আজ খবর ডেস্ক- সুখি পরিবারে যেন অশান্তির কালো মেঘ! গত কয়েকদিন ধরে তৃণমূল কংগ্রেসের অন্দরে টানাপোড়েন তুঙ্গে।
রাজনৈতিক মহলের মতে, সংঘাত শুরু হয়েছিল আদতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য ঘিরে।
গঙ্গাসাগর মেলা সম্পর্কে মমতা বলেছিলেন, মেলা করাই যায় কারণ কোভিড বিধি মেনে চললে সংক্রমণ বাড়বে না। সেই প্রসঙ্গে সাগরের নোনা জলের কথাও বলেছিলেন তিনি। পাল্টা অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য ছিল, রাজ্যজুড়ে করোনা পরিস্থিতি যে জায়গায় পৌঁছেছে সেখানে মেলা অথবা ভোট অন্তত আগামী দু মাস সবকিছু বন্ধ রাখা উচিত।

যদিও এই বক্তব্য রাখার সময় অভিষেক বলেছিলেন পুরোটাই তার ব্যক্তিগত মত, কিন্তু দলের মধ্যে তারপর থেকেই বিভাজন মাথাচাড়া দেয়। ঘাসফুল শিবিরে এই বিভাজনের নেতৃত্বে ছিলেন শ্রীরামপুরের সাংসদ তথা আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়।
কিন্তু পরিস্থিতি ক্রমশ ঘোরানো হয়েছে তার অন্যতম প্রমাণ, একদিকে তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের সতর্কবার্তা আর অন্যদিকে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাই আকাশ ব্যানার্জীর ফেসবুক পোস্ট। যা নিয়ে জল্পনা চরমে পৌঁছেছে যে, তৃণমূল কংগ্রেসে কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় আর কতদিন?

শনিবার ভবানীপুরে কল্যাণের কুশপুতুল পোড়াল তৃণমূল পন্থী একটি সংগঠন।
আর এ বার কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় কে হটানোর দাবি তুললেন আকাশ ব্যানার্জি। তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের ছোট ভাই তিনি। তাঁর সাফ বক্তব্য, ‘শ্রীরামপুর নতুন সাংসদ চায়’। সমাজ মাধ্যমে করা আকাশের এই পোস্ট ঘিরে রাজনৈতিক চাঞ্চল্য চরমে পৌঁছেছে। ফেসবুকে দেখা যাচ্ছে একদিন আগে করা আকাশের এই পোস্ট এখনও পর্যন্ত “পিন পোস্ট” হিসেবে রাখা রয়েছে। অর্থাৎ আকাশ ব্যানার্জীর ফেসবুক প্রোফাইল খুললেই সবার আগে চোখে পড়বে এই পোস্ট।

এই আগুনে আবার ঘি ঢেলেছেন ব্যারাকপুরের বর্তমান বিজেপি সাংসদ প্রাক্তন তৃণমূল নেতা অর্জুন সিং। অর্জুনের দাবি, কল্যাণের হাত দিয়েই নাকি বড় ধ্বস নামতে চলেছে তৃণমূলে।
প্রকাশ্যে কল্যাণকে তীব্র কটাক্ষ করতে দেখা গিয়েছে অভিষেকপন্থীদের। আবার অভিষেককে যে নেতা মানেন না, ঠারেঠোরে তা বুঝিয়ে দিয়েছেন কল্যাণও। প্রথমে শুক্রবার দু’পক্ষকেই সতর্ক করেন তৃণমূল মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়।

শনিবার রাতে কল্যাণকে হটানোর দাবিতে ফেসবুক পোস্ট দিতে দেখা যায় আকাশকে। তাতে তিনি লেখেন, ‘শ্রীরামপুর নতুন সাংসদ চায়’। একই সঙ্গে আকাশ যোগ করেন, ‘নিজেকে উপহাসের পাত্র না করে তুলে, চারপাশের পরিবর্তনকে সহজ ভাবে মেনে নেওয়াই কাম্য’। আকাশের মন্তব্য নিয়ে তৃণমূলের তরফে কোনও সাফাই দেওয়া হয়নি। তবে প্রকাশ্যে কাদা ছোড়াছুড়ি থেকে আগেই সব পক্ষকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়ে তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্য বলেন, দল বিরোধী মন্তব্য বরদাস্ত করা হবে না।
প্রকাশ্যে এ নিয়ে কোনও মন্তব্য না করলেও সূত্রের খবর, তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলের একাধিক নেতার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং প্রত্যেককেই মুখ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে তৃণমূল কংগ্রেস সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদকের সহোদর যেভাবে সমাজ মাধ্যমে পোস্ট করেছেন এবং সেই পোস্ট এখনও পর্যন্ত তার টাইমলাইনে থেকে গিয়েছে তা থেকে স্পষ্ট, শ্রীরামপুরের সাংসদ কে নিয়ে কড়া মনোভাব দেখাতে চাইছে তৃণমূল নেতৃত্ব।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *