আজ খবর ডেস্ক : ১৯৯৮ সালে প্রতিষ্ঠা হয় তৃণমূল কংগ্রেস। তখন থেকেই দলের চেয়ারপার্সন তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নিয়ম মেনে প্রতি বছর তৃণমূলের বর্ধিত কোর কমিটির বৈঠকে চেয়ারপার্সন নির্বাচিত করা হয়। কিন্তু এই প্রথম তৃণমূলের সংবিধান বদল হচ্ছে। নতুন করে ‘জাতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি’ পদ আনতে চলেছে তৃণমূল। ঘাসফুল শিবিরের অন্দরে বলা হচ্ছে, দল এখন অনেক বড় হয়েছে। সংগঠনের কলেবর বেড়েছে। শুধু পশ্চিমবঙ্গেই নয়, উত্তর-পূর্বের একাধিক রাজ্য এবং গোয়া, দিল্লি, উত্তরপ্রদেশের মত বিভিন্ন রাজ্যে সংগঠন তৈরি করেছে তৃণমূল।

আগামী ২০২৪ লোকসভা নির্বাচনে শুধু নয়, তার আগে একাধিক রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনেও প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে তৃনমূল কংগ্রেস।তাই দলের চেয়ারপার্সন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে ‘সাহায্য’ করার জন্যই ওই পদ তৈরি হচ্ছে। যিনি মমতার অনুপস্থিতিতে (তিনি কোথাও সফরে গেলে বা অন্যত্র ব্যস্ত থাকলে বা অনিবার্য কারণবশত কাজ করতে অপারগ থাকলে) তাঁর ভূমিকায় কাজ করবেন।তৃণমূল সূত্রে খবর, এই পদের জন্য দলের সাধারণ সম্পাদক তথা সাংসদ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কেই ‘স্বাভাবিক পছন্দ’ মনে করা হচ্ছে। এমনকি, তৃণমূলের অন্দরে ক্ষমতার উত্তরাধিকারের বিষয়টিও এর ফলে সংবিধানসম্মত ভাবে চূড়ান্ত হয়ে যাবে বলে মনে করা হচ্ছে।

যদিও তৃণমূলের ঘরে-বাইরে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কার্যত দলের দু’নম্বর। গত বিধানসভা ভোটের পর থেকেই তিনি দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক। কিন্তু সেই পদটি ‘মনোনীত’। সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে তিনি ‘নির্বাচিত’ হয়ে এলে দলের অন্দরে তাঁর কর্তৃত্ব আরও প্রতিষ্ঠিত হবে।সূত্রের খবর, তৃণমূলে গঠন করা হবে একটি ‘জাতীয় পরিষদ’। তার সদস্যসংখ্যা হবে কম বেশি২,০০০। ওই পরিষদের সদস্যদের মধ্যে নির্বাচিত এবং মনোনীত— দু’ধরনের প্রতিনিধিই থাকবেন। ওই পরিষদই হবে দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারক কমিটি। তারাই জাতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতিকে পাঁচ বছরের মেয়াদে নির্বাচিত করবে।সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে আরও একটি বিষয় নিশ্চিত করা হতে চলেছে। তা হল মোট ৬জন ‘জাতীয় সাধারণ সম্পাদক’ নিয়োগ। যাঁরা দলের সংগঠন এবং রোজকার কাজকর্ম দেখাশোনা করবেন।

তৃণমূলের সদস্যপদ এবং সদস্যদের প্রদেয় ‘ফি’ নিয়েও বদল আনা হতে পারে। প্রশান্ত কিশোরের সংস্থা ‘আইপ্যাক’ তৃণমূলের সংবিধানে এই রদবদলের কাজ করছে। যা এখনও খসড়ার পর্যায়ে রয়েছে। নিউজ পোর্টাল ‘দ্য প্রিন্ট’ ওই খবর দিয়ে দাবি করেছে, তারা সংবিধান সংশোধনের খসড়ার বিভিন্ন বিষয় জানতে পেরেছে। প্র।য়োজনীয় নথিও তাদের হেফাজতে রয়েছে। তার ভিত্তিতেই তারা তৃণমূলে কাঠামোগত পুনর্বিন্যাসের বিষয়টি প্রকাশ্যে এনেছে।

তৃণমূল সূত্রে খবর, সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধনীগুলি মূলত প্রশান্ত কিশোরের মস্তিষ্কপ্রসূত। ২০২১ সালের বিধানসভা ভোটে জয়ের পর তৃণমূলের সঙ্গে প্রশান্তের সংস্থার চুক্তি আরও ৫ বছরের জন্য বাড়ান হয়েছিল। আগামী ২০২৬ সাল পর্যন্ত ‘আইপ্যাক’ রাজ্য সরকার এবং তৃণমূলের সঙ্গে কাজ করবে। পরিষদে ৩৩ শতাংশ করে মহিলা এবং তফসিলি জাতি-উপজাতির প্রতিনিধিত্ব থাকবে।এই খসড়ার মূল পয়েন্ট:

১)দলের চেয়ারপার্সনকে প্রতিনিয়ত সাহায্য করা ছাড়াও কোনও অনিবার্য কারণে চেয়ারপার্সন তাঁর কাজ না করতে পারলে জাতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি চেয়ারপার্সনের কাজ করবেন।

২) জাতীয় কার্যনির্বাহী সভাপতি তাঁর পদাধিকার বলে দলের উপদেষ্টা কমিটিরও সদস্য হবেন।

৩) দলে ৬জন সাধারণ সম্পাদক থাকবেন। প্রত্যেকেই মনোনীত হবেন। তাঁরা সমণ্বয়, সংগঠন, যোগাযোগ, শাখা সংগঠন, নির্বাচন সংক্রান্ত এবং দলীয় দফতর দেখাশোনা করবেন।

৪) তৃণমূলের সদস্যপদ আরও দামি হতে চলেছে। দু’ধরনের সদস্যপদ থাকবে। প্রাথমিক এবং সক্রিয়। বলা হয়েছে, দলের প্রাথমিক সদস্য যে কেউ হতে পারেন। কিন্তু তাঁরা আরও ১০ জনকে দলে যোগদান করাতে পারলে তখনই ‘সক্রিয়’ সদস্য হিসেবে গণ্য হবেন।

৫)সক্রিয় সদসযদের ভোটাধিকার থাকবে। তাঁরা দলীয় দফতরও খুলতে পারবেন।

৬) বাড়ছে বার্ষিক সদস্যপদের খরচও। প্রায় ২০ গুণ বেড়ে বছরে ৫ টাকার বদলে হতে পারে ১০০ টাকা। ডিজিটাল সদস্যপদের বিষয়টিও খসড়ায় রাখা হয়েছে।

দীর্ঘদিন ধরেই তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে ঘুরপাক খেয়েছে একটি প্রশ্ন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরে দলে ২ নম্বর কে হবেন? এক সময় অঘোষিতভাবে এই দায়িত্ব সামলাতেন মুকুল রায়। রাজনৈতিক মহলের একাংশের দাবি, মুকুল বিজেপিতে চলে যাওয়ার পরে শুভেন্দু অধিকারী এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে কাকে এই দায়িত্ব দেওয়া হবে, তা নিয়ে যথেষ্ট জল্পনা এবং আলোচনা চলেছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে অভিষেকের দায়িত্ব বাড়তে থাকায় পরে শুভেন্দু ও বিজেপিতে যোগ দেন। সম্ভবত এবার তাই আইন মেনে দলের সংবিধানে বদল এনে মমতার পরে অভিষেকের জায়গা পাকা করা হচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *