আজ খবর ডেস্ক- জল্পনা ছিলই। শেষ পর্যন্ত সেই জল্পনা সত্যি করে আজই, অর্থাৎ মঙ্গলবার গেরুয়া ছেড়ে ঘাসফুল শিবিরে যোগ দিচ্ছেন জয় প্রকাশ মজুমদার।
আজ, নজরুল মঞ্চে তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য কমিটির বৈঠক। দুপুর ১টা নাগাদ সেখানে পৌঁছনোর কথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের।
এই প্রতিবেদন লেখার সময় খবর পাওয়া যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই সেখানে পৌঁছে গিয়েছেন জয় প্রকাশ মজুমদার। ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপির প্রার্থী হিসেবে ভোটে লড়ে হেরে যান তিনি। দীর্ঘদিন ধরেই রাজ্য বিজেপির অন্যতম মুখপাত্র ছিলেন। সম্প্রতি, বিজেপি থেকে তাঁকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
তৃণমূল অন্দরে খবর, জয় প্রকাশ এখনও দলে যোগ দেন নি। কিন্তু এর মধ্যেই তাঁকে ঘিরে অসন্তোষ রয়েছে। কারণ :
১) গত বিধানসভা নির্বাচনে লড়াই করার সময় তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ভোট লুট এবং তাকে আক্রমণ করা হয়েছে এমন অভিযোগ তুলেছিলেন।
২) নির্বাচন কমিশন এবং কলকাতা হাইকোর্টের একাধিকবার জয়প্রকাশ তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানিয়েছেন।
৩) তৃণমূল কংগ্রেসের একাংশ বলছে, দলের এই মুহূর্তে যথেষ্ট “ভাল” অবস্থা।
বিজেপি কার্যত রাজ্যে কোণঠাসা, সেই সময় বিজেপি থেকে বহিস্কৃত একজন নেতাকে কেন তৃণমূলের নেওয়া হবে?
৪) রাজনৈতিক মহল মনে করছে মূলত বিধাননগরের একসময়ের ডাকাবুকো তৃণমূল নেতা যিনি পরবর্তীকালে শিবির বদল করেছিলেন, এবং বিধানসভা ভোটের পরে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন তাঁর হাত ধরেই জয়প্রকাশ এবার তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন।
ঘাসফুল শিবিরে এই প্রশ্ন এখন ঘুরে ফিরে আসছে , জয়প্রকাশের পরে বিজেপি থেকে আর কে কে যোগ দিচ্ছেন দলে? গত বেশ কয়েকদিন ধরেই ঘুরেফিরে যে নামটি আসছে তা হল হুগলির বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়।
গত বিধানসভা নির্বাচনে নিজের সংসদীয় এলাকা হুগলির একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে পর্যুদস্ত হয়েছে বিজেপি। হইহই করে জিতেছে তৃণমূল কংগ্রেস। এরপর এই দলের তরফে উত্তরাখণ্ড বিধানসভা নির্বাচনের দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয়েছিল লকেট কে।
কিন্তু সংবাদ মাধ্যমে খবর রটে যায়, সেখানে বসে ও বিজেপির একাধিক বিক্ষুব্ধ সাংসদ ও বিধায়কের সঙ্গে “গোপন বৈঠক” করেছেন লকেট। এমনকি উত্তরাখণ্ডে প্রচারের একফাঁকে লকেট কলকাতায় এসে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় এর সঙ্গে দেখা করেছেন এমন খবরও সংবাদ-মাধ্যমে প্রচারিত হয়। যদিও লকেট নিজে পরবর্তীকালে সেই খবর অস্বীকার করেছিলেন।
আবার ইতিমধ্যেই সংবাদমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে নির্দিষ্ট একটি খবর। যেখানে বলা হচ্ছে, গতকাল অর্থাৎ সোমবার রাতে বিজেপির কয়েকজন বিক্ষুব্ধ এবং বহিস্কৃত নেতার সঙ্গে বৈঠক করেছেন লকেট। এও জানা যাচ্ছে, সেই বৈঠকে হাজির ছিলেন জয়প্রকাশ মজুমদার যিনি এদিন তৃণমূলে যোগ দিচ্ছেন।
দিন দুয়েক আগেই বিজেপির পুরভোট পরবর্তী চিন্তন শিবির বসেছিল আলিপুরে। সেখানে দলের বিরুদ্ধে তেড়ে-ফুঁড়ে প্রতিবাদ করেছিলেন লকেট। পুরভোটে বিজেপির ব্যর্থতা প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, সব সময় তৃণমূল কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ না এনে দলের নেতারা কে কেমন কাজ করছেন সেটাও দেখা দরকার।
এমনকি, বিজেপির বর্তমান রাজ্য সভাপতি এবং রাজ্য কমিটির সদস্যদের সম্পর্কেও নাকি লকেট এই বৈঠকে নিজের অনাস্থার কথা জানিয়ে ছিলেন।
একইসঙ্গে হুগলির সাংসদ স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন, সদ্য প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষ সম্পর্কে তাঁর কোনও ক্ষোভ নেই।
বস্তুত বাবুল সুপ্রিয় বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দেওয়ার পর থেকেই রাজনৈতিক মহলে জোর চর্চা চলতে থাকে লকেটের তৃণমূল কংগ্রেসে যোগদান নিয়ে। একসময় তৃণমূল কংগ্রেস ঘনিষ্ঠ হিসেবেই রাজ্য মহিলা কমিশনে জায়গা করে নিয়েছিলেন এই
অভিনেত্রী-সাংসদ। পরে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন।লকেট চট্টোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেসে ফিরে আসছেন, এমন জল্পনা অনেকদিন ধরেই চলছে। শান্তনু ঠাকুর, জয়প্রকাশ মজুমদারদের সঙ্গে বেশ কয়েকবার একান্ত বৈঠকের খবর পাওয়া গিয়েছে। এবার লকেট কী করেন, সেদিকে তাকিয়ে সবাই।