আজ খবর ডেস্ক- কিটোজেনিক ডায়েট, বা কিটো ডায়েট (keto diet) হল একটি লো-কার্ব (low carb) ডায়েট, যার সাহায্যে মাত্র কয়েক সপ্তাহের মধ্যে যে কোনও মহিলা বা পুরুষ নিজের ওজন কমিয়ে ফেলতে পারেন।

কেটোজেনিক ডায়েট বিপাক (metabolism) বৃদ্ধি এবং ক্ষুধা হ্রাস সহ বিভিন্ন উপায়ে ওজন কমাতে সহায়তা করে। কিটোজেনিক ডায়েটে এমন খাবার থাকে যা একজন ব্যক্তির ক্ষুধা-উদ্দীপক হরমোন কমাতে সহায়তা করে। এই কারণে কিটো ডায়েট অনুসরণ করলে ক্ষুধা কমে যায় এবং একই সাথে ওজনও কমে। তবে এই ডায়েটের কিছু সাধারণ স্বল্পমেয়াদী পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে সেটি হল কেটো ফ্লু। এর লক্ষণ হল ক্লান্তি, বমি ভাব এবং মাথাব্যথা ।

কিটো ডায়েটের ক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি দৈনিক সর্বোচ্চ ৫০ গ্রাম বা তার কম কার্বোহাইড্রেট গ্রহণ করতে পারে এবং এই ডায়েট কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ কমিয়ে দেহে চর্বির পরিমাণ বাড়ায়। ফলে শরীর কার্বোহাইড্রেটের পরিবর্তে শক্তির জন্য চর্বি পোড়াতে শুরু করে। এরূপ বিপাকীয় পরিবর্তনকে কেটোসিস অবস্থা বলা হয়।

কেটোসিস অবস্থায় রক্তে শর্করা সঞ্চালনের অভাবের কারণে দেহে চর্বি ভাঙতে শুরু করে। শরীর চর্বিকে কিটোনে পরিণত করে এবং এই কিটোন শরীরে শক্তি সরবরাহ করে। ডায়েট শুরু করার পর একজন ব্যক্তির কিটোসিস অবস্থায় পৌঁছাতে প্রায় ২-৪ দিন সময় লাগে ।

এবার জানা যাক কিটোনের কিছু গুণাগুণ :
১) মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ে

কিটোজেনিক ডায়েট মেনে চলার ফলে মস্তিষ্কের ভিতরে এমন কিছু এনজাইমের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যার প্রভাবে মস্তিষ্কের ক্ষমতা বাড়ে এবং স্নায়ু কোষকে শক্তিশালী করে।

২) হার্ট সুস্থ থাকে

ডাক্তারদের মতে অধিক পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার খেলে ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এক্ষেত্রে যেহেতু একেবারেই ‘কার্ব রিচ’ খাবার খাওয়া হয় না, ফলে ট্রাইগ্লিসারাইড বেড়ে যাওয়ার কারণে হার্টের রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে না।

৩) শরীরে প্রদাহের মাত্রা কমে

এই ডায়েট মেনে চললে, দেহে প্রদাহের মাত্রা কমে। ফলে শরীরের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলির কোনও ধরনের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা যেমন থাকে না ।

৪) পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের প্রকোপ হ্রাস করে (PCOS)

বিশেষজ্ঞদের কথায়, কিটো ডায়েট চার্ট মেনে খাবার খেলে দেহে ইনসুলিন লেভেল ঠিক থাকে, যে কারণে পলিসিস্টিক ওভারি সিনড্রোমের প্রকোপ কমতে সময় লাগে না।

৫) ব্রণ দূর করে

প্রক্রিয়াজাত (processed) এবং পরিশোধিত (refined) কার্বোহাইড্রেট সমৃদ্ধ খাবার খাওয়া অন্ত্রের ব্যাকটেরিয়ার ভারসাম্যকে পরিবর্তন করতে পারে এবং রক্তে শর্করাকে উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি এবং হ্রাস করতে পারে, উভয়ই ত্বকের স্বাস্থ্যকে বিরূপভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

৬) ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়

এটি স্বাভাবিক কোষের তুলনায় ক্যান্সার কোষে বেশি অক্সিডেটিভ স্ট্রেস সৃষ্টি করে , যার ফলে তাদের মৃত্যু ঘটে।

এই ডায়েটের কিছু ঝুঁকি এবং জটিলতাও আছে।

কেটোজেনিক ডায়েটে স্বাস্থ্য সুবিধার পাশাপাশি দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য সমস্যার কিছু ঝুঁকিও আছে, যেমন:

১) কিডনিতে পাথর
২) রক্তে অতিরিক্ত প্রোটিন
৩) খনিজ এবং ভিটামিনের ঘাটতি
৪) যকৃতে চর্বি জমা হয়

কেটো ডায়েট এড়ানো উচিত :

১) ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিরা যারা ইনসুলিন-নির্ভর
২) যাদের খাওয়ার ব্যাধি রয়েছে
৩) যাদের কিডনি রোগ বা প্যানক্রিয়াটাইটিস আছে
৪) গর্ভবতি এবং স্তন্যদানকারী মহিলা

যারা ডায়াবেটিসের জন্য সোডিয়াম-গ্লুকোজ কোট্রান্সপোর্টার 2 (SGLT2) ইনহিবিটর নামে এক ধরনের ওষুধ খান তাদেরও কিটো ডায়েট অনুসরণ করা উচিত নয়।

সব শেষে এটা মনে রাখা খুবই জরুরী, যারা কেটো ডায়েট শুরু করতে চাইছেন তাদের অবশ্যই একজন ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *