আজ খবর ডেস্ক- রাজ্য বিধানসভার বাজেট অধিবেশন ঘিরে চরম বিশৃঙ্খলা। ওয়েলে নেমে বিজেপি বিধায়কদের তাণ্ডব। ফলে “প্রোটোকল” মেনে পুরো ভাষণ না দিয়েই বেরিয়ে গেলেন রাজ্যপাল।

সোমবার থেকে শুরু হল চলতি বাজেট অধিবেশন। পরম্পরা মেনে রাজ্যের তৈরি করা ভাষণ পথ করেন রাজ্যপাল।
তাঁর ভাষণ দিয়েই রাজ্য বিধানসভার যে কোনও অধিবেশন শুরু হয়।
সোমবার শুরুতেই সরগরম ছিল বিধানসভা। কাগজ ছুঁড়ে, ওয়েলে নেমে চিৎকার করে পুরভোট নিয়ে বিক্ষোভ দেখতে থাকেন বিজেপি বিধায়করা। এই অশান্ত পরিস্থিতিতে ভাষণ দিতে অস্বীকার করেন খোদ রাজ্যপালও।
বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর নেতৃত্বে বিজেপি বিধায়করা লাগাতার প্রতিবাদ চালিয়ে যেতে থাকে। একসময় বিধানসভার অধিবেশন সম্পন্ন করা যাবে কিনা, কার্যত তাই নিয়ে প্রশ্ন উঠে যায়।

দুপুর ২টো নাগাদ জগদীপ ধনখড়, উদ্বোধনী ভাষণ দিতে বিধানসভায় আসেন।

রাজ্যপাল বিজেপি বিধায়কদের অধিবেশনের শুরু করতে দেওয়ার অনুরোধ করেন কয়েকবার। কিন্তু পাল্টা তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে অভিযোগ তোলা হয়, বিজেপিকে ওয়াক আউট করার পরামর্শ দেন রাজ্যপাল। যাতে এই অধিবেশন ভেস্তে যায়।

এমনকি, তৃণমূলের তরফে এই অভিযোগ ও তোলা হয় যে, বিধানসভার অন্দরে রাজ্যপালের আচরণ দেখে নাকি মনে হচ্ছিল, তিনি বিজেপির প্রতিনিধি। স্বয়ং রাজ্যের পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় পরে সংবাদ মাধ্যমের কাছে এই অভিযোগ করেন।

রাজ্যপাল বিধানসভা কক্ষ ছেড়ে বেরিয়ে যেতে চান। তখন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ শাসক দলের বেশ কয়েকজন বিধায়ক তাঁকে সংক্ষিপ্ত আকারে হলেও ভাষণ দেওয়ার অনুরোধ জানান। কারণ, নিয়ম মত, ভাষণ না দিয়ে রাজ্যপাল বেরিয়ে গেলে সাংবিধানিক সমস্যা তৈরি হতো এই বাজেট অধিবেশন ঘিরে।
শেষ পর্যন্ত রাজ্যপাল আনুষ্ঠানিকভাবে মাত্র ১ লাইনে ভাষণ পেশ করে বিধানসভা ত্যাগ করেন। প্রায়
এক ঘণ্টার হট্টগোলের পর আবার শুরু হয় অধিবেশন।

মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য বিধানসভার অধ্যক্ষকে সঙ্গে নিয়ে রাজ্যপালকে বিদায় জানাতে হাউস থেকে বেরিয়ে আসেন। বিধানসভার বাইরে মিডিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “বিরোধীরা গণতন্ত্রকে হত্যা করার চেষ্টা করেছে কারণ যা ঘটেছে তা নজিরবিহীন।” তিনি বিজেপি বিধায়কদের বিক্ষোভকে ‘গণতন্ত্রের জন্য লজ্জা’ বলে অভিহিত করেন।

মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন “বিজেপি আজ বাংলার বিধানসভায় যা করেছে তা গণতন্ত্রের জন্য লজ্জাজনক। আমরা রাজ্যপালকে তাঁর বক্তৃতার অন্তত একটি লাইন পড়ে হাউসে শুরু করার জন্য অনুরোধ করেছি, তিনি আমাদের অনুরোধ রেখেছেন,”। মমতা আরও জানান “বিজেপি একটি সাংবিধানিক সংকট তৈরি করতে চেয়েছিল,”। মুখ্যমন্ত্রী পরে রাজ্যপালকে “ধন্যবাদ” জানাতে রাজভবনের উদ্দেশ্যে বিধানসভা ত্যাগ করেন।

তবে, ধনখড়ের আচরণ নিয়ে ক্ষোভ জানাতে ছাড়েন নি মমতা। তিনি বলেন , “এই প্রথমবার এমন দেখলাম। জানি না, রাজ্যপালের ওপর কোনও চাপ ছিল কিনা। কিন্তু তিনি বারবারই অধিবেশন কক্ষ থেকে বেরিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। আমাদের বিধায়করা অনুরোধ করলে উনি এক লাইন পড়লেন। আমি সে জন্য ধন্যবাদ দিচ্ছি তাঁকে। বিজেপি ইচ্ছাকৃতভাবে এটা করল। এটা খুবই আনফরচুনেট। যাঁরা নিজের ওয়ার্ডে হেরে যান, তাঁরাই এসব করছেন। আজ উনি বাজেট না পড়ে চলে গেলে তা সাংবিধানিক সঙ্কট হতো। কিছু একটা প্রেশার ছিল ওঁর ওপর। রাজ্যপাল ভাষণ না দিলে বাজেট সেশন শুরু করা যেত না।”

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *