আজ খবর ডেস্ক- পুরভোটের প্রার্থী তালিকা প্রকাশের পর থেকেই শাসকদলের অন্দরে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল। জেলায় জেলায় ফল প্রকাশের পর দেখা গিয়েছে, একাধিক পুরসভায় দ্বিতীয় স্থানে রয়েছেন নির্দল প্রার্থীরা যাদের অধিকাংশই বিক্ষুব্ধ তৃণমূল।
এমনকি রাজনৈতিক মহল পর্যন্ত বলছে, একাধিক পুরসভা ত্রিশঙ্কু হওয়ার মূল কারণ তৃণমূলের টিকিট না পেয়ে অন্য প্রতীক নিয়ে দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন একসময়ের তৃণমূল নেতারাই।
এই ঘটনা নাকি সবথেকে বেশি হয়েছে শ্রীরামপুর লোকসভা কেন্দ্রের অন্তর্গত একাধিক ওয়ার্ডে।
কিন্তু দলীয় কোন্দল যে মর্মান্তিক পরিণতির দিকে এগোতে পারে তার চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল বর্ধমান(Burdwan town)।
পুরভোটের ফল বের হতেই এক কলেজ ছাত্রীর আত্মহত্যার (suicide) ঘটনায় উত্তপ্ত বর্ধমান। ৩৫ আসনের বর্ধমান পৌরসভা এখন বিরোধী-শূন্য।সবকটি আসন দখলের পরেও আত্মহত্যার ঘটনায় নবনির্বাচিত এক তৃণমূল (Trinamool Congress) কাউন্সিলরের দিকে অভিযোগের আঙুল তুলেছে তৃণমূলের প্রতি অনুগত এক পরিবার। স্বাভাবিকভাবেই সেই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন অভিযুক্ত তৃণমূল কাউন্সিলর বসির আহমেদ।
বুধবার পুরভোটের ফল প্রকাশের পরেই এক কলেজছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার হওয়ায় রীতিমত সরগরম বর্ধমান শহর। মৃত ছাত্রীর নাম তুহিনা খাতুন(১৮)। বর্ধমান পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত বাবুরবাগ মসজিদ সংলগ্ন নতুনপল্লির বাসিন্দা ওই কলেজছাত্রী।
বুধবার সন্ধেবেলা নিজের বাড়ি থেকে ওই ছাত্রীর ঝুলন্ত দেহ উদ্ধারের পরে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে( Burdwan Medical College) নিয়ে যাওয়া হলে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন।
এরপরেই আসরে নামেন স্থানীয় তৃণমূল নেতা তথা “জয়হিন্দ বাহিনী”র ওয়ার্ড সভাপতি মোক্তার মিয়াঁ। সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি অভিযোগ করেছেন, প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পরেই বসির আহমেদ ওরফে বাদশা তুহিনাদের বাড়িতে গিয়ে হুমকি দেয়। বাড়ির দেওয়ালে তুহিনা-সহ তিন বোনের ছবি এঁকে বলে জিতলে তিনজনই আত্মহত্যা করবে, মর্মান্তিক পরিণতি হবে। এটা কি কোনও নেতার ভোটের প্রচারের ছবি হতে পারে? প্রশ্ন করেছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এদিকে, মৃত ছাত্রীর পরিবারের দাবি তাঁরা বর্ধমান পুরসভার ২৭ নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূলের জয়হিন্দ বাহিনীর সভাপতির মোক্তার মিয়াঁর অনুগামী। কিন্তু এই মোক্তার মিয়াঁ যেহেতু সদ্য নির্বাচিত তৃণমূল কাউন্সিলর বসিরের বিরোধী গোষ্ঠীর নেতা, তাই বেশ কয়েকদিন ধরে ওই পরিবারের ৩ মেয়েকে লাগাতার ধর্ষণের হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।
মোক্তার মিয়াঁ নিজেও জানিয়েছেন তাঁর সঙ্গেই তৃণমূল করত এই পরিবার। তিন বোনের মধ্যে দুইবেনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তুহিনা কলেজের ছাত্রী। তিনজনই তাঁর সঙ্গে থাকত বলে দাবি করেছেন মোক্তার মিয়াঁ। তবে টিকিট পাওয়ার পরেই পরিবারটি বসির আহমেদের কাছে মিটমাটের জন্য গিয়েছিল, কিন্তু তাঁদেরকে তাড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ।
বুধবারের জয়ের পরেই দলবল নিয়ে তুহিনাদের বাড়িতে গিয়ে বসির আহমেদ হুমকি দেয় বলে ওই পরিবারের অভিযোগ। পাশাপাশি অকথ্য ভাষায় গালাগালি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ। তারপরেই আত্মহত্যা করে ওই কলেজ ছাত্রী, দাবি পরিবারের। যদিও সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বসির আহমেদ।
ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। পুলিশের তদন্তেই তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ নস্যাৎ হয়ে যাবে বলেও দাবি করেছেন ওই নেতা।
এর আগেও অবশ্য স্থানীয়ভাবে বসির আহমেদ নামে ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে রাজ কলেজের টিচার ইনচার্জকে চড় মারা থেকে করোনা আক্রান্ত ব্যক্তিকে “এক ঘরে” করে রাখার মত একাধিক অভিযোগ উঠেছিল।