আজ খবর ডেস্ক- ইরম চানু শর্মিলার (Irom Chanu Sharmila) নাম আজ কমবেশি সকলেই জানে। তাঁর দীর্ঘ অহিংস আন্দোলন এবং অনশন হয়তো এতদিনে সফল হল।

এএফএসপিএ (AFSPA) অর্থাৎ বিশেষ সুরক্ষা আইন আসাম, মণিপুর এবং নাগাল্যান্ডের বেশিরভাগ এলাকা থেকে আগামীকাল প্রত্যাহার করা হবে। এমনটাই জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, অমিত শাহ। তিনি বলেন, দ্রুত উন্নয়নের কারণে উত্তর-পূর্বে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এই কারণে তিনটি রাজ্যের বেশিরভাগ এলাকা থেকে এএফএসপিএ আইন তুলে নেওয়া হচ্ছে।

এর জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ (Amit Shah) লিখেছেন যে, আমাদের উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলির উন্নয়ন কয়েক দশক ধরে প্রত্যাশিত ছিল, কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির কারণে এই অঞ্চলটি এখন উন্নয়ন, সমৃদ্ধি এবং শান্তির একটি নতুন যুগের সাক্ষী হতে চলেছে।

জম্মু ও কাশ্মীর এবং উত্তর-পূর্বের বেশিরভাগ এলাকায় এএফএসপিএ আইন বলবৎ রয়েছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের একজন মুখপাত্র অবশ্য বলেছেন, এই সিদ্ধান্তের অর্থ এই নয় যে তিনটি সন্ত্রাস-আক্রান্ত রাজ্য থেকে এএফএসপিএ সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করা হয়েছে ।

তিনটি রাজ্যের কিছু অঞ্চলে এটি কার্যকর থাকবে। একের পর এক টুইট বার্তায় শাহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে ভারত সরকার কয়েক দশক পর নাগাল্যান্ড, আসাম এবং মণিপুরে এএফএসপিএ-এর আওতায় এলাকাগুলি কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এর মানে হল, এই রাজ্যগুলিতে এএফএসপিএ আইন এখন অল্প কিছু জায়গায় সীমাবদ্ধ থাকবে। অধিকাংশ এলাকা থেকে এই আইন তুলে নেওয়া হবে।

কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক বছর ধরে উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলিতে সন্ত্রাসবাদের ঘটনা ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। ২০১৪ সালের তুলনায় ২০২১ সালে সন্ত্রাসের ঘটনা ৭৪ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এ ছাড়া নিরাপত্তা কর্মী ও অসামরিক নাগরিকদের মৃত্যু যথাক্রমে ৬০ শতাংশ ও ৮৪ শতাংশ হারে হ্রাস পেয়েছে। সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত কয়েক বছরে সাত হাজার জঙ্গি আত্মসমর্পণ করেছে।

নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতির পর, মোদি সরকার ইতিমধ্যেই বহু এলাকা থেকে এএফএসপিএ আইন সরিয়ে নিয়েছে। নিরাপত্তা-সম্পর্কিত পর্যালোচনার পরে ২০১৫ সালে ত্রিপুরা এবং ২০১৮ সালে মেঘালয় থেকে এএফএসপিএ সম্পূর্ণ প্রত্যাহার করা হয়েছিল।

আগামীকাল থেকে আসামের ২৩টি জেলায় এএফএসপিএ সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হয়ে যাবে। এএফএসপিএ শুধুমাত্র একটি জেলায় আংশিকভাবে কার্যকর করা হবে। এই পরিপ্রেক্ষিতে টুইটারে আসামের মুখ্যমন্ত্রী হিমন্ত বিশ্ব শর্মা বলেন, “এই পদক্ষেপ ‘আসামের ভবিষ্যতে একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে’। এটি রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার উল্লেখযোগ্য উন্নতির একটি সাক্ষ্য। আমি আসামের জনগণকেও অভিনন্দন জানাই, যারা শান্তিতে বিশ্বাসী। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দূরদর্শী নেতৃত্বের কারণে, এই অঞ্চলটি ভারতের উন্নতির নতুন ইঞ্জিন হয়ে উঠতে প্রস্তুত।”

একইভাবে, ১লা এপ্রিল, ২০২২ থেকে মণিপুরের ৬টি জেলার ১৫টি থানায় কোনও এএফএসপিএ থাকবে না। সিদ্ধান্তটিকে ‘ঐতিহাসিক’ বলে অভিহিত করে মণিপুরের মুখ্যমন্ত্রী এন বীরেন সিং । তিনি বলেন ,” এটি উত্তর-পূর্বে প্রধানমন্ত্রী মোদীর গৃহীত বিভিন্ন উদ্যোগের অধীনে ‘শক্তিশালী উন্নয়ন এবং উন্নত নিরাপত্তা পরিস্থিতি’র ফল। সিদ্ধান্তটির মাধ্যমে মণিপুর আবারও শান্তি, সমৃদ্ধি এবং উন্নয়নের একটি নতুন যুগের দিকে যাত্রা করবে।” মুখ্যমন্ত্রী সিং টুইটারে অমিত শাহকেও ধন্যবাদ জানিয়েছেন।

অরুণাচলে এখন এএফএসপিএ শুধুমাত্র ৩টি জেলায় এবং একটি জেলার ২টি থানায় সম্পূর্ণভাবে চলে গেছে।

এএফএসপিএ নাগাল্যান্ডে ১৯৯৫ সাল থেকে বলবৎ রয়েছে। কিন্তু ১লা এপ্রিল, ২০২২ থেকে এখানকার ৭টি জেলার ১৫টি থানা থেকে এএফএসপিএ সরিয়ে নেওয়া হবে। এ বিষয়ে নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী নেফিউ রিওও যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের জন্য প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং শাহকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, উত্তর-পূর্বাঞ্চলে নিরাপত্তা, সমৃদ্ধি এবং স্থিতিশীলতা আনার দিকে এই পদক্ষেপ একটি ‘উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন’।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *