আজ খবর ডেস্ক- ৩ দিনের রাজ্য সম্মেলন শেষে নয়া সম্পাদক পেল সিপিএম(CPIM)। অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টি ভেঙে ১৯৬৪ সালে সিপিএম তৈরি হওয়ার পর এই প্রথম দলের রাজ্য সম্পাদক হলেন এক সংখ্যালঘু নেতা, মহম্মদ সেলিম (md. salim)।
তবে, কংগ্রেস (congress) ও আইএসএফের (ISF) সঙ্গে জোটের অন্যতম প্রবক্তা সেলিমের সম্পাদক হওয়ার পথ খুব একটা মসৃণ হয় নি, বলছে দলের একাংশ।
দলেরই একটি সূত্র বলছে, সদ্য প্রক্তন সূর্যকান্ত মিশ্র সেলিমের হয়ে সওয়াল করলেও বিরোধিতার তালিকায় নামের কমতি ছিল না। হাওড়ার শ্রীদীপ ভট্টাচার্য কে হারিয়ে শেষ হাসি অবশ্য হাসলেন সেলিমই।

সূত্রের খবর, সম্পাদক পদের দৌড়ে বেশ এগিয়ে ছিলেন শ্রীদীপ ভট্টাচার্য। এ বিষয়ে প্রায় দেড় বছর দলের অন্দরে লড়াই চালিয়েছিলেন বিমান বসু( biman basu) সঙ্গে ছিলেন সুজন চক্রবর্তী(sujan chakraborty) , রবীন দেবের( rabin deb) মত বেশ কয়েকজন।
এরই সঙ্গে একাধিক প্রবীণ নেতা রাজ্য কমিটি থেকে বাদ পড়লেন। যদিও আগে থেকেই বয়সের কারণে রাজ্য কমিটি থেকে কয়েকজন কে বাদ দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা চলছিল।

নতুন রাজ্য কমিটি থেকে বাদ পড়লেন গৌতম দেব, রবীন দেব সহ একাধিক প্রবীণ নেতা । নতুন রাজ্য কমিটিতে জায়গা পেলেন সুশান্ত ঘোষ ( sushanta ghosh) সুদীপ সেনগুপ্ত ( sudip sengupta), শাতরূপ ঘোষ( shatarup ghosh), মীনাক্ষী মুখার্জি( minakshi Mukherjee), সৃজন ভট্টাচার্য( srijan bhattacharyaa) প্রমুখ।

এদিন দুপুরে পলিটব্যুরোর( politbureau) তরফে রাজ্য সম্মেলনের পর্যবেক্ষণ শীর্ষক বক্তৃতা দেন প্রকাশ কারাত ( prakash karat)। কার্যত তখনই স্পষ্ট হয়ে যায়, শ্রীদীপ ভট্টাচার্যকে হারিয়ে নয়া রাজ্য সম্পাদক হতে চলেছেন মহম্মদ সেলিম।
বস্তুত সম্মেলনে শুরু থেকেই যে কয়েকটি বিষয় নিয়ে আলোচনা এবং তর্ক চলছিল সেগুলো হলো:
১) নতুন রাজ্য কমিটিতে বয়সের উর্ধ্বসীমা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হোক
২) পুরনো মুখ সরিয়ে আরো নতুন মুখকে সামনে আনা হোক
৩) ছাত্র ও যুব সম্প্রদায়ের মন কাড়তে সামনের সারিতে আনা হোক সেই সব নেতাদের যারা অপেক্ষাকৃত অল্পবয়স্ক এবং দলীয় কর্মসূচিতে মাঠে নেমে নিয়মিত নেতৃত্ব দিচ্ছেন
৪) সরে যাওয়া সংখ্যালঘু ভোট এবং নিম্নমধ্যবিত্ত ভোট ব্যাঙ্ক কে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসার জন্য উপযুক্ত আন্দোলন করা হোক
৫) আগামী দিনেও কংগ্রেস এবং আই এস এফ এর সঙ্গে জোট বেঁধেই এই রাজ্যে সিপিএম চলবে কিনা দলের কর্মী-সমর্থকদের তার একটা নির্দিষ্ট দিশা দেওয়া হোক।

মহম্মদ সেলিমকে দলের রাজ্য সম্পাদক করার মধ্যে দিয়ে একটি একটি স্পষ্ট বার্তা দিল সিপিএম। অন্তত এমনটাই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। আর তা হল “একলা চল” নয়, আপাতত পশ্চিমবঙ্গের জোট বেঁধে চলতে চাইছে আলিমুদ্দিন। কারণ গত বিধানসভা নির্বাচনে জোটের হয়েই জোরালো সওয়াল করেছিলেন সেলিম।

পাশাপাশি, দলের যুব সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি অথবা ছাত্র সংগঠনের রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্যকে রাজ্য কমিটিতে নিয়ে এসে যুব ও তরুণ মুখকে গুরুত্ব দেওয়ার বিষয়টিও সামনে এল। রাজ্য কমিটিতে নিয়ে আসা হল পশ্চিম মেদিনীপুরের ডাকাবুকো নেতা সুশান্ত ঘোষ কে। গরবেতার এই বিতর্কিত নেতা তৃণমূল সরকার প্রথমবার ক্ষমতায় আসার পরে দীর্ঘদিন গ্রেপ্তার ছিলেন। রাজ্য কমিটিতে ঠাঁই পেলেন শতরূপ ঘোষ। যাকে নিয়ে দলের অন্দরেই একাংশ মনে করেন, রাস্তায় আন্দোলনে নয় তিনি আসলে সোশ্যাল মিডিয়ায় জনপ্রিয় নেতা। জনপ্রিয় মুখ যে দলের সংগঠনে প্রয়োজন তাতেই যেন সিলমোহর দিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট।

তবে বিতর্ক থাকছেই। কারণ এখন পর্যন্ত প্রকাশিত দলের নয় রাজ্য কমিটির তালিকায় ৭০ জনের জায়গা হওয়ার কথা। বাদ রয়েছে একটি নাম। দ্বিতীয়ত, সিপিএমের অন্দরে ক্ষোভ থেকেই যাচ্ছে। এমন বহু নেতা রয়েছেন যারা দীর্ঘদিন পথে নেমে কোনও আন্দোলন করেননি। রাজ্য কমিটিতে তাঁদের জায়গা হলেও বাদ পড়লেন এমন অনেকে যারা নিয়মিত দলীয় কর্মসূচি সামনে থেকে নেতৃত্ব দেন।
সামনে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কতটা ঘুরে দাঁড়াতে পারবে সিপিএম, নতুন রাজ্য কমিটির কাছে নিঃসন্দেহে সেটাই এখন সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *