আজ খবর ডেস্ক- ইউক্রেন সীমান্তে রুশ সৈন্য জড়ো হতেই নড়েচড়ে বসে ছিল গোটা বিশ্ব। এরপরেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্টের সামরিক আক্রমণের ঘোষণা আর অন্যদিকে ইউক্রেনের সমর্থনে আমেরিকার মাঠে নেমে পড়া, যার আঁচ কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরের ভারতে ইতিমধ্যেই বেশ বোঝা গিয়েছে।
সবথেকে বেশি অনুভূত হয়েছে ভারতীয় অর্থনীতির ক্ষেত্রে। সবার আগে রেকর্ড ধাক্কা খেয়েছে ভারতের শেয়ার বাজার। এই ধাক্কা সামাল দেওয়ার জন্য তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নেওয়ার চেষ্টা করছে দেশের কেন্দ্রীয় সরকার।
একদিকে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সরাসরি কথা বলেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে। অপরদিকে, বৃহস্পতিবার রাতে জরুরি ভিত্তিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভার বৈঠক হয়। জানা গিয়েছে, একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে সেখানে।
প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দিল্লীতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সভার জরুরি বৈঠক শুরু হয় বৃহস্পতিবার রাত ৯টা নাগাদ।
ভারত সরকার কি আমেরিকার মত ইউক্রেন ও রাশিয়ার এই যুদ্ধে অংশ নেবে ? এহেন জল্পনা ঘিরে কার্যত উত্তাল হয়ে ওঠে দেশের রাজধানী। এমনকি এই বৈঠক শুরু হবার পর দিল্লির রাজনৈতিক মহলে ছড়িয়ে পড়ে যে, রাত ১১টার মধ্যে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
শুরুতেই ঠিক হয়েছিল, মন্ত্রিসভার বৈঠকের পর কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্ত রাতেই রাষ্ট্রপতি রামনাথ কোবিন্দের কাছে অনুমোদনের জন্য যাবে।
এর পরেই যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তা হল:
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সভার সিদ্ধান্ত :
১) রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
২) শেয়ার বাজার কে চাঙ্গা করতে সরকারী পর্যায়ে বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। ৩) আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জ্বালানী তেল ও গ্যাস সঞ্চয় করতে হবে।
৪) দেশের বাইরে খাদ্য সামগ্রী রপ্তানিতে রাশ টানার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
৫) ইউক্রেনে বর্তমানে বসবাসকারী ভারতীয়দের নিরাপদে দেশে ফেরানো হবে।]
৬) দেশের ৩ বাহিনীর সামরিক মহড়া শুরু করতে হবে।
৭) দেশীয় বাজার সরকারের নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে, যাতে ফাটকাবাজ ব্যবসায়ীরা কৃত্রিম অভাব সৃষ্টি করতে না পারে।
৮) বৈদেশিক নাগরিকদের বিশেষ নজরদারিতে রাখা হবে।
৯) কেন্দ্রীয় সরকারের পাশাপাশি রাজ্য সরকার গুলোকেও দেশের নিরাপত্তা রক্ষায় সরাসরি অংশ নেবার আবেদন জানানো হবে।
১০) দেশের গুরুতবপূর্ণ বিমান বন্দর গুলোকে ২৪ ঘণ্টা নিকটবর্তী সেনা ছাউনির নজরদারিতে আনতে হবে।
১১) সেনাবাহিনীতে নতুন করে জওয়ান নিয়োগ করা শুরু করতে হবে।
১২) যত দ্রুত সম্ভব কেন্দ্রে সর্বদলীয় বৈঠক এবং জাতীয় সংসদের যৌথ অধিবেশন ডাকতে হবে।
১৩) পাকিস্থান ও চীন বাদে বাকি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এবং ঐক্যের ভিত্তিতে পৃথক শক্তির সৃষ্টি করা হবে।
১৪) বাজেটের আগেই প্রতিরক্ষা খাতে অতিরিক্ত বরাদ্দ অনুমোদন করা হবে।( সংসদের যৌথ অধিবেশনে প্রস্তাব পাশের ভিত্তিতে ) ।
দেশের অর্থনীতি মহলের আশঙ্কা, ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে চলতে থাকা এই অশান্তির ফলে ভারতে বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে সরাসরি প্রভাব পড়বে। যেমন,
১) ভারতে অপরিশোধিত খনিজ তেলের দাম বাড়তে পারে
২) যেহেতু রাশিয়া-ইউক্রেন দুই দেশেই প্রচুর পরিমাণে গম ও বার্লি চাষ হয় এবং পৃথিবীর অধিকাংশ দেশে তা রপ্তানি করা হয়, ফলে একদিকে বিয়ার আর অন্যদিকে ময়দা জাত পণ্যের দাম বাড়ার সম্ভাবনা।
৩) বাড়তে পারে ভোজ্য তেলে ব্যবহৃত সয়াবিন তেলের দাম।
৪) প্যালাডিয়াম ধাতুর দাম ও বাড়তে পারে। প্রসঙ্গত যাবতীয় ইলেকট্রনিক সামগ্রীতে, বিশেষত মোবাইলফোন তৈরীর ক্ষেত্রে এই ধাতু ব্যবহার করা হয়।
জানা গিয়েছে কেন্দ্রের নির্দেশ পাওয়ার পরেই নবান্নে শুরু হয়েছে তৎপরতা। রাজ্য প্রশাসনের তরফে বিভিন্ন জেলায় যোগাযোগ করে স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ ইউক্রেনে আটকে আছেন কিনা খোঁজ নিতে বলা হয়েছে।
অন্যদিকে, ইউক্রেন থেকে ভারতীয়দের ফেরানোর নতুন উদ্যোগে ৪ দেশের সীমান্তের যোগাযোগ নম্বর দিল ভারতের বিদেশমন্ত্রক।
হাঙ্গেরি, পোল্যান্ড স্লোভাক রিপাবলিক ও রোমানিয়ার সীমান্ত এলাকায় ভারতের বিদেশমন্ত্রকের টিম আগামী ২৪ ঘন্টার মধ্যে পৌঁছে ইউক্রেন থেকে ভারতীয়দের ফেরানোর নতুন উদ্যোগ নিয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে।