আজ খবর ডেস্ক- ১০৮ পূরসভায় ১০৩ দখলে করল তৃণমূল কংগ্রেস। নদীয়ার তাহেরপুর পুরসভা নিজের ব্যতিক্রমী চরিত্র বজায় রেখে এবারও বামেদের দখলে।
পূর্ব মেদিনীপুরের অধিকারী গড় কাঁথি(kanthi) পুরসভা দখলে নিল তৃণমূল। অন্যদিকে পশ্চিম মেদিনীপুরে দিলীপ ঘোষের খাসতালুক খরগপুর (Kharagpur) পুরসভাও এল তৃণমূলের দখলে।
চমকপ্রদ ফল হল দার্জিলিং পুরসভার। নতুন তৈরি হওয়া দল হামরো পার্টির( Hamro Party) হাতে এল দার্জিলিং(Darjeeling)।
এই পুরভোটের মাত্র ৩ মাস আগে তৈরি হওয়া হামরো পার্টির নজরকাড়া সাফল্য নিঃসন্দেহে উত্তরবঙ্গের রাজনৈতিক মানচিত্রে নয়া চমক।

ভোটের দিন থেকেই রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে “ছাপ্পা ও রিগিং” এর অভিযোগ উঠেছিল শাসক দলের বিরুদ্ধে। রাজ্য নির্বাচন কমিশনের সামনে বিক্ষোভ থেকে শুরু করে আদালতের দ্বারস্থ হওয়া অথবা রাজভবনের প্রতিবাদ জানাতে যাওয়া, প্রায় সবকিছুই করেছিল বিরোধীরা। শ্রীরামপুর এবং দক্ষিণ দমদম এর দুটি ওয়ার্ডে পুনরায় ভোট হলেও ফলাফলে তেমন কোনও হেলদোল চোখে পড়ল না।

রাজনৈতিক মহল বলছে, এ যেন ২০২১ বিধানসভা নির্বাচনের ফলো আপ (follow up)!
তবে রাজনীতির কারবারিরা বলছেন, বিরোধীদের তরফে যতই “ভোটের নামে প্রহসনের” অভিযোগ উঠুক না কেন, সাংগঠনিক ভাবে তৃণমূলকে টেক্কা দেওয়ার জন্য যে এখন ও বাম বা বিজেপি প্রস্তুত নয় আরেকবার তা প্রমাণিত হল।
হাওড়ার আমতায় ছাত্রনেতা আনিস খানের (Anis Khan) মৃত্যু এই পুরভোটের অন্যতম ইস্যু থাকলেও ভোট পড়ল তৃণমূলের ঝুলিতে। তবে কি বিভিন্ন সরকারি প্রকল্পের উপভোক্তা হিসেবেই সাধারণ মানুষের আস্থা জিতে নিল তৃণমূল?
যদিও এই যুক্তি মানতে নারাজ বাম ও গেরুয়া শিবির। তাঁরা বলছে, যদি রাজ্যজুড়ে এত উন্নয়ন হয়েই থাকে তাহলে ভোটের দিনে মাত্রাছাড়া হিংসা কেন প্রয়োজন হচ্ছে?

তবেই পুরভোটের ফলাফল বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে চমকপ্রদক হয়ে থাকল।
১) দীর্ঘ প্রায় সাড়ে তিন দশক পর কাঁথি পুরসভা হাতছাড়া হলো অধিকারী পরিবারের। ভোট প্রচারে নিজের গড় বাঁচাতে মরিয়া ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari)। ভোটের দিন কর্তব্যরত পুলিশের সঙ্গে উত্তপ্ত বাদানুবাদের জড়িয়ে পড়েন প্রবীণ সাংসদ শিশির অধিকারী।
২১ ওয়ার্ডের কাঁথি পুরসভায় কার্যত পর্যুদস্ত বিজেপি, প্রকারান্তরে যা অধিকারী পরিবারের পরাজয় বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল। জানা গিয়েছে যেই ওয়ার্ডে “শান্তি কুঞ্জ” অবস্থিত, শিশির-শুভেন্দু-সৌমেন্দুর সেই ওয়ার্ড ও দখল করেছে তৃণমূল।

২) গত বিধানসভায় বীজপুর কেন্দ্র থেকে বিজেপির টিকিটে লড়াই করে হেরেছিলেন মুকুল পুত্র শুভ্রাংশু রায়। এবার তিনি জিতলেন। বিধায়ক নয়, তবে পুর প্রতিনিধি হিসেবে। ২৪ ওয়ার্ডের কাঁচরাপাড়া পুরসভায় নিজের পুরনো ৬ নম্বর ওয়ার্ড থেকে ১৬০০র বেশি ভোটে জিতলেন শুভ্রাংশু রায়। গত ১১ই জুন বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছিলেন মুকুল পুত্র। রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন, এবার কি তবে কাঁচরাপাড়া পুরসভার নতুন চেয়ারম্যান হচ্ছেন শুভ্রাংশু?

৩) সবুজ আবিরের ঝড়ে অবশ্য লাল রং মাখানো নদীয়ার তাহেরপুর পুরসভা ব্যতিক্রম হয়ে থাকল।
১৩ ওয়ার্ডের এই পুরসভা আগের বারও ছিল বামেদের দখলে। এই প্রতিবেদন লেখার সময় পর্যন্ত, ৮ টি ওয়ার্ডে জয়ী সিপিএম। ৫ টি তৃণমূলের দখলে।

৪) ব্যারাকপুর পুরসভা হাতছাড়া হল অর্জুন সিংয়ের। ভোটের দিন নিজের ভোট দিতে পারেননি অর্জুন সিং। বাড়ি থেকেই বের হননি তিনি। কারণ, নিজের পরিবার। গত লোকসভা ভোটের আগে তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার সময় অর্জুনের সঙ্গেই ছিলেন তার ভাইপো পবন সিং। পরে তিনি ফের তৃণমূলে ফিরে আসেন। তাই এবার আর ভোট দিতে আগ্রহ পাননি এই ডাকাবুকো নেতা। কাঁথির মত শিল্পাঞ্চল সংলগ্ন ব্যারাকপুর পুরসভাও দীর্ঘদিন অর্জুনের দখলে ছিল। এবার তা দখলে নিল তৃণমূল।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *