আজ খবর ডেস্ক- এ যেন আধুনিক যুগের চিত্রাঙ্গদা! তিনি ছিলেন মণিপুরের রাজকুমারী। আর এই কন্যে মধ্যপ্রদেশের। পরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের “চিত্রাঙ্গদা” যেন তাঁর জীবনের প্রতিবিম্ব ছিল বলে অনেকেই মনে করেছিলেন সেই সময়। ধীরে ধীরে পুরনো ধারণা থেকে বেরিয়ে এসে “এল জি বি টি কিউ” আন্দোলন এখন মূল ধারার সামাজিক লড়াই। শরীরী স্বত্ত্বা থেকে বার হয়ে মনের ডাকে সাড়া দিচ্ছেন বহু মানুষ।
এমনই এক গল্প। শরীরে তিনি মহিলা। কিন্তু মধ্যপ্রদেশের এই মহিলা পুলিশ কর্মী মন থেকে পুরুষ। তিনি নিজেও জানেন সে কথা। আর তাই অপারেশন করে লিঙ্গ পরিবর্তন করতে চান তিনি। পুরুষ হয়ে উঠতে চান শরীরেও।
লিঙ্গ পরিবর্তন করতে চেয়ে তিনি আবেদন জানিয়েছিলেন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে। সম্প্রতি তাঁর সেই আবেদন মঞ্জুর হয়েছে। অর্থাৎ কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছতে আর কোনও বাঁধা নেই। মধ্যপ্রদেশ পুলিশ ডিপার্টমেন্টে এমন লিঙ্গ বদলের ঘটনা এই প্রথম।
৩০ বছর বয়সী এই কনস্টেবল ২০১৯ সালে লিঙ্গ বদলের জন্য উপরমহলে আবেদন জানিয়েছিলেন। এর জন্য যে শারীরিক এবং মানসিক প্রস্তুতি দরকার পড়ে, তাও সেরেছেন তিনি। বছর দুয়েকের মধ্যেই আবেদন অনুমোদন পেল।
শিব রাজ্য সিং চৌহানের রাজ্যের অ্যাডিশনাল চিফ সেক্রেটারি রাজেশ রাজোরা বলেছেন, ‘লিঙ্গ বদলের জন্য আবেদন জমা করার পর ওই কনস্টেবল নিজে এসেছিলেন আমার কাছে। আমায় তিনি বলেছেন, বুঝিয়েছেন নিজের মধ্যে কী অনুভব করেন তিনি। তাঁর মনে হয় তাঁর অন্তরে থাকা পুরুষ সত্ত্বা এক মহিলার শরীরের খাঁচায় বন্দি।’
এইমস থেকে ইতিমধ্যে তাঁর অস্ত্রোপচারের জন্য যা যা মানসিক ও শারীরিক পরীক্ষানিরীক্ষা দরকার, সবই হয়েছে। সম্পূর্ণ হয়েছে প্রাথমিক মানসিক কাউন্সেলিং ও হরমোনাল চিকিৎসা। আইনি যা করণীয়, তাও করেছেন তিনি। তাই অনুমতি পেতে অসুবিধা হয়নি।
এর আগে মহারাষ্ট্রের এক মহিলা কনস্টেবলও এমন লিঙ্গ বদল করেছিলেন। তাঁর রাজ্যের পুলিশ ডিপার্টমেন্টে তিনিই ছিলেন প্রথম। এই রাজ্য অর্থাৎ বাংলায় দীর্ঘদিন ধরে চলছে ” এল জি বি টি কিউ” আন্দোলন। এমনকি, একাধিকবার রাজনৈতিক দলের কর্মসূচিতে ও জায়গা করে নিয়েছে মানুষের সমানাধিকার ও সমমর্যাদা পাওয়ার দাবিতে করতে থাকা লড়াই। পশ্চিমবঙ্গে তৈরি হয়েছে “ট্রান্সজেন্ডার বোর্ড”। কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায় পরিচালিত “নগর কীর্তন” অথবা স্বপ্নময় চক্রবর্তীর লেখা “হলদে গোলাপ” সমাদৃত হয়েছে সাধারণের মধ্যে। মধ্যপ্রদেশের এই ঘটনা তাই নাড়া দিয়েছে অনেকের মনে।