ্ছে। আর ওরই শিবিরেই ডাক পড়েছে মমতার।ছোটবেলায় পাড়ার দাদাদের সঙ্গে প্রথম শুরু হয় ফুটবল খেলা।

বাবা কুনার হাঁসদা দিনমজুরির কাজ করতেন। মা কণিকা কেশিয়াপাতা পঞ্চায়েত অফিসে চা-জল দেওয়ার কাজ করেন। স্বল্প আয়ে তিন মেয়ে, এক ছেলের সংসার চালাতে রীতিমত নাজেহাল হন বাবা। তবে হাজার প্রতিকূলতাতেও ফুটবল খেলা ছাড়েনি মমতা। জীবনের প্রতিটি বাঁধা যেন তাকে ফুটবল খেলতে আরও উদ্দীপ্ত করেছে। কেশিয়াপাতা জিএম হাইস্কুলের এই ছাত্রী, স্কুলের দলে থেকে প্রথম জোর কদমে ফুটবল খেলা শুরু করে। ২০১২ সালে আচমকাই তাঁর বাবা মারা যান। কিন্তু জীবনের এমন কঠিন সময়ও খেলায় প্রতি একাগ্রতা ছিল অবিচল। পান্তা ভাত খেয়ে স্কুলে যাওয়া, বাড়ি ফিরেই মুড়ি খেয়ে মাঠে ছুট, এই ছিল মমতার প্রতিদিনের রুটিন।মমতা কাছে আর্থিক সমস্যাটা ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। অনুশীলনের ক্ষেত্রেও সমস্যা কম নয়। জঙ্গল পরিষ্কার করে ছোট্ট জায়গাতেই কোনরকমে চলে প্রশিক্ষণ। মমতার প্রশিক্ষক অশোক সিংহ খেলার সামগ্রী, পুষ্টিকর খাবার দিয়ে সাহায্য করেছেন তাঁকে।

নভেম্বরে কেরলে জাতীয় প্রতিযোগিতায় প্রথম নির্বাচকদের চোখে পড়েন মমতা। প্রশিক্ষক অশোক বলেন, ‘‘এআইএফএফ থেকে মমতাকে ফোন করেছিল। বাড়ির কাছাকাছি বড় রেল স্টেশন, কাছাকাছি বিমানবন্দরের নাম জিজ্ঞাসা করেছেন। শীঘ্রই মেল পাঠাবেন বলে জানিয়েছে।’’ আইএফএ সভাপতি অজিত বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘ওরা (এআইএফএফ) আমাদের কোচ দোলা মুখোপাধ্যায়কে বলেছিল। তবে অফিশিয়াল চিঠি এখনও আসেনি।’’ মমতার কথায়, ‘‘নিজের সেরাটা দিয়ে প্রথম একাদশে থাকার চেষ্টা করব। জাতীয় দলের জার্সি পেলে আমার এতদিনের লড়াই সম্পূর্ণ হবে।’’ মমতার মা জানিয়েছেন, ‘‘ভাল লাগছে। ও যদি দেশের হয়ে খেলে আরও ভাল লাগবে।’’

ইতিমধ্যেই মমতার সাফল্যে তাকে বাড়ি গিয়ে অভিনন্দন জানিয়েছেন সেখানকার স্থানীয় বিধায়ক খগেন্দ্রনাথ মাহাতো। তিনি বলেন, ‘‘মমতা আমাদের জঙ্গলমহলের গর্ব। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তরফে অভিনন্দন জানিয়েছি।’’ বিধায়ক তাদের বাড়ির অভাব ও সমস্যার কথাও জানতে চন। কিন্তু মমতা শুধু বলে, ‘‘আমাদের খেলার মাঠ নেই। জঙ্গলের মধ্যে ছোট্ট জায়গায় খেলি। ভাল মাঠ হলে সবাই আরও ভাল কিছু করতে পারব।’’

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *