বিশেষ প্রতিবেদন: সাইদুল ইসলাম মন্টু, অস্ট্রেলিয়া

রাজনীতিকদের কাছে প্রেম যে “ব্রাত্য” নয়, সর্ব জনসমক্ষে তা বুঝিয়ে দিলেন অস্ট্রেলিয়ার নয়া প্রধানমন্ত্রী। সেদিন আর নেই, রাজনীতি করার জন্য প্রেমিক বা প্রেমিকাকে আড়ালে সরিয়ে রাখতে হবে। অথবা দূরে সরিয়ে দিতে হবে কাছের মানুষটিকে।
সপ্তাহ কয়েক আগেও তিনি এতটা আলোচনায় ছিলেন না। তবে যাঁর প্রেমিক অস্ট্রেলিয়ার (Australia) প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন, তাঁকে নিয়ে মাতামাতি হবে না, তা কি হয়?
এখন তিনি খবরের শিরোনামে। তাঁর নাম অস্ট্রেলিয়ার মানুষের মুখে মুখে। ঠিক ধরেছেন বলছি জোডি হেইডনের (Jodie Haydon) কথা।


গত শনিবার অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে জয় পেয়েছেন লেবার পার্টির (Labor Party) নেতা অ্যান্থনি আলবানিজ (Anthony Albanese)। জয়ের পর রাতে এক অনুষ্ঠানে যোগ দেন তিনি। সঙ্গে ছিলেন প্রেমিকা জোডি হেইডন। এ সময় তাঁর উদ্দেশে আলবানিজ বলেন, “আমার জীবনে আসার জন্য তোমাকে ধন্যবাদ”।

৫৯ বছর বয়সী আলবানিজের কিন্তু আগে বিয়ে হয়েছিল। সাবেক স্ত্রী কারমেল টেবাটের (Carmel Tebbutt) সঙ্গে ২০১৯ সালে বিচ্ছেদ হয় তাঁর।
টেবাট অস্ট্রেলিয়ার নিউ সাউথ ওয়েলস (New South Wales) প্রদেশের একজন মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। টেবাট নিজেও লেবার পার্টির সদস্য।
শনিবার রাতের অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক এই দম্পতির সন্তান নাথানও।
আলবানিজের ছয় সপ্তাহ ধরে চলা নির্বাচনী প্রচারে সঙ্গ দিয়েছিলেন প্রেমিকা জোডি হেইডন। প্রচারের শুরুর দিকে সিডনিতে (Sydney) রয়্যাল ইস্টার শোতে আলবানিজের পাশে ছিলেন তিনি। এমনকি উদ্ধার করা একটি কচ্ছপ দেখতে কুইন্সল্যান্ড (Queensland) প্রদেশের ফিৎজরয় দ্বীপে একই সঙ্গে ভ্রমণ করেছেন তাঁরা।

এসব ঘটনা হয়তো আদৌ ঘটতো না, যদি বছর দুয়েক আগে সিডনির একটি অনুষ্ঠানে না থাকতেন জোডি হেইডন। ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত শ্রোতাদের উদ্দেশে আলবানিজ জিজ্ঞাসা করেছিলেন, অস্ট্রেলিয়ার রাগবি ক্লাব সাউথ সিডনি রেবিটোহস (South Sydney Rabbitohs) কোনও ভক্ত আছেন কি না।


সঙ্গে সঙ্গে জবাব দিয়েছিলেন জোডি হেইডন। আলবানিজের সঙ্গে সেই প্রথম দেখা তাঁর।
সেদিনের ঘটনা নিয়ে চলতি বছরের শুরুতেই অস্ট্রেলিয়ার একটি ম্যাগাজিন ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান ওমেনস উইকলি’তে কথা বলেছিলেন আলবানিজ–জোডি হেইডন।
সেখানে লেবার পার্টির এই নেতা বলেন, ওই অনুষ্ঠানে প্রশ্ন করার পর জোডি চিৎকার করে জবাব দিয়েছিলেন, ‘এই যে রেবিটোহসের ভক্ত’। এরপরই দুজনের পরিচয় হয়।

ওই আলাপচারিতায় জোডি হেইডন বলেন, “আমাদের সে সময় কোনও সম্পর্কে যাওয়ার বিষয়টি মাথায় ছিল না। আমি জীবনের একটি পর্যায়ে পৌঁছেছিলাম। আর একাকি জীবন উপভোগ করছিলাম”।
এরপর একদিন সিডনির একটি পানশালায় দেখা করেন দুজন। ‘দ্য অস্ট্রেলিয়ান ওমেনস উইকলি’কে জোডি হেইডন বলেন, “আমরা ভেবেছিলাম সেটা হবে শুধুই একসঙ্গে দুজন বসে পান করা। তবে আমরা একে অপরের সঙ্গে জড়িয়ে পড়লাম। আর এভাবেই সম্পর্কটা শুরু হল”।

তবে করোনা মহামারির কারণে প্রথমে দুজনের সম্পর্কের বিষয়টি সেভাবে সামনে আসেনি। জানাজানি হয় ২০২০ সালের জুনে। সে বছর তাঁদের চুমু খাওয়ার একটি ছবি ছড়িয়ে পড়ে।
৪৩ বছর বয়সী জোডি হেইডনের জন্ম সিডনিতে। বাবা–মা দুজনই স্কুলশিক্ষক। তাঁর বেড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়ার সেন্ট্রাল কোস্ট অঞ্চলে। আর চাকরি–বাকরির কারণে বড় একটা সময় কেটেছে মেলবোর্ন ও সিডনিতে। তবে জোডি হেইডন এখন বসবাস করছেন সিডনির স্ট্যানমোর এলাকায়। কাছেই ম্যারিকভিলে থাকেন আলবানিজ।

নির্বাচনী প্রচারে আলবানিজের পাশে থাকতে পেরে খুশি জোডি হেইডন। এর মধ্যেও নিজের কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি। নিজেকে জড়াতে চান না রাজনীতির সঙ্গে।
মার্কিন গণমাধ্যম ‘নিউজ কর্প’কে তিনি বলেছেন, “আমার কাজ হবে নিজের কাজকর্ম চালিয়ে যাওয়া, আর আলবানিজকে তাঁর কাজে মন দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া”।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *