আজ খবর ডেস্ক- কেউ মজা করে বলছেন, “লক ডাউন” প্রজন্ম। কেউ আবার বলছেন, “অনলাইন পড়ুয়া”! প্রায় দু’বছর পর প্রথমে মাধ্যমিক আর এখন উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা। এই পর্বে পৌঁছে শিক্ষক সমাজ অন্তত হাড়ে হাড়ে টের পাচ্ছেন, এসব আর মজা নেই। এই মুহূর্তে জোরকদমে চলছে মাধ্যমিকের উত্তরপত্র মূল্যায়নের কাজ।
কিন্তু মূল্যায়ন তো দূরের কথা, এইসব উত্তরপত্রে চোখ বুলিয়ে রীতিমত হতভম্ব শিক্ষককুল। প্রথম কারণ, রেকর্ডসংখ্যক সাদা উত্তরপত্র জমা পড়েছে। অর্থাৎ উত্তরপত্রে প্রায় কিছুই লেখেনি পরীক্ষার্থীরা। কেউ কেউ আবার গোটা প্রশ্নপত্র হাতে লিখে উত্তরপত্র করিয়েছে।

এতো গেল একাংশের কথা। আরেকদল পরীক্ষার্থীর কান্ড-কারখানা দেখে রীতিমত তাজ্জব শিক্ষকরা।
মাধ্যমিকের (Madhyamik Exam 2022) উত্তরপত্রে কখনও রাজনীতির স্লোগান, কখনও আবার রুপোলি পর্দার সংলাপ!

জনৈক এক্সামিনারের অভিজ্ঞতা, সাদা খাতায় কিছুই লিখতে পারেনি এক পরীক্ষার্থী। কেবল লিখে দিয়েছে আল্লু অর্জুন( Allu Arjun) অভিনীত চরিত্র পুষ্পা রাজের নাম। জানিয়ে দিয়েছে, “পুষ্পা লিখেগা নেহি”।

দিন কয়েক আগেই সমাজ মাধ্যমে ঝড় তুলেছিল আরেকটি উত্তরপত্রের ছবি। যেখানে গোটা গোটা অক্ষরে লেখা ছিল “খেলা হবে”। প্রসঙ্গত, রাজনৈতিক মহলে রাজ্যের শাসকদলের তরফ থেকে দেওয়া এই স্লোগান জনপ্রিয় হয়েছে গত বিধানসভা নির্বাচনের আগে থেকে। তা বলে মাধ্যমিকের উত্তরপত্রে এহেন স্লোগান দেখে যারপরনাই চমকে উঠেছে শিক্ষক সমাজ।
তড়িঘড়ি উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের তরফে সাংবাদিক সম্মেলন করে জানিয়ে দেওয়া হয়, যদি উচ্চমাধ্যমিকের কোনও পড়ুয়া পরীক্ষার খাতায় এহেন স্লোগান লিখে আসে তবে সেই স্কুলকেই সাসপেন্ড করা হবে।

প্রায় দু’ বছর পর মাধ্যমিক পরীক্ষা হচ্ছে এবার অফলাইনে। কিভাবে পরীক্ষা নেওয়া হবে তা নিয়ে নির্দিষ্ট গাইডলাইন দিয়েছিল মধ্যশিক্ষা পর্ষদ। সূত্রের খবর, উত্তরপত্রের মূল্যায়নে গাফিলতি হলে সমস্যায় পড়তে হবে সংশ্লিষ্ট শিক্ষককে। আগামী ২৮শে এপ্রিলের মধ্যে উত্তরপত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ রয়েছে। সম্ভবত, মে মাসের মধ্যেই প্রকাশিত হবে ফলাফল।
এমন অনেক খাতা জমা পড়েছে, যেখানে একটিও শব্দ লেখা নেই! কোথাও আবার প্রশ্নপত্রটাই টুকে দিয়ে এসেছে পরীক্ষার্থীরা। কোথাও রাজনৈতিক স্লোগান অথবা জনপ্রিয় ফিল্মের ডায়লগ।

স্তম্ভিত শিক্ষকসমাজ মনে করছে, করোনা( Corona) আবহে বাড়িতে বসে অনলাইনে পড়াশোনায় সমস্যা তৈরি হয়েছে। এই প্রজন্মের অধিকাংশ পড়ুয়ার ক্ষেত্রেই সাধারণত দেখা যায় বাবা-মা দুজনেই চাকরী করেন। করণা আবহে work-from-home থাকলেও কম্পিউটার বা ল্যাপটপে নিজের নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত ছিলেন অধিকাংশ অভিভাবক। এদিকে স্কুল বন্ধ থাকায় অনলাইন ক্লাসের পরের সময়টুকু অধিকাংশ পড়োয়াল কম্পিউটারে গেম খেলে অথবা অন্যভাবে সময় কাটিয়েছে। ক্লাসে বসে শিক্ষকের মুখোমুখি পড়াশোনার যে নজরদারি থাকে, তা হয়নি।
মাধ্যমিক অথবা উচ্চমাধ্যমিক তো শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এই প্রজন্মের উচ্চশিক্ষা কিরকম হবে তাই নিয়ে উদ্বিগ্ন শিক্ষক সমাজ। অনেকেই বলছেন, ভিত মজবুত না হলে যেমন কাঠামো শক্তপোক্ত হয় না ঠিক সেভাবেই গোড়ার পড়াশোনায খামতি থাকলে একটা প্রজন্মের শিক্ষা সম্পূর্ণভাবে ত্রুটিপূর্ণ থেকে যেতে পারে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *