আজ খবর ডেস্ক- মঙ্গলবারই বিধানসভায় দাঁড়িয়ে রাজ্য ও মুখ্যমন্ত্রীকে “বে-নজির” আক্রমণ করেছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় (Jagdeep Dhankhar)। পরে, তাঁর সমর্থনে সংবাদ মাধ্যমের সামনে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রেখেছিলেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)।
বুধবার সকালে রাজ্যের প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে ধরা পড়ল অন্য ছবি।
এদিন রেড রোডে পাশাপাশি দেখা মিলল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের। কিন্তু আশেপাশে কোথাও নেই বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। পরে জানা গেল, রাত্রের এই অনুষ্ঠানে নাকি আমন্ত্রণই পান নি শুভেন্দু।

সকাল সকাল অনেকেই উপস্থিত থাকতে পারেননি। করোনা আবহে এবার দর্শক সংখ্যা ছিল সীমিত। তবে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়ায় রাজ্যের এই প্রজাতন্ত্র প্যারেড অনেকেই দেখেছেন। আর তারপরেই জোর আলোচনা শুরু হয়েছে গোটা বিষয়টি নিয়ে।
রাজনৈতিক মহলে বলছে, কার্যত মিনিটখানেকের একটি সংক্ষিপ্ত অভিনয় পর্ব যেন অভিনীত হল। ক্যামেরায় ধরা পড়ল, রাজ্যপাল ধনখড় মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে গলা বাড়িয়ে কিছু একটা বলছেন। কিন্তু আগাগোড়া মুখ ফিরিয়েই রইলেন মমতা। অতঃপর শুকনো এবং ঔপচারিক নমস্কার বিনিময়। আর সেখানেই শেষ।

বুধবার সকালে রেড রোডে প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে প্রোটোকল মেনে হাজির ছিলেন রাজ্যপাল এবং মুখ্যমন্ত্রী। যাঁদের মধ্যে সম্পর্ক বরাবরই ‘মধুর’।
গতকালই জাতীয় ভোটার দিবসের অনুষ্ঠানে বিধানসভায় দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ও রাজ্য প্রশাসন সম্পর্কে যথেষ্ট কড়া ভাষায় কিছু মন্তব্য করেন। সেই আবহে রেড রোডে দু’জনের মুখোমুখি সাক্ষাতে কী ঘটে, সেদিকে নজর ছিল অনেকেরই।

২০১৯-এ জগদীপ ধনখড় পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল হিসেবে রাজভবনে আসার পর থেকেই রাজ্য সরকারের সঙ্গে তাঁর দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
অতীতে যেমন প্রজাতন্ত্র দিবসের অনুষ্ঠানে টিভি ক্যামেরায় তাঁর উপস্থিতি ধরা না পড়ায় সর্বসমক্ষে আক্ষেপ প্রকাশ করেছিলেন রাজ্যপাল। কখনও কখনও বিবিধ প্রশাসনিক প্রসঙ্গে রাজ্য সরকারকে তুলোধনা করেছেন। রাজভবনে ডেকে পাঠিয়েছেন রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষ আমলাদের। বিভিন্ন ইস্যুতে শাসকদলকে বিঁধেছেন। কোনও কর্মসূচিতে গিয়ে সরাসরি সেখানকার দায়িত্বপ্রাপ্ত শীর্ষ পুলিশ আধিকারিককে প্রকাশ্যে ধমক দিয়েছেন।
এর ফল এতটাই বিরূপ হয়েছে যে, শাসকদলের বিভিন্ন জনপ্রতিনিধি প্রকাশ্যেই রাজ্যপালকে ‘বিজেপি-র আজ্ঞাবহ দাস’ ইত্যাদি বলতে শুরু করেন।
শব্দ হয়ে যাওয়া বিধানসভা নির্বাচনের পর রাজ্যের নব নির্বাচিত বিরোধী দলনেতা অসংখ্যবার রাজভবনে গিয়ে রাজ্যপালের সঙ্গে বৈঠক করায় বাংলার রাজনীতিতে রাজ্যপাল কে কার্যত “বিরোধী” ইমেজ দিয়েছে রাজনৈতিক মহল।

মঙ্গলবার বিধানসভা চত্বরে অম্বেদকরের মূর্তির সামনে দাঁড়িয়ে জগদীপ ধনখড় রীতিমত চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করেন নবান্নকে। সরাসরিই বলেন, ‘‘রাজ্যে কোনও গণতন্ত্র নেই।’’ ঠিক যা বলে থাকেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
তার পরদিন, অর্থাৎ আজ বুধবার সকালেই রাজ্যপাল হাজির হন রেড রোডে।
মুখ্যমন্ত্রী-রাজ্যপালের মিনিটখানেকের সাক্ষাতে দু’জনের বডি ল্যাঙ্গুয়েজেই ধরা পড়েছে মঙ্গলবারের ঘটনার অভিঘাত। আচার মেনে পাশাপাশি দাঁড়িয়ে দু’জনে ছবি তুলেছেন। কিন্তু সেখানেও ধরা পড়েছে ‘দূরত্ব’। রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলছেন (আসলে বলতে চাইছেন)— এমন ছবিও সামান্য সময়ের জন্য ধরা রয়েছে ক্যামেরায়।
প্রত্যুত্তর পেয়েছেন কি? উত্তর অজানা। কারণ, করোনাকালে দু’জনের মুখই ঢাকা মাস্কে! মেরেকেটে মিনিটখানেকের ‘সাক্ষাৎ’ শেষে রাজ্যপাল নিজের নির্দিষ্ট আসনে ফিরে যান।
বিধানসভার অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে নিজের আসনে বসে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী। আর এভাবেই শেষ হল এদিনের রেড রোডের “প্যারেড” অনুষ্ঠান।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *