আজ খবর ডেস্ক- এ যেন সেই “রোজ কত কী ঘটে যাহা তাহা/ এমন কেন সত্যি হয় না আহা!”
না, মজা নয়। সত্যি সত্যি ঘটল এমন ঘটনা। এই সেদিন, সিপিএমের(CPIM) ছাত্র সংগঠন এসএফআইয়ের(SFI) বিজয় মিছিলের জমায়েতে।কলেজ স্ট্রিটে স্কুল, কলেজ খোলার ঘোষণায় জমায়েত ছিল এই বাম ছাত্র সংগঠনের। সেখানেই “পুষ্পা” হয়ে গেলেন সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক।
সৃজন বললেন, “পুষ্পা, এসএফআই ঝুকেগা নেহি”। সঙ্গে সঙ্গেই ঝোড়ো করতালিতে ভরে গেল চত্বর।
শুধু তাই নয়। আসন্ন বিধাননগর পুরভোটের প্রচারেও এহেন চমক দিচ্ছে সিপিএম। টাইটানিক (Taitanic) থেকে লগন ( lagaan) হয়ে হীরক রাজার দেশে — সব রয়েছে সেই তালিকায়।
আসলে কোভিড আবহে এই বারের পুরভোটে বড় সমাবেশ কিংবা মিছিল করা যাচ্ছে না। তাই সব রাজনৈতিক দলকেই ভার্চুয়াল (vortual) মাধ্যমে প্রচারের ওপর জোর দিতে হচ্ছে। প্রধান ভরসার জায়গা সমাজ মাধ্যম ( social media)।
এই পরিস্থিতিতে সিপিএম অভিনব কায়দায় তাদের প্রচার করছে। সেই প্রচারে তুলে আনা হয়েছে জনপ্রিয় ইংরেজি, বাংলা, দক্ষিণী ও হিন্দি সিনেমার চরিত্রদের। সেই প্রচারে যেমন সামিল করা হয়েছে ‘হীরক রাজার দেশে’র উদয়ন পণ্ডিতকে, তেমনই হাজির করা হয়েছে জনপ্রিয় হিন্দিছবি ‘কেশরী’-র ঈশ্বর সিংহকে। বাদ যাননি দক্ষিণী সুপারস্টার রজনীকান্তও। তাঁর ‘কাবালি’ ছবিকে গ্রাফিক্স ব্যবহার করে ধার নেওয়া হয়েছে ছবির সংলাপও।
এঁরা প্রত্যেকেই নিজের ভোট নিজে দেওয়ার কথা বলছেন। “ভোট লুঠ” রোখার কথাও বলছেন নেটমাধ্যমের এই প্রচারে।
আবার এই মুহুর্তের দেশ জুড়ে তুমুল জনপ্রিয়তা পাওয়া “পুষ্পা” ছবির সংলাপ ব্যবহার করছেন ছাত্র ও যুব নেতারা।
সূত্রের খবর, সিপিএমের ডিজিটাল টিম এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত করেছে।
বিধানসভা ভোটের আগে গত ফেব্রুয়ারির ব্রিগেডের সময় থেকেই ‘টুম্পা’ গানের প্যারোডি করে প্রচার করা হয়েছিল। যা যথেষ্ট পছন্দ করেছিল তরুণ প্রজন্ম।
সেই মতই এ বারের পুরভোটে সিনেমার জনপ্রিয় চরিত্রদের ছবি দিয়ে তাদের সংলাপকে গ্রাফিক্সে ব্যবহার করে পুরভোটের প্রচারে ব্যবহার করা হচ্ছে।
সর্বস্তরের ভোটারদের কথা মাথায় রেখে উৎপল দত্ত থেকে উত্তম কুমার, অমিতাভ বচ্চন থেকে রজনীকান্ত সকলেই আছেন এই প্রচার পুষ্টিকর প্রচ্ছদে। কোনও ক্ষেত্রে গ্রাফিক্স তৈরি করা হয়েছে ইংরেজিতে। কোনওটি আবার বাংলা বা হিন্দিতে।
যেমন উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, ‘লগন’ ছবিতে আমির খান ভুবন নামে এক কৃষকের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।
গ্রামের কৃষক ভুবন নিজের ক্রিকেট দল গড়ে ব্রিটিশদের ক্রিকেট দলকে পরাস্ত করেছিল। সিপিএমের প্রচারে ভুবনের সেই লড়াইয়ের কথা উল্লেখ করে ভোটারদের প্রশ্ন করা হয়েছে, ভুবন ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে ‘লগান’ বন্ধ করার জন্য ক্রিকেট যুদ্ধে নেমেছিল। আপনি কি শাসক দলের অপশাসন, বুথ লুঠ, ছাপ্পা ভোট, কাটমানির বিরুদ্ধে লড়াই করবেন?
আবার নয়ের দশকে তুমুল হিট ইংরেজি ছবি ‘টাইটানিক’ এর অন্তিম দৃশ্য ব্যবহার করে একটি গ্রাফিক্স তৈরি হয়েছে। যেখানে নায়ক জ্যাক তার প্রেমিকা রোজকে বাঁচাতে ঠান্ডা জলে মৃত্যুবরণ করছে। তাতে লেখা হয়েছে, জ্যাক তার শেষ নিঃশ্বাস অবধি নিজের প্রেম রোজের হাত ছাড়েনি। আপনি আপনার প্রিয় শহরের জন্য কি তেমন লড়াই করতে পারবেন? প্রত্যাশিতভাবেই সেখানেও শাসক দলের বিরুদ্ধে একরাশ অভিযোগ করা হয়েছে।
বাংলা সিনেমার মহানায়ক উত্তম কুমারকেও নিজেদের প্রচারে এনেছে সিপিএম। যেমন, উত্তম অভিনীত ‘অগ্নীশ্বর’ ছবির অগ্নীশ্বর রূপী উত্তমের ছবি দিয়ে গ্রাফিক্স বানানো হয়েছে। যেখানে লেখা, ‘অগ্নীশ্বর ডাক্তার যাবতীয় অনিয়ম ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছিলেন আর আর্তের সেবায় নিয়োজিত ছিলেন।’ তার নীচে লেখা হয়েছে, ‘আপনি?’
করোনার সময়ে সিপিএমের রেড ভলান্টিয়ার্স(Red volunteer) ও শ্রমজীবী ক্যান্টিনের মত উদ্যোগের কথা স্মরণ করানো হয়েছে। এই প্রচারেই উঠে এসেছেন, সত্যজিৎ রায়ের ‘আগুন্তুক’ ছবির মনমোহন মিত্র রূপী উৎপল দত্ত। আবার অমিতাভ বচ্চনের ‘কালিয়া’ ছবি-র স্মরণীয় সংলাপ ‘হম জাহা খড়ে হো যাতে হ্যায়, লাইন ওহি সে শুরু হোতি হ্যায়’ ব্যবহার করা হয়েছে।
এহেন প্রচার নিয়ে মানুষের দরজায় পৌঁছনো প্রসঙ্গে দলের তরফে বলা হয়েছে, মানুষের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত হতে হবে। ভারতে সিনেমার চরিত্ররা মানুষের মনে থেকে যায়। নেটমাধ্যমে সেটাই ব্যবহার করতে চাইছে সিপিএম।
অর্থাৎ, “টুম্পা”র মতই “পুষ্পা”কেও ব্যবহার করে তরুণ প্রজন্মের মন জয়ে আগ্রহী বামেরা।