আজ খবর ডেস্ক- প্রাক্তন এক সিপিএম সাংসদ, অধুনা অন্যদলের নেতা একসময় ঘনিষ্ঠ মহলে বলতেন “আমাদের দলে নিজেদের মধ্যে যে লড়াই করতে হয়, অন্য দলের বিরুদ্ধে তা করতে হয় না”।
সিপিএমের উত্তর ২৪পরগণা জেলা সম্মেলন ঘিরে যেন সেই পুরোনো ছবি। ৩ দিন ধরে নৈহাটিতে সম্মেলন চলার পরেও ঠিক করা যায় নি জেলা কমিটি। আর রবিবার বারাসতে ভোটাভুটি করে প্যানেল যদিও বা হল, জেলা সম্পাদক সহ অন্যান্য পদের নির্বাচন করা গেল না।
এদিকে মঙ্গলবার অর্থাৎ ১৫ তারিখ থেকে শুরু হচ্ছে দলের রাজ্য সম্মেলন। চলবে ১৭ই মার্চ পর্যন্ত। তার আগে আজ, সোমবার আলিমুদ্দিনে ফের বসছে এই সংক্রান্ত বৈঠক। “যেভাবেই হোক, আজকের মধ্যে এই ঝামেলা মিটিয়ে ফেলতে হবে” বলছেন জেলার এক নেতা।
এখন প্রশ্ন হল, মেটাতে হবে কিন্তু মিটবে কী করে? রবিবার দলের তরফে বারাসতে সারাদিন ধরে ভোটাভুটি পরিচালনা করেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য এবং গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতির নেত্রী কনীনিকা ঘোষ বোস। কার্যত নজিরবিহীন ভাবে সেই ভোটাভুটির গণনা শেষ হয় সোমবার ঊষালগ্নে। অথচ মেলেনি সমাধান।
কে হবেন জেলা সম্পাদক? অন্যান্য পদাধিকারীই বা কাদের করা হবে? সেই সিদ্ধান্ত নিতে সোমবার দুপুরে আলিমুদ্দিন স্ট্রীটে দলীয় দপ্তরে ফের বসবেন নেতৃত্ব।
জেলা জুড়ে প্রশ্ন উঠেছে, কেন এই বিড়ম্বনা? তা সামাল দিতেই বা কেন ব্যর্থ সিনিয়র নেতারা?
এমনিতেই সম্মেলনের শুরুতে বিতর্কে জড়িয়েছিলেন সিটু( CITU) রাজ্য সভাপতি সুভাষ মুখার্জি ( Subhas Mukherjee)। বর্ষীয়ান গণসংগীত শিল্পী শুভেন্দু মাইতি ( Subhendu Maity) কে অকারণ অপমান করা নিয়ে বিস্তর জল ঘোলা হয়। পরে, যেভাবেই হোক সেই সমস্যা মিটিয়ে নেওয়া হয় রাজ্য সিপিএমের পক্ষ থেকে।
ভোটাভুটি পর্বে শুরু হয় আরেক সমস্যা। বিদায়ী কমিটির প্যানেলে থাকা যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের এক অধ্যাপক কে ঘিরে বিতর্ক আগে থেকেই ছিল। প্রীতি কুমার রায় নামে গণিতের এই অধ্যাপকের বিরুদ্ধে বছর কয়েক আগে তাঁরই এক ছাত্রী শ্লীলতাহানি এবং যৌন নিগ্রহের অভিযোগ এনেছিলেন।
দলের অফিসিয়াল প্যানেলে এই অধ্যাপকের নাম থাকাকে কেন্দ্র করে সম্মেলনের ডেলিগেটদের মধ্যে আগেই আপত্তি উঠেছিল। ভোটাভুটির পরে দেখা যায়, তিনি পরাস্ত হয়েছেন।
সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, প্রাক্তন মন্ত্রী তথা এক সময়ের দাপুটে নেতা গৌতম দেব( Gautam Deb) ভোটাভুটির নিরিখে রয়েছেন ৫১ তম স্থানে।
আবার আলিমুদ্দিনের পক্ষ থেকে যে অফিসিয়াল প্যানেল তৈরি করা হয়েছিল, তার বিরুদ্ধে ১৪ জন ভোটে দাঁড়ান। জেতেন ২ জন। অভ্র দে এবং অতনু মন্ডল। দলের তৈরি প্যানেল থেকে হেরেছেন ওই বিতর্কিত অধ্যাপক ছাড়াও শক্তি মুখার্জি।
এমনিতেই উত্তর ২৪ পরগণা বড় জেলা, বড় সংগঠন। বিতর্কে থাকা নেতাদের সংখ্যাও কম নয়। তড়িৎ তোপদার গোষ্ঠী, গৌতম দেব গোষ্ঠী, তন্ময় ভট্টাচার্য গোষ্ঠী, এছাড়াও প্রাক্তন বিধায়ক মানস মুখার্জি থেকে অতীতে বহিস্কৃত নেপাল দেব ভট্টাচার্য, প্রাক্তন এসএফআই (SFI) নেতা সোমনাথ ভট্টাচার্য থেকে হালফিলের গার্গী চ্যাটার্জী। উত্তর ২৪পরগণা ঘিরে সমস্যা ছিলই আলিমুদ্দিনের অন্দরে।
সোমবার দুপুরের মধ্যে জেলা সম্পাদকের পদ থেকে কোষাধ্যক্ষ, প্রচার মাধ্যমের দায়িত্ব সহ একাধিক অফিশিয়াল পদের নাম ঠিক করতে হবে। দলের অন্দরে প্রশ্ন এবার কি জেলা সম্পাদকের পদ কে পাবেন তা নিয়েও ভোটাভুটিতে যেতে হবে?
এমনিতেই এর আগে হয়ে যাওয়া কলকাতা জেলা কমিটির অফিশিয়াল প্যানেল নির্বাচন ঘিরে দলের অন্দরে যথেষ্ট জল ঘোলা হয়েছে। একসময় কলকাতা পুরসভার প্রশাসনিক দায়িত্বে থাকা একাধিক নাম যারা এখন আর সেভাবে কোনও কর্মসূচিতেই সামনের সারিতে থাকেন না, তাঁদের অন্তর্ভুক্তি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। প্রশ্ন উঠেছে, তুলনায় তরুণ ছাত্র যুব মুখকে সামনে আনার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হলেও আদতে জেলা কমিটির প্যানেলে সেভাবে কেন রাস্তায় থাকা তরুণ মুখদের সামনে আনা হয়নি।
মঙ্গলবার থেকে শুরু হওয়া সিপিএমের রাজ্য সম্মেলনেও যে এই বিষয়গুলো উঠবে তা নিয়ে একপ্রকার নিশ্চিত দলের বহু নেতা।