আজ খবর ডেস্ক: জেলায় জেলায় বিক্ষোভ কমার কোনও চিহ্ন নেই। দলীয় পতাকা কাঁধে নিয়েই পুরভোটের প্রার্থী তালিকা বাতিলের দাবিতে দলের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিচ্ছেন তৃণমূল কর্মীরা।
এমনকি, মদন মিত্রের মত সিনিয়র নেতা তথা বিধায়করা ও বিক্ষুব্ধ কর্মীদের পাশে দাঁড়িয়ে তৃণমূল নেতৃত্বকে চিঠি দেওয়ার কথা বলছেন।
প্রার্থী তালিকা প্রকাশের আগে তাঁকেও খসড়া দেখানো হয়নি, এই অভিযোগ তুলেছেন খোদ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমনকি, দলের তরফে বারবার “গোষ্ঠী কোন্দল” বরদাশ্ত করা হবে না এহেন বার্তা দেওয়া হলেও, জেলায় জেলায় নেতাদের এই আন্দোলন কর্মসূচি থামানোর ব্যাপারে এখনও সেভাবে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি শীর্ষ নেতৃত্বকে।

জানা গিয়েছে, পুরভোটের প্রাথমিক প্রার্থী তালিকা তৈরির দায়িত্ব প্রধানত তৃণমূলের রাজ্য সভাপতি সুব্রত বক্সী ও মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উপরে দিয়েছিলেন তৃণমূলনেত্রী।
বিভিন্ন জেলা থেকে তাঁদের কাছে তালিকা জমা পড়েছিল। পাশাপাশি, দলের পরামর্শদাতা সংস্থা আইপ্যাকের( i pac) কাছ থেকেও তালিকা আসে। মূলত, মমতার নির্দেশেই, দুই তালিকার মধ্যে সমন্বয় সাধন করে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি হবে বলে ঠিক হয়।

স্থির হয়, চূড়ান্ত তালিকা ঘোষণার আগে তৃণমূলনেত্রী নিজে তা দেখবেন।


সেই মত আইপ্যাকের সঙ্গে কথা বলে বক্সী ও পার্থ যে তালিকা তৈরি করেন, সেটি কম্পিউটারে তুলে মমতার কাছে পাঠানোর দায়িত্ব দেওয়া হয় আইপ্যাক-কর্তাদেরই। কথা ছিল ২ ফেব্রুয়ারি রাতের মধ্যে তালিকা মমতার কাছে পৌঁছে যাবে। কিন্তু ৩ তারিখ দুপুরে খোঁজ করে তৃণমূলের সংশ্লিষ্ট নেতারা জানতে পারেন, তালিকা কালীঘাটে পৌঁছয়নি। তার পর শুরু হয় বার বার তাগাদা। অভিযোগ, তাতেও লাভ হয় নি।শুক্রবার দুপুর পর্যন্ত মমতা তালিকা হাতে পাননি।
ঘোষণার আগে পুরভোটে দলের প্রার্থী তালিকা দেখবেন বলে একটা গোটা দিন অপেক্ষা করে বসেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার পরেও শুক্রবার প্রথম যে তালিকাটি প্রকাশিত হয়েছিল, তা তৃণমূলনেত্রীর কাছে পাঠানোই হয়নি। ঠিক কী কারণে স্বয়ং তৃণমূলনেত্রীকে কার্যত অন্ধকারে রেখে এমন কাজ করা হল, তা নিয়ে আলোড়ন তৈরি হয়েছে শাসকদলের শীর্ষ নেতৃত্বে।

সূত্রের খবর, এই ব্যাপারে দলীয় নেতৃত্বের প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছে দলের পরামর্শদাতা সংস্থা আইপ্যাকের কর্তাদেরও। যেহেতু গত কয়েক বছর ধরে তৃণমূলের প্রচারের বিষয়টি আইপ্যাকের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, সে কারণে প্রকাশিত তালিকার দায়িত্ব আইপ্যাকের
বলেই মনে করছেন দলীয় নেতৃত্বের একাংশ। যদিও আইপ্যাক সেই ‘দায়’ ইতিমধ্যেই অস্বীকার করেছে।
কালীঘাট সূত্রে খবর, এই পরিস্থিতিতে তৃণমূলনেত্রী বক্সী ও পার্থ কে সাংবাদিক বৈঠক ডেকে তালিকা প্রকাশ করে দিতে বলেন।
সেই মত শুক্রবার বিকেলে সাংবাদিক বৈঠক হয়। আর তখনই দেখা যায়, তৃণমূলের অফিশিয়াল মাধ্যমে একটি তালিকা প্রকাশিত হয়েছে, যার সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় তৈরি তালিকার বেশ কিছু ফারাক রয়েছে। প্রকাশিত তালিকায় নেতাদের কোনও স্বাক্ষর নেই।
পরিস্থিতি আরও ঘোরালো হয়ে ওঠে। বক্সী ছাড়াও দলের তিন নেতা ফিরহাদ হাকিম, চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য এবং অরূপ বিশ্বাসের উপস্থিতিতে বিষয়টি নিয়ে মমতার সঙ্গে কথা বলেন পার্থ।


তার পরেই ফোনে কথা বলেন প্রশান্ত কিশোরের সঙ্গে। পার্থ এবং বক্সী উভয়েই পিকে’র কাছে জানতে চান, তৃণমূলের ‘অফিশিয়াল পেজে’ এরকম একটি তালিকা কেন বেরলো? জানা গিয়েছে, উভয় তরফে কিছুটা বাদানুবাদও হয়। তখনই বলা হয়, তৃণমূলের ‘অফিশিয়াল পেজে’র দায়িত্ব আইপ্যাকের নয়। এক সময় আইপ্যাক পরামর্শদাতার কাজ থেকে ‘সরে আসতে পারে’ বলেও কথা ওঠে। সূত্রের খবর, বক্সী- পার্থ তখন পাল্টা বলেন, ‘এ সব কথা তাঁদের শুনিয়ে লাভ নেই। সে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন মমতা।’ সেই সঙ্গে আইপ্যাক- কর্তাকে এও জানিয়ে দেওয়া হয়, ‘তৃণমূলে এ কাজ অকল্পনীয়। আরও অনেকেই আছেন। তবে মমতাই এই দলের নেত্রী। তাঁকে না জানিয়ে এই রকম গুরুত্বপূর্ণ কাজ আগে কখনও কেউ করেনি।’ এর পরেই সংবাদমাধ্যমে পার্থবাবু জানিয়ে দেন, ‘সঠিক’ তালিকা জেলাগুলিতে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।’

যদিও শনিবার রাত পর্যন্ত তৃণমূলের ‘অফিশিয়াল পেজে’ প্রকাশিত আগের ‘বিতর্কিত’ তালিকাটি বহাল রয়েছে। সেটি সরিয়ে নেওয়া হয়নি। দলের ‘অফিশিয়াল পেজে’ প্রথম প্রকাশিত তালিকা নিয়ে বিভিন্ন জেলায় বিক্ষোভও তাই থামেনি।
এমনকি, কাঁথিতে অখিল গিরির মত অন্যান্য বহু জেলায় স্থানীয় সিনিয়র নেতারা এই তালিকা কে মান্যতা না দিয়ে সরে দাঁড়াতে চাইছেন।

ভারপ্রাপ্ত দুই নেতা বক্সী ও পার্থর স্বাক্ষরিত তালিকা নিয়েও শনিবার উত্তর থেকে দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় বিক্ষোভ, অবরোধ হয়েছে। একটি জায়গায় পুলিশকে লাঠি চালিয়ে বিক্ষোভকারীদের হঠাতে হয়েছে। পছন্দের নেতা প্রার্থী হতে না পারায় উত্তর ২৪ পরগনার কামারহাটিতে একটি বাস, অটোরুট এবং স্থানীয় জুটমিলও বন্ধ করে দিয়েছে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন।


এ দিন অবশ্য এ সব নিয়ে তৃণমূলের কোনও প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বক্সী ও
পার্থের স্বাক্ষরিত তালিকায়ও আরও কয়েকটি রদবদলের সম্ভাবনা রয়েছে বলে দলের একটি সূত্র জানাচ্ছে। যদিও তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশের দাবি, অচিরেই এই ছন্নছাড়া ভাব কেটে গিয়ে “এক” হয়ে প্রচারে নামবেন দলের নেতারা।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *