আজ খবর ডেস্ক- সুভাষ মুখার্জি, সিপিএমের শ্রমিক সংগঠন সিটু’র (CITU) রাজ্য সভাপতি। মঙ্গলবার উত্তর ২৪ পরগণা জেলা সিপিএমের রাজ্য সম্মেলন চলাকালীন প্রবীণ গণসংগীত শিল্পী শুভেন্দু মাইতিকে ( সubhendu Maity) প্রকাশ্যে চরম অপমান করেছিলেন।
নিজের অভিজ্ঞতার কথা সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছিলেন ক্যান্সার আক্রান্ত প্রবীণ এই শিল্পী। মঙ্গলবার রাত থেকেই যা নিয়ে রীতিমত তোলপাড় ফেসবুক(facebook)।
কিন্তু বারবার ঔদ্ধত্যের অভিযোগ ওঠা সিপিএমের কতিপয় নেতা যে এতকিছুর পরেও নিজেদের চরিত্র বদলাননি, তার অন্যতম নজির সুভাষ মুখার্জি নিজেই। দলের অন্দরে ও যখন তাঁর আচরণ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় কড়া সমালোচনা হচ্ছে করছেন বহু পার্টি কর্মী, তখন নিরুত্তাপ সুভাষ বাবু সংবাদমাধ্যমকে জানান “ওতে কিছু যায় আসে না”।
প্রসঙ্গত, চলতি সপ্তাহের সোমবার থেকে উত্তর ২৪ পরগণা জেলা সিপিএমের সম্মেলন চলছে নৈহাটির ঐকতান হলে। মঙ্গলবার সকালে সেখানে যান প্রবীণ সংগীতশিল্পী শুভেন্দু মাইতি।
অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির মেদিনীপুর জেলার নেতা ছিলেন শুভেন্দু মাইতি। শুধু রাজ্য কেন, গণসংগীত শিল্পী হিসেবে তাঁর খ্যাতি দেশ জোড়া।
এখন পার্টি সদস্য না থাকলেও পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হতে পারে এই ভেবে মঙ্গলবার নৈহাটি সম্মেলন মঞ্চে পৌঁছন তিনি। পরে শুভেন্দু বাবু জানিয়েছেন, উত্তর ২৪ পরগণা জেলা সিপিএমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নেতা নেপাল দেব ভট্টাচার্য তাঁকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন অন্তত একটি গান শোনানোর জন্য।
নাম ঘোষণা হওয়ার পর মঞ্চে উঠে হারমোনিয়ামের খোঁজ করেন শুভেন্দু বাবু। বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর জানতে পারেন সম্মেলন মঞ্চে হারমোনিয়াম নেই এবং সোমবার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিনা হারমোনিয়ামে গান গেয়েছেন সংগীতশিল্পীরা। গান গাইতে গেলে অন্তত একটি হারমোনিয়ামের ব্যবস্থা থাকা উচিত, মঞ্চে দাঁড়িয়ে এই মন্তব্য করার পরেই তেড়ে-ফুঁড়ে এগিয়ে আসেন সিটু’র রাজ্য সভাপতি সুভাষ মুখার্জি। মাইকের সামনে দাঁড়িয়ে প্রবীণ এই সংগীত শিল্পীর নাম করে সুভাষ বাবু বলেন, “আপনাকে গান গাইতে বলা হয়েছে, গান করুন”।
সুভাষ মুখার্জি রুক্ষতায় হতবাক শুভেন্দু মাইতি গান না গেয়ে একটি কবিতা পাঠ করে মঞ্চ থেকে নেমে আসেন। অনুষ্ঠানস্থল ছেড়ে বেরিয়ে যাবার সময় সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্রের সঙ্গে দেখা হলে শুভেন্দু মাইতি বলেন, কেউ ডাকেনি তবু তিনি এসেছিলেন পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে দেখা হবে বলে। এদিন যা ঘটল তার পরে কেউ ডাকলেও তিনি আর আসবেন না।
রাতে ফেসবুকে নিজের পেজে গোটা ঘটনাটি পোস্ট করেন শুভেন্দু মাইতি। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত সেই পোস্টে কমেন্ট করেছেন ২৩৪ জন। সেখানে রয়েছেন আশুতোষ কলেজের অধ্যাপক থেকে বর্তমান পার্টিকর্মী, অনেকেই। এই পোস্ট শেয়ার করেছেন এখনও পর্যন্ত ৭৭ জন। নিজেদের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ৪২১ জন।
কিন্তু এত কিছুর পরেও কিছু সিপিএম নেতা যে নিজেদের বদলান নি, তা স্পষ্ট হয়েছে সুভাষ মুখার্জি’র পাল্টা মন্তব্যে।
বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে এদিন সুভাষ মুখার্জি বলেন, শুভেন্দু মাইতি কে কেউ আমন্ত্রণ জানায়নি। উনি স্বেচ্ছায় এসেছিলেন। দলের পক্ষ থেকেই ওনাকে অনুরোধ করা হয় একটি গান গাওয়ার জন্য। কিন্তু মঞ্চে উঠে ইউনি কেন হারমোনিয়াম নেই, কেন শিল্পীদের অবজ্ঞা করা হচ্ছে ইত্যাদি নানা বিষয়ে সমালোচনা করতে থাকেন। সেই নিয়ে তাঁকে সতর্ক করে বলা হয় সময় কম, নির্দিষ্ট প্রোগ্রাম আছে, ইউনি যেন গান করেন। এরপরেই একটি কবিতা পাঠ করে শুভেন্দু মাইতি নেমে যান।
একথা আলিমুদ্দিনের অন্দরে অনেকেই জানেন, একসময় ডাকাবুকো অটো ইউনিয়নের নেতা তথা বর্তমান সিটু রাজ্য সভাপতি সুভাষ মুখার্জির বিরুদ্ধে অতীতেও একাধিকবার দুর্ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে।
বস্তুত, ২০১১ সালে রাজ্যে ক্ষমতার বদনের পরে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বামেদের আচরণের সমালোচনা হয়েছে। অভিযোগ উঠেছে এক সময়ের বহু পার্টিকর্মী মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন দলের নেতাদের উদ্ধত্যপূর্ণ আচরণের জন্য। এই ঘটনার পরে তাই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠেছে, কবে শুধরাবেন এই সব নেতারা?