আজ খবর ডেস্ক: শরীরের বিকল লিভার হোক অথবা কিডনি, চিকিৎসা বিজ্ঞানের নতুন দিশা বলছে প্রয়োজনে এই সবকিছুই বদল করা সম্ভব।
তবে শরীরের যে কোন অঙ্গ বদল এর কথা শুনতে যতটা সহজ, কার্যক্ষেত্রে ঠিক ততটাই কঠিন। কোনও ব্যক্তির দেহ থেকে কিডনি, লিভার, হৃদপিণ্ড পরিবর্তনের সময় সবথেকে সমস্যায় পড়তে হয় রক্তের গ্রুপ ম্যাচ করানোর জন্য।
অসংখ্য পরীক্ষা করাতে হয়। যা কিছু সংখ্যক মানুষের কাছে আর্থিকভাবে অসম্ভব হয়ে পড়ে।
আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এবং গবেষণা এই ধারায় কি নতুন বদল আনলো? কার্যত যুগান্তকারী এই বিষয়টি নিয়েই তুমুল আলোড়ন পড়েছে দিল্লির (Delhi) চিকিৎসক মহলে।
কারণ, চিকিৎসকদের একাংশের দাবি, লিভার বদলের ক্ষেত্রে দাতা ও গ্রহীতার মধ্যে রক্তের গ্রুপ ম্যাচ না হলেও অপারেশনের সাফল্য আসতে পারে।

ডাঃ অরভিন্দর সোইন (Arvinder Soin), গুরুগ্রামের মেদান্ত হাসপাতালের লিভার ট্রান্সপ্লান্ট বিভাগের অন্যতম সার্জন।
১৯৯৮ সালে ভারতের প্রথম লিভার ট্রান্সপ্লান্ট পরিচালনা করেছিলেন এই চিকিৎসক।
নতুন গবেষণা প্রসঙ্গে তিনি সংবাদ মাধ্যমে জানিয়েছেন, “আমাদের দল ২৩ বছর আগে ভারতে লিভার প্রতিস্থাপন শুরু করেছিল এবং তারপর থেকে আমরা প্রায় ৩,৬০০ টি ক্ষেত্রে এই পদ্ধতিতে অপারেশন করেছি। বছরের পর বছর ধরে, আমরা ক্রমাগত উদ্ভাবনের চেষ্টা করেছি যাতে আরও বেশি রোগীকে বাঁচানো সম্ভব হয়। আরও বেশি মানুষ এই চিকিৎসা করাতে পারেন।”

পশ্চিমের অধিকাংশ দেশগুলোতে মূলত ‘মৃত ডোনার ট্রান্সপ্লান্টেশন’ (Dead Donor Transplantation) প্রাধান্য পায়। কিন্তু ভারতে ৮৫ শতাংশ লিভার ট্রান্সপ্লান্টের ক্ষেত্রে জীবিত দাতাদের ব্যবহার করা হয়।
আমাদের দেশে প্রতি বছর প্রায় আড়াই থেকে তিন লাখ মানুষ লিভার জনিত রোগ বা ক্যান্সারে আক্রান্ত হন, যাদের মধ্যে প্রায় ৫০,০০০ মানুষ কে প্রতিস্থাপনের মাধ্যমে বাঁচানো সম্ভব।
সারা দেশে অস্ত্রোপচারের জন্য ১০০ টিরও কম কেন্দ্র রয়েছে, যেখানে এক সঙ্গে বছরে প্রায় ১৮০০টি লিভার ট্রান্সপ্লান্ট হয়ে থাকে।

২০১৯ সালে একটি লিভার ট্রান্সপ্লান্ট ডেটা ব্যাঙ্ক স্থাপন করা হয়েছিল। এই কেন্দ্রগুলি থেকে অপারেশনের পরে বেঁচে থাকা রোগীদের সংখ্যা ও তাঁরা কেমন আছেন সেই তথ্য সংগ্রহের জন্য।
যখন একটি পরিবার থেকে দাতার রক্তের গ্রুপ প্রাপকের সঙ্গে মিলে না, তখন সার্জনরা দুটি পদ্ধতির একটি চেষ্টা করতে পারেন –
১)একটি অদলবদল বা একটি ABO-অসঙ্গতিপূর্ণ প্রতিস্থাপন, যেখানে ট্রান্সপ্লান্টটি অমিল রক্তের গ্রুপের একজন দাতাকে ব্যবহার করে করা হয়।
২) একটি অদলবদল করা হয় যখন দুটি ভিন্ন পরিবারের দাতারা একে অপরের প্রাপকের রক্তের গ্রুপের সঙ্গে মিলে যায়। দাতা এবং প্রাপক উভয় জুটিকে একই দিনে হাসপাতালে ডাকা হয় এবং দুটি ট্রান্সপ্লান্টেশন সার্জারি একই সঙ্গে পরিচালিত হয়।

রোগীদের তথ্য জমা আছে এমন একটি বড় ডাটাবেস, বেশ কয়েকটি অপারেশন থিয়েটার এবং একটি বিশাল ট্রান্সপ্লান্টেশন টিম সহ শুধুমাত্র উচ্চ আয়তনের কেন্দ্রগুলিতে এটি সম্ভব।
অন্যদিকে , ABO-অসঙ্গতি প্রতিস্থাপন হলএকটি বৈজ্ঞানিক চ্যালেঞ্জ। যদি একজন ব্যক্তিকে ম্যাচ না হাওয়া গ্রুপের রক্ত দিয়ে ট্রান্সফিউজ করা হয়, তবে এর ফলে ইমিউন সিস্টেমের একটি গুরুতর প্রতিক্রিয়া হতে পারে। যেখানে দান করা রক্তের কোষগুলি “ছিন্ন” হয়ে যায়। যার ফলে শক, কিডনির সমস্যা এবং এমনকি মৃত্যুও ঘটে।
তাহলে, কীভাবে সার্জনরা ভিন্ন রক্তের গ্রুপের একজন ব্যক্তির থেকে একটি সম্পূর্ণ অঙ্গ প্রতিস্থাপন করতে সক্ষম হন?


পদ্ধতিতে সাফল্য অর্জনের জন্য, রোগীদের প্রতিস্থাপনের তিন সপ্তাহ আগে একটি ইমিউনোমোডুলেশন প্রোটোকলের (Immuno Modulation Protocol) মধ্য দিয়ে যেতে হয়। যার মধ্যে প্রধানত দুটি জিনিস অন্তর্ভুক্ত থাকে। এক, বি কোষগুলিকে মেরে ফেলার জন্য একটি ওষুধ ব্যবহার করা হয় যা অন্যান্য রক্তের গ্রুপের বিরুদ্ধে অ্যান্টিবডি (Antibody) তৈরি করে।
দুই, প্লাজমাফেরেসিস (Plasmapheresis) – একটি প্রক্রিয়া যা রক্তকে শরীরের বাইরের উপাদানগুলির থেকে আলাদা করে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *