আজ খবর ডেস্ক : বরাহ নন্দন বলে গালাগাল করার দিন বোধহয় এবার শেষ! কারণ সম্প্রতি এই প্রাণীর হৃদযন্ত্র সফলভাবে প্রতিস্থাপিত হল মানব দেহে। অবাক হচ্ছেন ? তবে এটাই সত্যি। তবে এই যুগান্তকারী ঘটনা নিয়ে পুলকিত তিলোত্তমার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জনরা।কলকাতার চিকিৎসকদের মতে, শূকরের হৃদপিন্ড যদি আমেরিকার ডেভিড বেনেটকে বাঁচিতে দেয়, তবে ঘুরে যেতে পারে চিকিৎসাবিজ্ঞানের মোড়। হৃদযন্ত্র বিকল হওয়া বহু মানুষের মিলবে জীবন দান। এমনই মত ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন চিকিৎসক তাপস রায়চৌধুরীরও।

কলকাতা হার্ট ট্রান্সপ্লান্টেশনের পথপ্রদর্শক তাপসবাবু বলেন, “শূকরের হার্টের ১০ টা জিন বদলে আসল কেরামতি দেখিয়েছে ভার্জিনিয়ার ‘রিভিভিকোর’। ওই জেনেটিক্স ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দৌলতেই এই জেনো ট্রান্সপ্লান্ট সম্ভব হয়েছে। আমাদের দেশে এই ধরনের ট্রান্সপ্লান্ট করতে গেলে আগে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে বিপ্লব দরকার।” এই বক্তব্যের সাথে সহমত পোষণ করেন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ডা: প্লাবন মুখোপাধ্যায়ও।

প্লাবনবাবুর নেতৃত্বেই প্রথম সরকারি হাসপাতালে হৃদযন্ত্র প্রতিস্থাপন শুরু হয়েছিল।প্লাবনবাবুর কথায়, “এটি একটি মাইলস্টোন। এমন ঘটনা কল্পনাতেও অসম্ভব ছিল। ইউনভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড মেডিক্যাল স্কুলকে অনেক অভিনন্দন। আসলে মনুষ্যেতর প্রাণীর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ মানবদেহে প্রতিস্থাপনের চেষ্টা বহুদিন ধরেই চলছে। সমস্যা হল, ‘রিজেকশান’। এখন দেখার দশ জিনের বদল সেই প্রত্যাখ্যান আটকাতে পারে কি না। “

প্রসঙ্গত, গত শুক্রবারই ডেভিড বেনেট নামের ৫৭ বছরের ওই মার্কিনি ব্যাক্তির শরীরে শূকরের হার্ট প্রতিস্থাপিত করা হয়। জানা গিয়েছে, যে শূকরের হার্টটি অপারেশনে ব্যবহার করা হয়েছিল তাতে ১০ টি জিন ‘এডিট’ করা হয়েছিল। প্রত্যাখ্যানের জন্য দায়ী তিনটে জিনকে প্রথমেই বাদ দিয়ে দেওয়া হয়েছিল। তারপরই সেই জিনটিকে বাদ দেওয়া হয়, যেটি শূকরের হার্টের মাত্রাতিরিক্ত বাড়বাড়ন্তের জন্য দায়ী ছিল। এরপর ছ’টি মানুষের জিন প্রবেশ করানো হয় ওই শূকরের ডিএনএতে। অর্থাৎ সব মিলিয়ে মোট ১০ টি জিনের অদলবদল করা হয়।

এই অত্যন্ত জটিল কাজটি করে ‘রিভিভিকোর’ বলে ভার্জিনিয়ার একটি সংস্থা। গত অক্টোবরে এই সংস্থা প্রথম শূকরের দেহে জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং পদ্ধতিতে কিডনি প্রতিস্থাপনের ব্যবস্থা করেছিল। ব্রেনডেথ হওয়া পর এক মানবদেহে শূকরের কিডনি সফলভাবে প্রতিস্থাপিতও করা হয়েছিল। এবার সেই মর্মেই আরও বড় পদক্ষেপ নেওয়া হল। শহরের অন্যতম কিডনি ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ডা: প্রতিম সেনগুপ্ত এই ঘটনা প্রসঙ্গে একটি এতিহাসিক প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ১৯৮৪ সালে একটি সদ্যজাত শিশুর শরীরে বেবুনের হার্ট বসানো হয়েছিল। সেই অস্ত্রোপচার সফলও হয়েছিল। কিন্তু ওই প্রতিস্থাপিত হৃৎপিণ্ড নিয়ে শিশুটি মাত্র ২০ দিন বাঁচতে পেরেছিল। এখন বরাহ হৃদয় নিয়ে ডেভিড কতদিন বেঁচে থাকতে পারে তাই দেখার।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *