আজ খবর ডেস্ক- আবেগ প্রবণ বহু মানুষ কথায় কোথায় বলে থাকেন, “মানুষ তো যন্ত্র নয়”!
এবার বোধহয় আর এই কথা বলা যাবে না। কারণ চলতি মাসের প্রথম দিকেই মানব শরীরে প্রথম যান্ত্রিক হৃৎপিণ্ড বসল বাংলাদেশে ( Bangladesh)।
মেকানিকাল হার্ট’ ( mechanical heart), যা রক্তমাংসের হৃদপিণ্ডের বদলে, রক্ত সঞ্চালনের কাজ করে মানুষ কে বাঁচিয়ে রাখার একটি যন্ত্র। বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো সফলভাবে এরকম একটি যন্ত্র বসানো হয়েছে মানবদেহে।
৪২ বছরের এক মহিলার শরীরে ‘মেকানিকাল হার্ট ইমপ্ল্যান্ট’ করেছেন ঢাকার( Dhaka) বেসরকারি ইউনাইটেড হাসপাতালের চিকিৎসকদের একটি দল। চার ঘণ্টা সময় নিয়ে অস্ত্রোপচারটি করা হয়েছে।
যন্ত্রটির দাম সহ সবমিলিয়ে এটি স্থাপনের খরচ হয়েছে সোয়া এক কোটি টাকার মত। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (WHO) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ মারা যান হৃদরোগ ও স্ট্রোকের কারণে।
কী কাজ করে মেকানিকাল হার্ট?
হৃদযন্ত্রের কাজ হচ্ছে বিরতিহীনভাবে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে রক্ত সঞ্চালন করা। শরীরের সব অঙ্গের সুস্থতার জন্য হৃদযন্ত্রের সুস্থতা খুবই জরুরি। হৃদযন্ত্রের ক্ষতি যে পর্যায়ে গেলে এই কাজটি আর করতে পারে না সেই কাজটি করে দেয় এই নতুন যন্ত্র।
সহজ ভাষায়, এটি একটি রক্ত পাম্প করার বা হৃদযন্ত্রে রক্ত সঞ্চালনের যন্ত্র। এই যন্ত্র কাজ করার সময় হৃদযন্ত্র বিশ্রাম পায় এবং শরীরের রক্ত সঞ্চালন ও স্বাভাবিক হয়ে আসে।
ব্যাটারি চালিত এই যন্ত্রটি রীতিমত মোবাইল ফোনের ব্যাটারির মত চার্জ দিতে হয়। জানা গিয়েছে, বাংলাদেশে বসানো যন্ত্রটি ‘হার্টমেট-থ্রি’। এর ব্যাটারির চার্জ থাকে কমবেশি ৬ থেকে ৭ ঘণ্টা।
অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পাম্প করার অংশটি বসানো হয় হার্টের নিচে বাঁদিকের অংশে। হৃদপিণ্ডের সাথে যন্ত্রটিকে টিউব দিয়ে সংযোগ করে দেয়া হয়। এক ধরনের চুম্বক শক্তি দিয়ে যন্ত্রটি পাম্প করে।
চিকিৎসকরা জানাচ্ছেন, পেটে ফুটো করে শরীরের বাইরের দিকে তার দিয়ে ব্যাটারি ও মনিটরের সঙ্গে সংযোগ করে দেওয়া হয়। এই অংশ স্ট্র্যাপ দিয়ে একটি ব্যাগে ভরা থাকে যা সারাক্ষণ বহন করতে হয়। সবমিলিয়ে এর বহনযোগ্য অংশের ওজন দেড় কেজির মত।
মনিটর দিয়ে ব্যাটারির চার্জ ও যন্ত্রের কার্যক্রম সম্পর্কে জানা যায়।
যদিও চিকিৎসকদের আরেক অংশ বলছেন, এটি মোটেও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান নয়। সাধারণত হৃদযন্ত্র পুরোপুরি বিকল হয়ে গেলে প্রতিস্থাপন করার প্রয়োজন হয়। সেটিই দীর্ঘমেয়াদি সমাধান। কিন্তু হৃদযন্ত্র দ্রুত মারাত্মক অবনতির দিকে গেলে, কোনভাবেই আর ওষুধে কাজ না হলে, এবং অবশ্যই সুস্থ হৃদযন্ত্র পাওয়া না গেলে বা পেতে দেরি হলে এই যন্ত্রটি লাগানো হয়।
কতদিন, কতটা সুস্থভাবে বেঁচে থাকা যায়?
বলা হচ্ছে, এই মডেলটি বাজারে এসেছে ২০১৭ সালে। এটি লেটেস্ট মডেলগুলোর একটি। ক্লিনিকাল ট্রায়ালের ফল থেকে দেখা যাচ্ছে, সাধারণত ৫ বছরের বেশি সময় সুস্থভাবে বাঁচা যায়। যন্ত্রটির স্থায়িত্ব ৮ থেকে ১০ বছর।
অস্ত্রোপচার করে যন্ত্রটি বসানোর পর হাসপাতালে থাকতে হয় ৩ থেকে ৪ সপ্তাহ। এরপর ৩মাসের মত সময় লাগতে পারে শরীরের সবকিছুর সঙ্গে অভ্যস্ত হতে।
বাড়তি কী সতর্কতা নিতে হয়?
বিশেষজ্ঞদের মতে, যন্ত্রটি বসিয়ে দিলেও রোগীকে নিয়মিত ওষুধ খেতে হবে। বিশেষ করে রক্ত পাতলা রাখার ওষুধ জরুরি।
স্বাভাবিক কাজ, যেমন বাইরে কোথাও যাওয়া, বাজার করা, অফিসিয়াল কাজ সবই স্বাভাবিকভাবে করা সম্ভব।
আসলে এই যন্ত্রের উদ্দেশ্য হচ্ছে, একজন হার্টের রোগীকে যতটা সম্ভব স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে সাহায্য করা। পাশ্চাত্যের দেশগুলোতে এই যন্ত্র লাগিয়ে খেলা, বাইসাইকেল চালানো এমনকি বডি বিল্ডিং করার পর্যন্ত নজির আছে।
তবে কিছু সাবধানতা অবশ্যই বজায় রাখতে হবে। যেমন, ব্যাটারি বা মনিটর পুরোপুরি জলে ডোবানো যাবে না। সাঁতার কাটা যাবে না। যেহেতু যন্ত্রটির সংযোগ থাকবে শরীরের একটি অংশে ফুটোর মাধ্যমে, তাই সেখানে যাতে ঘা না হয় সেব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে। পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে।