আজ খবর ডেস্ক : বিধানসভা নির্বাচনে আসন শূন্য হওয়ার পর থেকেই বিভিন্ন ব্যঙ্গ বিদ্রুপের সম্মুখীন হতে হয়েছে রাজ্য বামফ্রন্টকে। কিন্তু তা সত্ত্বেও ঘুরে দাঁড়াবার লড়াইয়ে আসন্ন কলকাতা পুরভোটে বাম প্রার্থী তালিকায় দেখা মিলেছে এক ঝাঁক নতুন মুখের। সেই তালিকারই কনিষ্ঠতম প্রার্থী উপনীতা পাণ্ডে। বয়স মাত্র ২৪। ভোটের আগে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে প্রচার সারছেন উপনীতা। কিন্তু এই প্রচারে বেরিয়েই তাঁকে পড়তে হল বিড়ম্বনায় !
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পারেটিভ লিটারেচারের স্নাতকোত্তরের ছাত্রী উপনীত। এবারের পুরভোটে ৪৯ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বাম প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন তিনি। প্রচারে বেরিয়ে বিভিন্ন ওয়ার্ডের বাড়ি বাড়ি ঘুরে মানুষের সমস্যা মিটিয়ে উন্নয়নের কথা বলছেন তিনি। কিন্তু তারমধ্যেই বিপত্তি ! উন্নয়নের কথা বলবেন কি, উল্টে তাঁকেই রীতিমতো ‘ জ্ঞান ‘ দিচ্ছেন এলাকার সাধারণ মানুষ। সেই সঙ্গে বাম দলগুলিকে নিয়ে দেদার ব্যাঙ্গ বিদ্রুপও শুনতে হচ্ছে তাঁকে।ভোট চাইতে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় ৪৯ নম্বর ওয়ার্ডের বাড়ি বাড়ি প্রচারে বেরিয়েছিলেন উপনীতা। তখনই এক বয়স্ক ব্যাক্তি হঠাৎই বেরিয়ে এসে তাঁকে বলতে লাগলেন , ” এসব না করে পড়াশোনাটা শেষ কর। তারপর একটা ভালো চাকরি-বাকরি দেখো। নিজের কেরিয়ারটা এভাবে নষ্ট কোরো না।” প্রৌঢ় তাঁর বক্তব্যে উপনীতাকে স্পষ্ট বোঝাতে চান যে, বাম রাজনীতি করে কোন লাভ নেই।
শুধু এখানেই থেমে থাকেনি বিপত্তি। রাজচন্দ্র সেন লেনে গিয়েও একই অবস্থার সম্মুখীন হতে হল উপনীতাকে। উন্নয়নের কথা বলতে যেতেই একজন প্রশ্ন করে বসলেন, “তোমাদের দলের পাকাচুলের নেতারা সব কই? তাঁরা প্রচার করছেন না?” এমন প্রশ্ন শুনে রীতিমত অপ্রস্তুত হয়ে পড়েন উপনীতা। ঠিক কি উত্তর করবেন তা বুঝে ওঠার আগেই ধেয়ে এল পরের ইয়র্কার, “ও যাদবপুরে পড়ো! বুঝতেই পেরেছি, জেইউ আর জেএনইউ – ওখানেই দলটা চলে।” তারপরই তাঁকে পরামর্শ দেওয়ার সুরে ব্যাক্তি বললেন, “এসব করে লাভ নেই। একটা ভালো চাকরি বাকরি জোটাও।”
ক্যাম্পাসের রাজনীতি থেকে রেড ভলান্টিয়ার্সের দায়িত্ব সবই সামলানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে উপনীতা। তবে ক্যাম্পাসের রাজনীতি আর পুরভোটের ময়দান যে এক নয়, তা হয়ত বুঝতে পারছেন তিনি। কারণ দুটিই একেবারে ভিন্ন মেরুর বিষয়। ক্যাম্পাসের ক্ষেত্রে সবাই সবাইকে চেনে, ক্যাম্পাসের সব সমস্যা সম্পর্কে অবগত। কিন্তু পুরভোটের ক্ষেত্রে চিনতে হয় এলাকা। জানতে হয় সেখানকার মানুষকে। বুঝতে হয়, তাদের সমস্যা। তার উপর উপনীতার গায়ে বাম রাজনীতির তকমা তো রয়েছেই। ফলত প্রচারে বেরিয়ে সাধারণ মানুষের থেকে যেমন প্রতিক্রিয়া পেতে হচ্ছে উপনীতাকে, তাতে স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠছে এভাবে কী জিততে পারবে বাম ? অবশ্য তা জানা যাবে আগামী ২১ শে ডিসেম্বর।