আজ খবর ডেস্ক : কথায় আছে, হাজার প্রতিকুলতার মাঝেও প্রতিভাকে আটকে রাখা যায় না। আর বহু পুরোনো সেই প্রবাদ বাক্যকে সত্যি করেই গ্রীসের মাটিতে শ্রেষ্ঠ অভিনেতার তকমা পেল পশ্চিমবঙ্গের এক হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান আরিফ শেখ।

ছোট থেকেই অভিনয় করার ভীষণ শখ তাঁর। বয়স মাত্র ৯ বছর। বাবা পেশায় ইটভাটার কর্মী আর মা গৃহবধূ। পরিবারে আরিফই প্রথম যে স্কুলের গণ্ডিতে পা রেখেছে। দিন মজুরের সংসারে বহু কষ্টে দিন চলে তাঁদের। কিন্তু ওই যে বলে, ভাগ্যের ফের !পরিচালক প্রসূন চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরে, প্রথম অভিনয় করার সুযোগ পান আরিফ। প্রসূন চট্টোপাধ্যায়ের পরিচালিত ছবি ‘দোস্তজী’-তে অভিনয় করে সে। এরপরই ২৪ তম অলিম্পিয়া চলচ্চিত্র উৎসবে বেস্ট চাইল্ড পারফরম্যান্স (মেল) বিভাগে সেরার শিরোপা পেল যায় আরিফ।ছবিটির মূল কাহিনী ১৯৯৩ সালের মুম্বই হামলার প্রেক্ষাপটে মুর্শিদাবাদের ডোমকল গ্রামের দুই ছেলের সরল, নিখাদ বন্ধুত্ব ঘিরে আবর্তিত হয়। ‘দোস্তজী’ ছবিতে আরিফের অভিনীত চরিত্রের নাম ছিল সফিকুল। ছবিতে বাবরি মসজিদ ধ্বংস হওয়ার ঘটনারও খানিকটা আঁচ রয়েছে।

সফিকুলের চরিত্রের জন্য একটু অন্যধরনের শিশুশিল্পীর মুখ খুঁজছিলেন পরিচালক প্রসূন চট্টোপাধ্যায়। সেই মতোই সমস্ত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলি ঘুরে ঘুরে তিনি খুঁজতে শুরু করেন তাঁর মনের মত মুখ। প্রসূন জানান, কলকাতায় ফিরে আসার সময়, বছর আট – নয়ের একটি ছোট্ট ছেলে তাঁকে খুঁজতে খুঁজতে তিনি গ্রামে যে বাড়িতে থাকতেন সেখানে পৌঁছে যায়। তিনি বলেন, “আসলে আমরা যেভাবে ছবিটা বানিয়েছি, তখন হোটেল আফোর্ড করার অবস্থা ছিলনা আমাদের। আমি ওখানকার গ্রামের একজনের বাড়িতে থাকতাম তখন। সেই সময় ওই বাড়িতেই আরিফ আমার সঙ্গে দেখা করতে এসেছিল। বর্ডারের কাছে ওই সব প্রত্যন্ত গ্রামে তখন হোটেল তো দূরের কথা, বেসিক জিনিস গুলোই পাওয়া যায়না।”

সেখানে পৌঁছেই আরিফের প্রশ্ন ছিল ছবিটা কি তৈরি হচ্ছে ! তারপর ছবি হচ্ছে শুনেই, ওই খুদে পরিচালককে ডেকে দেওয়ার অনুরোধ করে। প্রসূন জানান, তিনিই ছবির পরিচালক। অথচ সেই ছেলে নাকি প্রসূনকে দেখে মুখের উপর বলেই দিল, তাঁর প্রসূনকে দেখে পরিচালক বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু আরিফ তাঁর মধ্যে পরিচালককে না দেখতে পেলেও, আরিফের মধ্যে সফিকুলকে দেখতে পেয়ে যান পরিচালক।তারপর শুরু হয় শ্যুটিং। ২৪ তম অলিম্পিয়া চলচ্চিত্র উৎসবে বেস্ট চাইল্ড পারফরম্যান্স (মেল) বিভাগে সেরা পুরস্কারও পায় আরিফ। এত বড় আন্তর্জাতিক সন্মান পেলেও ছোট্ট ছেলের যাত্রা সবে শুরু হয়েছে বলেই মনে করেন পরিচালক। এখনও তাঁর সুদূর পথচলা বাকি।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *