কলকাতা পুরসভার ৬৮ নম্বর ওয়ার্ড। এখানে লড়াই মূলত তৃণমূল বনাম তৃণমূলের। বিদায়ী কাউন্সিলর সুদর্শনা মুখার্জি কে প্রথমে প্রার্থী তালিকায় রাখেনি তৃণমূল। বরং নাম ছিল তনিমা চ্যাটার্জির। যাঁর অন্যতম পরিচয়, সুব্রত মুখার্জির বোন হিসেবে। কিন্তু ২ দিনের মধ্যেই তৃণমূলের তরফে তনিমার থেকে দলীয় প্রতীক ফেরত নিয়ে নেওয়া হয়। দলের প্রার্থী করা হয় সুদর্শনা কে। তনিমা এই ওয়ার্ডে সাইকেল প্রতীকে নির্দল প্রার্থী।

রাজ্যের প্রাক্তন পঞ্চায়েত মন্ত্রী এবং কলকাতার দাপুটে মেয়র ছিলেন সুব্রত মুখার্জি। এই বছরেই কালীপুজোর রাতে
হঠাৎই মৃত্যু হয় তাঁর। ৬৮ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা ছিলেন সুব্রত। দীর্ঘ সময় বালিগঞ্জ বিধানসভার বিধায়ক ছিলেন। গড়িয়াহাট এলাকার বিখ্যাত পুজো “একডালিয়া এভারগ্রীন” এর প্রধান কর্তা ছিলেন সুব্রত। পুরভোটের আগে দলের কাছে বড় প্রশ্ন ছিল, সুব্রতর মৃত্যুর পর এই ওয়ার্ডের প্রার্থী কে হবেন? সুব্রতর বোন তনিমা, নাকি সুব্রতর রাজনৈতিক শিষ্য সুদর্শনা?

ভোট প্রচারের একেবারে শেষ লগ্নে নিজের রাজনৈতিক গুরু “সুব্রত দা”কে খোলা চিঠি লিখলেন সুদর্শনা। শুধু তাই নয়, বানিয়েছেন একটি ফেসবুক ভিডিও। দেখে নেওয়া যাক, চিঠিতে সুব্রত মুখার্জিকে কী লিখেছেন সুদর্শনা!

তুমি রবে নীরবে —
রাজনীতিতে আমার হাতেখড়ি
তোমার হাতেই। তোমার দেখানো পথেই রাজনীতিতে শুরু হয়েছিল আমার পথচলা। ২০১৫ সালে অনভিজ্ঞ, অচেনা সুদর্শনাকে রাজনীতির ময়দানে প্রতিষ্ঠা পেতে তুমিই সাহায্য করেছিলে। ছাত্রী সুদর্শনা সর্বদা তোমার দেখানো পথ অনুসরণ করে প্রতিটি অগ্নিপরীক্ষায় সসম্মানে উত্তীর্ণ হয়েছে। কোভিড মহামারী থেকে আম্ফান বিপর্যয়, তোমার শেখানো রাস্তাতেই মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছিলাম। এবার সামনে বড় পরীক্ষা। শেষদিন ওপেন জিম উদ্বোধন করতে এসেও তুমি বলেছিলে সামনে বড় পরীক্ষা, সুদর্শনা তৈরি হও। রসিকতা পছন্দ করতে, কোনোদিনও অভিনয় ও অতি নাটকীয়তা পছন্দ করতে না। কথায় বলে রক্তের সম্পর্কে আত্মীয় হয় না। আত্মার সম্পর্কে আত্মীয় হয়। তুমি আজ নেই। তবুও তোমার প্রতি বিশ্বাস, ভালবাসা, শ্রদ্ধা চিরদিন থাকবে। দূরে চলে গিয়েও তুমি থাকবে হৃদয়ে….
…….তুমি অন্তরাল থেকেও আমাকে আশির্বাদ করবে। অন্য জগতেও তুমি ভাল থেকো। – -সুদর্শনা

কলকাতার মেয়র থাকার সময় ৮৭ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর ছিলেন সুব্রত। পরে এই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হন বোন তনিমা। এবার প্রায় একপেশে পুরভোটে তাই জমজমাট ৬৮। দাদা-বোনের আবেগ না রাজনৈতিক গুরু-শিষ্যের সমীকরণ? ৬৮র মানুষের মনে গভীর দাগ কাটতে পারবেন কে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *