আজ খবর ডেস্ক– সকালে মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠির মাধ্যমে কড়া বার্তা দিয়েছেন। সেই চিঠি আবার সমাজ মাধ্যমে প্রকাশ ও করেছেন রাজ্যপাল। কিন্তু তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা হল, দুপুরের আগেই দার্জিলিংয়ের( Darjeeling) রাজভবন ছেড়ে সস্ত্রীক বেরিয়ে পড়েছেন তিনি। অন্তত এমনটাই খবর পাওয়া যাচ্ছে দার্জিলিং থেকে। প্রসঙ্গত গ্রীষ্মকালীন অবকাশ যাপনের উদ্দেশ্যে দিন কয়েক আগেই সস্ত্রীক দার্জিলিঙে পৌঁছন জগদীপ ধনখড় ( Jagdeep Dhankhar)। রামপুরহাটের বাগটুই গ্রামের ঘটনার পর বুধবার সকালে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্দেশ্যে কড়া চিঠি লেখেন রাজ্যপাল।
আর তার অব্যবহিত পরেই রাজভবন ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে দেখা যায় তাঁকে। যদিও বেরোনোর সময় উপস্থিত সাংবাদিকদের সামনে কোনও মন্তব্য করেননি রাজ্যপাল। সকাল ১১.৫০ নাগাদ রাজভবন থেকে তিনি যখন বেরিয়ে পড়েন, সেখানে উপস্থিত সাংবাদিকরা তাকে বারংবার প্রশ্ন করেছিলেন তিনি কলকাতা ফিরে যাচ্ছেন কিনা? সূত্র মারফত খবর, এমনও হতে পারে রামপুরহাটের ঘটনায় যেহেতু কেন্দ্রীয় দল আসছে রাজ্যে তাই শহরে ফিরছেন রাজ্যপাল।

ইতিমধ্যেই রামপুরহাট গণহত্যা কান্ডে ১৯ জন ও ভাদু শেখ খুনের ঘটনায় ১ জন মিলিয়ে মোট ২০ জন কে গ্রেপ্তার করে রামপুরহাট আদালতে হাজির করেছে পুলিশ।
এদিন সকাল ১০.৩০ নাগাদ রামপুরহাটের বাগটুইয়ে অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত্যুর ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পাল্টা চিঠি দিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। জানালেন, এমন ঘটনার পর তিনি চুপ থাকতে পারেন না।
প্রসঙ্গত গতকাল বিধানসভার অধিবেশন ওয়াকআউট করে বিজেপি বিধায়কদের নিয়ে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী রাজভবনে যান। রাজ্যপাল কলকাতায় না থাকায় রাজভবনের গেটের সামনে থেকেই ভিডিও কনফারেন্সে রাজ্যপালের সঙ্গে কথা বলে বিজেপির বিধায়ক দল। তারপরেই এদিন সকালে প্রথমে মুখ্যমন্ত্রী কে কড়া জবাব আর তারপরে দার্জিলিং রাজভবন ত্যাগ, রাজ্যপালের ভূমিকা ঘিরে ফের জল্পনা শুরু হয়েছে।

বুধবার সকালে চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রী কে রাজ্যপাল আরও লিখেছেন, রামপুরহাটের বাগটুইয়ে সঞ্জু শেখের পুরো পরিবার— ছ’জন মহিলা এবং দুটো শিশুকে পুড়িয়ে দেওয়ার পর রাজ্যপাল হিসেবে তিনি চুপ থাকতে পারেন না। মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী তাঁকে চিঠি দিয়ে সংযত থাকার কথা বলেছিলেন।
বুধবার রাজ্যপাল পাল্টা চিঠিতে লেখেন, কৌশলে তাঁর মন্তব্যকে ‘মাত্রাজ্ঞানহীন’ এবং ‘অযাচিত’ বলে দাগিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। কিন্তু এমন ‘মস্ত অপরাধ’-এর পর রাজভবনে বসে তিনি সময় নষ্ট করতে পারেন না। নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করবেন না। যদি তা করতেন তা সাংবিধানিক কর্তব্যে অমার্জনীয় কাজ হবে।

এমনকি জ্ঞানবন্ত সিং ( Gyanwant Singh) এর মত একজন “দাগী” আইপিএসের ( IPS) নেতৃত্বে বিশেষ তদন্তকারী টিম (SIT) গঠন করা নিয়েও মমতাকে কটাক্ষ করেন রাজ্যপাল।
মুখ্যমন্ত্রী তাঁর চিঠিতে লিখেছিলেন “রাজ্যে শান্তি বজায় আছে। তার মধ্যে রামপুরহাটের ঘটনা দুর্ভাগ্যজনক।”
এর প্রেক্ষিতেই ধনখড় লেখেন, ‘‘এর চেয়ে হাস্যকর দাবি কিছু হতে পারে না।’’
এমনকি, রাজ্যপাল চিঠিতে টেনে আনেন বিধানসভা ভোটপরবর্তী হিংসার কথা। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের ( National Human Rights Commission) বিবৃতিকে তুলে ধরে লেখেন, ‘‘পশ্চিমবঙ্গে শাসকের আইন আছে, আইনের শাসন নেই।’’
মমতা চিঠিতে দাবি করেছিলেন এর চেয়ে অনেক ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটে বিজেপি শাসিত রাজ্যে। তখন নীরব থাকেন রাজ্যপাল। যার প্রেক্ষিতে ধনখড় লিখেছেন, তিনি পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপাল। মুখ্যমন্ত্রীর মতো তাঁরও কাজের পরিধি এই রাজ্য।

একদিকে যখন এদিনই কেন্দ্রের তরফে বিশেষ তদন্তকারী দল আসছে রাজ্যে, অন্যদিকে বিজেপির দুই প্রতিনিধিদল পৌঁছচ্ছে বাগটুই গ্রামে। গতকাল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহের সঙ্গে দেখা করেছিল বিজেপির সংসদীয় প্রতিনিধিদল। ওয়াকিবহাল মহল মনে করছে, রামপুরহাট ইস্যুকে কেন্দ্র করে আরেকবার কেন্দ্র-রাজ্য সংঘাতের আবহ তৈরি হচ্ছে। কারণ আজ যদি প্রশাসনের তরফে বিজেপির প্রতিনিধিদলকে ওই গ্রামের ঢুকতে না দেওয়া হয় সে ক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার রাজ্যপাল নিজেই চলে যেতে পারেন সেখানে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *