আজ খবর ডেস্ক-  আইবিএস(IBS) অর্থাৎ ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম। পাচনতন্ত্রের একটি অস্বস্তিকর অসুখ। এতে আক্রান্ত মানুষের অন্ত্রের নিয়মিত কাজে ব্যাঘাত সৃষ্টি হয়।
এছাড়াও এর ফলে পেটে ব্যথা, ক্র্যাম্পিং, পেট ভারী হওয়া বা ফুলে যাওয়ার মতো সমস্যার হতে পারে । পুরুষদের তুলনায় মহিলারাই বেশি আক্রান্ত হন এই রোগটিতে । চিকিৎসকদের মতে অনেকটা শারীরিক এবং কিছুটা মানসিক সমস্যা মিলে এই অসুখ। আর, সব থেকে মজার বিষয় হল কোভিডের (Covid) মত এই রোগটি ও কিন্তু গরীব, বড়লোক মানে না।
অনেকেই হয়তো জানেন না, রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু( Jyoti Basu) দীর্ঘদিন কষ্ট পেয়েছিলেন এই রোগে।

এবার জেনে নেওয়া যাক কী কারণে এই রোগটি হয়?
চিকিৎসকদের একাংশ বলছেন, “আমাদের মস্তিষ্কের মতো আমাদের পাচনতন্ত্রের নিজস্ব স্নায়ু এবং সংকেত ট্রান্সমিটার রয়েছে । যা স্নায়ু জুড়ে তার উপাদানগুলির মধ্যে বার্তা পাঠাতে পারে । তাই একে দ্বিতীয় মস্তিষ্কও বলা হয়।”
আইবিএস হল এমন একটি ব্যাধি যা মস্তিষ্কের অক্ষ- অন্ত্রের স্নায়ু এবং অন্ত্রের মধ্যে মতবিরোধ হলে দেখা দেয়।
যদিও এই রোগের সঠিক কারণ এখনও জানা যায়নি। একেক জন মানুষের একেক কারণে আইবিএস হতে পারে। তবে সাধারণ ভাবে মনে করা হয়, স্ট্রেস (Stress), সংক্রমণ(Infection), ওষুধ(Medicine), হরমোনের পরিবর্তন( Hormonal Imbalance) এবং খাবারের ধরনগুলির সাথে জড়িত থাকে এই সমস্যা।

আইবিএস এর লক্ষণ হল ,

১) ডায়রিয়া
২)কোষ্ঠকাঠিন্য
৩)অসম্পূর্ণ মল নিষ্কাশনের অনুভূতি
৪) গ্যাস
৫) পেটে ব্যথা
৬) পেট ফাঁপা
তবে সমস্যা যেমন আছে, তার সমাধানও আছে । আসুন জেনে নেওয়া যাক কিভাবে এই রোগটির সঙ্গে লড়াই করা যায়।

১) স্ট্রেস বাস্টিং: IBS এর সবচেয়ে বড় কারণ হল স্ট্রেস। এমন কোনও কাজ করুন যা আপনি পছন্দ করেন। মানে আপনার শখ অনুসরণ করা এই ক্ষেত্রে একটি ভাল উপায়। এটি আপনার অস্থির মনকে অন্ত্র নিয়ে চিন্তা ভাবনা থেকে দূরে নিয়ে যেতে পারে।

২) আইবিএস ডায়েরি: ডায়েরি বজায় রাখা সর্বদা একটি ভাল অভ্যাস । এর ফলে আপনি কী খাচ্ছেন, কোনও অস্বাভাবিক বা নির্দিষ্ট খাবারের পরে আপনার শরীর কেমন সাড়া দিচ্ছে, সেই সম্পর্কে আপনাকে অবগত রাখে। আপনার অন্ত্রের নেতিবাচক লক্ষণগুলির প্রবণতা, যায় অন্যতম হল মল ফ্রিকোয়েন্সি ইত্যাদি রেকর্ড করে রাখা দরকার। এটি রোগী এবং পরিচর্যাকারী উভয়কেই উন্নত চিকিৎসা এবং খাদ্যের পরিকল্পনা সম্পর্কে একটি পরিষ্কার ধারণা দেবে।

৩) খাদ্য অসহিষ্ণুতা:  আইবিএস মোকাবিলা করার একটি সহজ উপায় হ’ল, খাদ্যের ডায়েরি বজায় রাখা এবং এর মাধ্যমে নিজের সমস্যা চিহ্নিত করা । বেশ কিছু খাবার নিজের ডায়েট থেকে বাদ দিন । যেমন দুগ্ধজাত দ্রব্য, গম, কিছু ফল (আপেল, আম, চেরি, তরমুজ), পেঁয়াজ, বাঁধাকপি, মটরশুটি এবং বাদাম।

৪) ডায়েট:  আপনার যদি কোষ্ঠকাঠিন্য-টাইপ আইবিএস থাকে তবে বেশি ফাইবার যুক্ত খাদ্য গ্রহণ করুন । ডায়রিয়া-টাইপ আইবিএস-এর রোগীদের দুগ্ধজাত দ্রব্য এড়ানো উচিত।

৫) ব্যায়াম: ব্যায়াম, উদ্বেগ এবং বিষণ্নতার লক্ষণগুলি হ্রাস করে। পাশাপাশি IBS-এর লক্ষণগুলিকেও কমাতে সাহায্য করে। প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে 5 দিন 15-30 মিনিটের জন্যে সহজ ব্যায়াম করা উচিত।

৬) অস্বাস্থ্যকর অভ্যাস: অত্যধিক কফি এবং চা ডায়রিয়া ধরণের কোষ্ঠকাঠিন্যকে আরও খারাপ করতে পারে এবং বুকজ্বালার লক্ষণগুলিকে বাড়িয়ে তুলতে পারে।
নিয়ন্ত্রিত জীবন, সুষম আহার আর চিকিৎসকের পরামর্শ আপনার পেট কে বিরক্তির হাত থেকে বাঁচাবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *