আজ খবর ডেস্ক- প্রথমে নাট্য ব্যক্তিত্ব শাঁওলি মিত্র। তারপরে বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী বিরজু মহারাজ। এবার বাংলার আরেক গর্ব, প্রখ্যাত কার্টুনিস্ট নারায়ন দেবনাথ চলে গেলেন। বেশ কয়েক দিন ধরেই অসুস্থ ছিলেন তিনি। ভর্তি ছিলেন শহরের এক বেসরকারি হাসপাতালে। মঙ্গলবার সকালে মারা গেলেন নারায়ন দেবনাথ। কিন্তু রেখে গেলেন অসংখ্য নস্টালজিয়া, একটা গোটা প্রজন্মের কাছে আশৈশব হাসি আর আনন্দের অজস্র স্মৃতি। স্রষ্টা হয়ত চলে গেলেন, থেকে গেল এবং থেকে যাবে তাঁর সৃষ্টি।
বাঁটুল, হাঁদা ভোঁদা এবং তাদের পিসেমশাই, নন্টে ফন্টে আর কেল্টুদা।

৯এর দশকে যাদের কৈশোর কেটেছে তাদের কাছে নারায়ন দেবনাথ মানেই মন খারাপের ওষুধ। সে সময় ছোটদের হাতে হাতে মোবাইল ছিল না, ইন্টারনেট কী — তা প্রায় জানত না সাধারণ পরিবারের খুদেরা। টেলিভিশন থাকলেও তা ছিল সাদা কালো। এখনকার মত আলাদা কার্টুনের চ্যানেল তখন স্বপ্ন। সেই সময় লাল গেঞ্জি পরা “বাঁটুল দি গ্রেট” আলোড়ন তুলেছিল বাংলা কমিকসের জগতে। এরপরে এল হাঁদা ভোঁদা আর নন্টে ফন্টের চমকপ্রদ সব কীর্তিকলাপ। শুধু মজাদার ছবি নয়, সঙ্গে মজাদার কাহিনী। সবশেষে ছোটদের জন্য শিক্ষামূলক দুএকটি লাইন। এভাবেই বছরের-পর-বছর বাংলা কমিকসের জগতে সাম্রাজ্য চালিয়ে গিয়েছেন নারায়ণ দেবনাথ।

গত ২৫ দিন ধরে বেলেভিউ হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন বর্ষীয়ান কার্টুনিস্ট। কিন্তু শেষরক্ষা হল না। মঙ্গলবার বেলা ১০.১৫ মিনিট নাগাদ শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। গত ২৪ ডিসেম্বর বার্ধক্যজনিত অসুস্থার জেরে এই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল প্রবীন কার্টুনিস্টকে। তবে গত তিনদিনে তাঁর অবস্থার ব্যাপক অবনতি ঘটে। দু-দিন আগেই চিকিত্সকরা জানিয়েছিলেন, ‘চিকিত্সায় সাড়া দিচ্ছেন না নারায়ণ দেবনাথ’। তাই ভেন্টিলেশন সাপোর্টে রাখা হয়েছিল তাঁকে, রাজ্য সরকারও কোনও খামতি রাখেননি তাঁর চিকিত্সায়। তাঁর চিকিত্সার জন্য মাল্টিডিসিপ্লিনারি মেডিক্যাল বোর্ড গঠন করা হয়েছিল, কিন্তু তবুও কাজে এল না লড়াই।

এক অনুরাগীর কলমে — শঙ্খমালা দাশ

৯৭ বছর বয়সী কার্টুনিস্ট ভুগছিলেন বার্ধক্যজনিত সমস্যায়। এর আগেও একাধিক বার চিকিৎসার জন্য তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন নারায়ণ দেবনাথ, ফিরেও এসেছিলেন স্বমেজাজে।
কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথের জন্ম ১৯২৫ সালে হাওড়া শিবপুরে। গত সাত দশকেরও বেশি সময় ধরে দেড় হাজারেরও বেশি সিরিয়াস ও মজার কমিকস সৃষ্টি করে বাংলার শিশু সাহিত্যে এক অসামান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন তিনি। ১৯৬৫ সালে ‘শুকতারা’ পত্রিকায় আত্মপ্রকাশ করে বাঁটুল। বাঙালির প্রথম সুপারহিরো বাঁটুল।
তাঁর অসামান্য কীর্তির জন্য অজস্র সম্মান পেয়েছেন। ২০১৩ সালে সাহিত্য আকাদেমি পুরস্কার এবং বঙ্গবিভূষণ পুরস্কারে সম্মানিত নারায়ণ দেবনাথ। আর ২০২১ সালে পান পদ্মশ্রী, সেই সম্মান গত সপ্তাহেই হাসপাতালের বেডে তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। 

তাঁর মৃত্যুতে শোক বার্তা পাঠিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।

মুখ্যমন্ত্রীর শোকবার্তা

বিশিষ্ট শিশুসাহিত্যশিল্পী ও কার্টুনিস্ট নারায়ণ দেবনাথের প্রয়াণে আমি গভীর শোক প্রকাশ করছি। তিনি আজ কলকাতায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। বয়স হয়েছিল ৯৭ বছর।বাঁটুল দি গ্রেট, হাঁদা ভোঁদা, নন্টে ফন্টে, বাহাদুর বেড়াল প্রভৃতি চরিত্রের স্রষ্টা নারায়ণ দেবনাথ সব বয়সের পাঠকের মনে চিরস্থায়ী আসন লাভ করেছেন।পশ্চিমবঙ্গ সরকার তাঁকে ২০১৩ সালে ‘বঙ্গবিভূষণ’ সম্মান প্রদান করে। রাষ্ট্রপতি পুরস্কার, পদ্মশ্রী সম্মান, সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার ছাড়াও তিনি রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ের ডি লিট ডিগ্রি পান। তাঁর প্রয়াণে কমিকস্ শিল্প জগতের এক অপূরণীয় ক্ষতি হল।আমি নারায়ণ দেবনাথের পরিবার-পরিজন ও অনুরাগীদের আন্তরিক সমবেদনা জানাচ্ছি ।

-মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

তবে, আজীবন যিনি মানুষকে বিশেষত ছোটদের হাসিয়েছেন, ছোটখাটো চেহারার কিন্তু আদতে একটা বিশাল মনের মানুষ চাইতেন না তাঁর জন্য কেউ দুঃখ পাক অথবা শোক ব্যক্ত করুক।
টিম “আজ খবর” শ্রদ্ধা জানাচ্ছে এই শিল্পী কে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *