আজ খবর ডেস্ক- চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে রাষ্ট্রপতি পদে রামনাথ কোবিন্দের(ramnath kovind) মেয়াদ শেষ হচ্ছে। বস্তুত, ২০২৪ লোকসভা ভোটের আগেই দেশে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন হবে। ফলে ইতিমধ্যেই তৎপরতা শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
একদিকে লোকসভা নির্বাচনের আগে নিজেদের শক্তি প্রদর্শন করতে আগ্রহী বিজেপি। অন্যদিকে ২০২১ থেকেই বিজেপি বিরোধী মঞ্চ তৈরি করতে তৎপর হয়েছিল বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো। এ বছর পরপর বেশ কয়েকটি রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন। ইতিমধ্যেই উত্তর প্রদেশ এবং গোয়াইন নির্বাচন শুরু হয়ে গিয়েছে। রাজনৈতিক সমীকরণ ও খানিকটা বদল হয়েছে। দূরত্ব তৈরি হয়েছে কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে। এই পরিস্থিতিতে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন ঘিরে আর একবার দু’পক্ষই নিজের নিজের শক্তি প্রদর্শনে মরিয়া।

রাজনৈতিক সূত্রে খবর, ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে রণকৌশল নির্দিষ্ট করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে তেলঙ্গানা ও তামিলনাড়ুর দুই মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও এবং এম কে স্ট্যালিনের কথা হয়েছে। তৃণমূল নেত্রীর সঙ্গে কথা হয়েছে এসপি(SP) নেতা অখিলেশ যাদবেরও।
জানা গিয়েছে, আগামী মার্চ মাসে একটি বৈঠকের সম্ভাবনাও তৈরি হয়েছে বিজেপি বিরোধী দলগুলোর মধ্যে। দিল্লি বা দক্ষিণের কোথাও সেই বৈঠকটি হতে পারে। তৃণমূল সূত্রে খবর, মমতার প্রথম পছন্দ চেন্নাই। তবে অন্যদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতেই বৈঠকের স্থান স্থির করা হবে।

পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়ের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্য সরকারের টানাপড়েন চলছে। তা নিয়ে তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে ফোনে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সেই আলোচনাতেই অবিজেপি রাজ্যগুলির মুখ্যমন্ত্রীদের একটি বৈঠক নিয়েও কথা হয়েছে। এ বিষয়ে রাজনৈতিক মহলের ধারণা, এই বৈঠক থেকেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের আগে বিরোধী শিবিরের একটি আকার স্পষ্ট হতে পারে। আলোচনার পরে, মমতার এই আগ্রহের কথা জানিয়ে স্ট্যালিন একটি টুইট করেন। তারপরেই অবশ্য বিষয়টি নিয়ে তীব্র আক্রমণ শুরু করেছে বিজেপি।
এমনকি সোমবার উত্তরপ্রদেশের নির্বাচনী সভায় যেভাবে নরেন্দ্র মোদি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কে কটাক্ষ করেন, এবং রাজ্যের গণতান্ত্রিক পরিস্থিতি নিয়ে নিন্দায় সরব হন সেই বিষয়টিকে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে রাজনৈতিক মহল। তাদের দাবি, সমাজবাদী পার্টির হয়ে প্রচারে অংশ নিলেও তৃণমূল নেত্রী’ আগেই জানিয়ে দিয়েছেন উত্তরপ্রদেশে কোনও আসনে লড়ছে না তৃণমূল। ফলে সেই প্রচারে বিজেপির শীর্ষ নেতৃত্বের তরফে তৃণমূল কংগ্রেসকে আক্রমণ রাজনৈতিকভাবে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ।

লোকসভা নির্বাচনের আগে এই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নরেন্দ্র মোদি-অমিত শাহের কাছে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই এই নির্বাচনকে সামনে রেখে ফের ঐক্যবদ্ধ একটি মঞ্চ গঠনের ভাবনা শুরু হয়েছে বিরোধী শিবিরে। সংসদে বিজেপির(BJP) সংখ্যাগরিষ্ঠতা অটুট থাকলেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের মুখে নতুন করে হিসাব শুরু হয়েছে রাজনৈতিক মহলে।
কারণ সংসদের দুই কক্ষের সাংসদ ও রাজ্যগুলির বিধানসভার সদস্যরা এই নির্বাচনে ভোট দেন। তাঁদের এই ভোটের মূল্য নির্ধারিত হয় রাজ্যের জনসংখ্যার ভিত্তিতে। সেই হিসাব অনুযায়ী, বিজেপির পক্ষে রাষ্ট্রপতি পদে এ বারের লড়াই খুব স্বস্তিদায়ক নাও হতে পারে বলেই ধারণা অনেকের। বিশেষ করে উত্তরপ্রদেশে আগের বারের মত বড় ব্যবধানে জয় নিশ্চিত করতে না পারলে লোকসভা ভোটার আগে বিরোধীদের সক্রিয়তা গুরুতর চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে বিজেপির।
গেরুয়া শিবিরের চিন্তা আরও বাড়িয়েছে সর্বভারতীয় স্তরে তৃণমূল নেত্রীর সক্রিয়তা। বিশেষত দক্ষিণে বিজেপি বিরোধী হাওয়া যথেষ্ট। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক মহল মনে করছে এই মুহূর্তে উদ্ধব ঠাকরের সঙ্গে মমতার সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল। বস্তুত মহারাষ্ট্র শিবসেনা ছাড়া এনসিপির ভূমিকা নিয়েও কিছুটা উদ্বেগ রয়েছে রাজনৈতিক মহলের। একদা কংগ্রেসের বিশ্বস্ত সঙ্গী শরদ পাওয়ার কোন দিকে যাবেন? কংগ্রেস এবং তৃণমূল কংগ্রেস এর মধ্যেও রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের ক্ষেত্রে ঐকমত্যে পৌঁছন সম্ভব হবে কিনা এইসব বিবিধ সমীকরণ নিয়ে আপাতত চাপের রাজনীতি ( pressure politics) চলছে সর্বভারতীয় স্তরে। সেখানে নিঃসন্দেহে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *