আজ খবর ডেস্ক- গত বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই সমালোচনার আঙুল উঠেছিল “শ্রমজীবী” ক্যান্টিনের দিকে। লকডাউনের সময় থেকেই রাজ্য জুড়ে এই ক্যান্টিন চালাচ্ছিলেন বাম ছাত্র যুবদের একাংশ। রাজ্যের রাজনৈতিক মানচিত্রে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে জায়গা করে নিয়েছিল দুটি শব্দ, শ্রমজীবী ক্যান্টিন (shramajibi canteen) এবং রেড ভলেন্টিয়ার ( red volunteer)।
যদিও সিপিএমের অন্দরেই প্রশ্ন উঠেছিল দল রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে কাজ করবে নাকি সামাজিক সংগঠন? দলের প্রথম সারির বেশ কয়েকজন নেতা লকডাউনের সময় চলতে থাকা এই উদ্যোগকে ভারত সেবাশ্রমের সঙ্গেও তুলনা করেছিলেন। তাঁদের বক্তব্য ছিল, শ্রমজীবী ক্যান্টিন চালিয়েও বিধানসভা নির্বাচনে ১টি আসন পর্যন্ত জোটেনি বামেদের। উদাহরণস্বরূপ বলা হয়েছিল যাদবপুর শ্রমজীবী ক্যান্টিনের কথা। গত প্রায় ৭০০ দিন একনাগাড়ে চললেও যাদবপুর বিধানসভা কেন্দ্রে পরাজিত হয়েছিলেন সিপিআইএম কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী (sujan chakraborty)।

গত দু’দিন ধরে চলছে সিপিআইএমের(cpim) কলকাতা জেলা কমিটির সম্মেলন। শনিবার তৃতীয় এবং শেষ দিন। জানা গিয়েছে, শুক্রবার সম্মেলন চলাকালীন আলোচনায় উঠে এসেছে এই শ্রমজীবী ক্যান্টিন প্রসঙ্গ।
২০২১ ভোটের ময়নাতদন্তে ঠিক যেভাবে দলের একাংশ বলেছিলেন “এটা কমিউনিস্ট পার্টির কাজ নয়”, শুক্রবার ঠিক সেভাবেই সমালোচনায় বিদ্ধ হল জেলায় জেলায় চলতে থাকা এই সামাজিক উদ্যোগ।
প্রসঙ্গত, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকায় চলতে থাকা এই শ্রমজীবী ক্যান্টিনে মাত্র ২০ টাকার বিনিময়ে সাধারণ মানুষ ভাত-ডাল-তরকারি পেতে পারেন। বিশেষ কিছু দিনে যেমন পুজোর সময় এই ধরণের কয়েকটি ক্যান্টিনে মিলেছে ডিম মাছ মাংস ও।
আর ঠিক এখানেই আপত্তি তুলেছে আলিম উদ্দিন এর একাংশ। তাঁদের বক্তব্য, এই ধরনের সেবামূলক কাজ করুক এনজিও ( NGO)। “পার্টি কেন করবে”?

মূলত ক্রাউড ফান্ডিং ( crowd funding) এর মাধ্যমে ক্যান্টিন চালানোর অর্থ জোগাড় করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে এলাকার মানুষ স্বেচ্ছায় অনুদান দিয়ে থাকেন। কখনও আবার “পার্টি দরদী” সমর্থকরা নিজেদের জন্মদিন বা বিবাহ বার্ষিকীর অনুষ্ঠানের জন্য সেইদিনের ক্যান্টিনের যাবতীয় খরচ বহন করে থাকেন।
সম্মেলনে নাকি প্রশ্ন উঠেছে এই অনুদান নিয়েই। কাদের থেকে অনুদান নেওয়া যাবে আর কাদের থেকে নেওয়া যাবে না? মূলত এই প্রশ্নে দ্বিধা-বিভক্ত কলকাতা জেলা সিপিএম। দলের সম্মেলনের ভেতরেই একে অপরকে আক্রমণ করছেন সিপিএম নেতৃত্ব।

এ কথা ঠিক যে ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনে ১ টি আসন ও জিততে পারেনি বামেরা। আবার এও ঠিক, বিধানসভা পরবর্তী কলকাতাসহ রাজ্যে যে পুরনির্বাচন হয়েছে তাতে দেখা গিয়েছে বিজেপিকে সরিয়ে কার্যত দ্বিতীয় স্থানে উঠে এসেছে বামফ্রন্ট। যেমন নদীয়ার তাহেরপুর পুরসভা নিজেদের দখলে রাখতে পেরেছে সিপিএম।
এই পুরভোটে একাধিক ওয়ার্ডে প্রার্থী হিসেবে সিপিএমের তরফে বেছে নেওয়া হয়েছে তুলনায় কম বয়সি মুখ। প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে রেড ভলান্টিয়ারদের। কিন্তু তার পরেও কেন দলের সম্মেলনে এহেন মতবিরোধ?


রাজনৈতিক মহলের মতে দীর্ঘদিন ধরেই সিপিএমের অন্দরে “পক্ক কেশ” বনাম তরুণ মুখের লড়াই চলছে। বস্তুত, ২০১১ সালের পর থেকেই নতুন মুখ সামনে তুলে আনার দাবি উঠেছিল আলিমুদ্দিনের ভেতরেই শুধু নয় দলের সাধারণ নেতাকর্মীদের মধ্যেও। বিধানসভা ও পুর নির্বাচনে এসএফআই ডিওয়াইএফআই থেকে অনেককেই প্রার্থী করা হয়েছিল।
সে ক্ষেত্রে ফল আশানুরূপ না হওয়ায় ফের পার্টি সম্মেলনে বিতর্ক শুরু হলো বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল।
যদিও দলের আরেক অংশ বলছে, ক্ষমতায় থাকার সুযোগ নিয়ে যারা দীর্ঘদিন নিজেদের জায়গা পাকা করে রেখেছিলেন তাদের থেকে আরেকটু ধৈর্য দরকার। তুলনায় নতুন মুখদের বিভিন্ন শাখা সংগঠনে এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে পরিচিতি পাওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় সময় দিতে হবে।

প্রথমে জেলাভিত্তিক সম্মেলন আর তারপরে শুরু হবে রাজ্য সম্মেলন। সময়ের দাবি মেনে বিভিন্ন নির্বাচনে যে ইশতেহার প্রকাশ করা হয়েছে সেখানে গুরুত্ব পেয়েছে অন্যান্য নানা বিষয়। যেমন সংগঠন বাড়ানোর প্রশ্নে এবার এলজিবিটি (LGBTQ) কমিউনিটির মধ্যেও ছড়িয়ে পড়তে চায় সিপিএম।
কিন্তু প্রশ্ন উঠেছে, দলীয় সম্মেলনে অনেক গুরুত্ব প্রশ্নের উত্তর প্রত্যাশা করেন কর্মীরা। জাতীয় স্তরে বিজেপি বিরোধী মঞ্চের কী ভূমিকা নিতে পারবে সিপিএম? এই রাজ্যে কি কংগ্রেসের হাত ধরেই চলবে আলিমুদ্দিন? নাকি প্রাধান্য দেওয়া হবে “একলা চলো” নীতিতে! গত বিধানসভা ভোটের আগে যে “লেসার এভিল” এবং “গ্রেটার এভিল” তত্ত্ব ঝড় তুলেছিল দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে, তার সদুত্তর কোথা থেকে আসবে?
দলীয় সম্মেলনে এই সব প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে যেভাবে দলের রাজ্য নেতারা এক এরিয়া কমিটি বনাম অন্য এরিয়া কমিটির সমালোচনায় মেতেছেন, যেভাবে ইতিমধ্যেই বহুবার আলোচিত শ্রমজীবী ক্যান্টিনের ভূমিকা কাটাছেঁড়া হচ্ছে সেটাই কি সম্মেলনের মূল লক্ষ্য?
২৫ তম কলকাতা জেলা কমিটির সম্মেলনের ভেতর থেকে প্রশ্ন উঠছে এই নিয়ে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *