আজ খবর ডেস্ক- প্রজাতন্ত্র দিবসের (Republic Day) ঠিক আগের দিন অর্থাৎ আজ রাজ্য বিধানসভায় একটি বিশেষ অনুষ্ঠান ছিল। এদিন ভারতের সংবিধান প্রণেতা ডঃ বি আর অম্বেদকরকে ( B. R. Ambedkar ) শ্রদ্ধাজ্ঞাপন অনুষ্ঠানে শ্রদ্ধা জানালেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড় (Jagdeep Dhankhar)। উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ বিমান বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
আপাত চমকহীন এই অনুষ্ঠানে দাঁড়িয়েই রাজ্য সরকারকে একের পর এক ইস্যুতে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে গেলেন রাজ্যপাল। মঙ্গলবার সকাল থেকেই যা নিয়ে কার্যত উত্তাল রাজনৈতিক মহল। ক্রমাগত চলছে কাটাছেঁড়া।

রাজ্যপাল এদিন বললেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের অবস্থা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর’ । আগের মতই আবারও বললেন , পশ্চিমবঙ্গে আইনের শাসন নয়, শাসকের শাসন চলছে।
আরও একবার রীতিমত আক্রমণাত্মক ধনখড়ের মুখে শোনা গেল, রাজ্য সরকারের নিন্দা। তিনি এদিন রাজ্য বিধানসভায় দাঁড়িয়ে বললেন, ‘বাংলায় গণতন্ত্র বিপদের মুখে, ‘রাজ্যে ভোটাররা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন না’ ।
একই সঙ্গে দাবি করলেন, তাঁর কাছে হাওড়া পুরভোট নিয়ে কোনও ফাইল সইয়ের অপেক্ষায় পড়ে নেই। মুখ খুললেন সৌগত রায়ের অভিযোগ নিয়েও।

সংবিধান প্রণেতার প্রসঙ্গে বলতে গিয়েই উঠে আসে সাংবিধানিক বিভিন্ন বিষয়। এরপরেই রাজ্যপালকে দেখা যায় কার্যত তুলোধোনা করছেন রাজ্যকে।
তিনি একের পর এক রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে বলেন
১) বাংলায় আইনের শাসন নেই, ভোট পরবর্তী হিংসা সেই ঘটনার প্রমাণ
২) রাজ্য সরকারি অফিসারদের সংবিধান মেনে কাজ করা উচিত। রাজ্য সরকারি আধিকারিকরা সাংবিধানিক মর্যাদা ভুলে গেছেন। রাজ্যের আমলারা রাজনৈতিকভাবে পক্ষপাতদুষ্ট। রাজভবন কী করতে পারে, জানা নেই সরকারি অফিসারদের।
এখানেই থেমে না থেকে বিধানসভার স্পিকারকেও আক্রমণ করেন ধনখড়। তাঁর অভিযোগ, রাজ্যপালকে ব্ল্যাকআউট করেছেন স্পিকার।
অধ্যক্ষ রাজ্যপালকে অন্ধকারে রেখে কিছু করলে, আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে পারে রাজভবন। এমন ও বলতে সোনা গিয়েছে তাঁকে।

সম্প্রতি কলকাতা পুরভোটের পরে রাজ্যের আরও ৪ পুরসভার ভোট ঘোষণা করে রাজ্য নির্বাচন কমিশন। কিন্তু কলকাতা পুরসভার ভোটের সঙ্গেই ঠিক ছিল হাওড়া পুরসভার ভোট হবে। রাজ্যের তরফে জানান হয়েছিল, হাওড়া-বালি পুরসভা পৃথকীকরণের ফাইল আটকে রেখেছে রাজভবন।
এদিন বিধানসভায় রাজ্যপাল বলেন, তাঁর নামে মিথ্যে তথ্য ছড়ানো হচ্ছে। রাজভবনে কোনও ফাইল আটকে নেই
একইসঙ্গে তিনি বলেন, যে ভাষায় রাজ্য প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাজ্যপালকে চিঠি লেখা হয়, তা অত্যন্ত লজ্জার।
অভিযোগ তোলেন, “রাজ্যপাল হিসেবে জানতে চেয়েছিলাম মা ক্যান্টিনে কত টাকা খরচ? কোনও উত্তর পাইনি, এখানে কি প্রশ্ন করারও অধিকার নেই?”

রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর ও এদিন বাদ যায়নি তার আক্রমণের নিশানা থেকে। ধনখড়ের অভিযোগ, “রাজ্যপালের সম্মতি না নিয়েই ২৫ জন উপাচার্য নিয়োগ হয়েছে। এ ধরনের কাজ দেশের আর কোথাও হয়?  আমি যে প্রশ্নই করি না কেন, কোনও উত্তর দেয় না রাজ্য।”
এমনকি, তৃণমূল কংগ্রেসের বর্ষীয়ান সাংসদ সৌগত রায় সম্পর্কেও অভিযোগ করতে শোনা গেল তাঁকে। তিনি বললেন, “সৌগত রায় আমার সমালোচনা করছেন। সৌগত রায় বলছেন, রাজ্যপাল রোজ ট্যুইট করে মুখ্যমন্ত্রীকে নিশানা করেন।  মনে রাখবেন, সংবিধানের বাইরে গিয়ে আমি কোনও কাজ করি না। রাজ্যপালকে কীভাবে উপেক্ষা করেন মুখ্যমন্ত্রী?
সংবিধানকে রক্ষা করা আমার দায়িত্ব। সৌগত বলেছেন রাজ্যপাল মুখ্যমন্ত্রীকে রোজ মেসেজ পাঠান। আমি বলছি, এরকম কোনও কিছু হয়নি।”

রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে অতীতে বারবার অভিযোগ তোলা হয়েছে রাজ্যপালের ভূমিকা নিয়ে। তৃণমূলের অভিযোগ, রাজ্যপালের আচরণ বিরোধী বিজেপি নেতাদের মত। পাল্টা বিজেপির তরফ থেকে বারংবার সেই অভিযোগ খণ্ডন করা হয়েছে। 
কিন্তু এদিন রাজ্য বিধানসভায় দাঁড়িয়ে রাজ্যপাল যে বক্তব্য রাখলেন, অনুষ্ঠানের সঙ্গে তা কতটা প্রাসঙ্গিক ছিল এই নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনৈতিক মহলে চর্চা শুরু হয়েছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *