আজ খবর ডেস্ক: এই রাজ্যে সরকারি হাসপাতালের পরিষেবা নিয়ে অভিযোগের অন্ত নেই। অনেকেই বলেন, বহিরাঙ্গে রংচঙে ঝাঁ-চকচকে হলেও সরকারি হাসপাতালে অন্দরের অবস্থা রীতিমত করুণ।
কলকাতা এসএসকেএম (SSKM) হোক অথবা উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজ, ওপিভি (OPD) থেকে মহিলা বা পুরুষ ওয়ার্ড সর্বত্রই যেন অব্যবস্থার ছবি।
অথচ আমজনতার কাছে এখনো হঠাৎ কিছু হলে সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যাওয়া ছাড়া অন্য উপায় থাকে না। কারণ বারংবার সরকারি নির্দেশিকা সত্বেও বেসরকারি হাসপাতালগুলো “স্বাস্থ্যসাথী” কার্ডের বিনিময়ে পরিষেবা দিতে চায়না।

সরকারি হাসপাতাল সম্পর্কে এমনই এক অভিযোগ ঘিরে আপাতত তোলপাড় রাজ্যের চিকিৎসা মহল। কেউ বলছে নৃশংস! কেউ আবার বলছেন, গা শিউরে ওঠার মত ঘটনা।
ঠিক কী হয়েছে?
২৯শে মে অর্থাৎ রবিবার শিলিগুড়িতে (Siliguri) একটি ভয়াবহ বাইক দুর্ঘটনা ঘটে। গুরুতরভাবে আহত হন সঞ্জয় সরকার নাকে এক যুবক। যিনি আবার ঘটনাচক্রে “বাংলা পক্ষ” (Bangla Pokkho) সংগঠনের একজন সক্রিয় সদস্য।

এই দুর্ঘটনায় তাঁর একটি হাত কাটা যায়। এরপর স্থানীয় পুলিশ তাঁকে কাটা হাত সহ উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজে (North Bengal Medical College) নিয়ে যায়।
আহত যুবকের সঙ্গে যারা ছিলেন তাদের থেকে জানা যায়, কর্তব‍্যরত চিকিৎসক প্রাথমিক ভাবে আহতের পরিবারকে জানান ক্ষীণ হলেও হাত অপারেশনের মাধ‍্যমে জোড়া লাগানো সম্ভব।


কিন্তু পরিবারের তরফে অভিযোগ জানানো হয়, ওই যুবকের জন্য কোনও উপযুক্ত চিকিৎসার ব‍্যবস্থাই হয়নি।
আর তারপরেই সোমবার সকালে চোখে পড়ে নিশংস সেই দৃশ্য। যা শুনে আঁতকে উঠেছেন চিকিৎসক নার্স সহ অন্যান্য রোগীরাও। এদিন সকালে দেখা যায়, সেই কাটা হাতটি মুখে নিয়ে হাসপাতাল চত্বরে ঘুরে বেড়াচ্ছে একটি কুকুর।

প্রসঙ্গত উল্লেখ্য, দুর্ঘটনার ফলে মানুষের শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন কোনও অঙ্গ সর্বোচ্চ ২৪ ঘন্টার মধ্যে অপারেশন করে প্রতিস্থাপন সম্ভব। এরপরে অঙ্গ প্রতিস্থাপন হলেও সংশ্লিষ্ট স্নায়ু (Nerve) বিকল হয়ে যাওয়ায় অস্ত্রোপচার সফল হয় না।
চিকিৎসকদের মতে তার জন্য প্রাথমিক কিছু শর্ত মানতে হয়। যার মধ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হল, উপযুক্ত রাসায়নিক দিয়ে শরীরের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া অঙ্গটির রক্ষণাবেক্ষণ। উত্তরবঙ্গ মেডিকেল কলেজের ঘটনায়, কাটা হাতটি যে উপযুক্ত উপায়ে সংরক্ষণ করা হয়নি তা স্পষ্ট।

এই মর্মান্তিক ঘটনার পরিপ্রক্ষিতে “বাংলা পক্ষ” সংগঠনের পক্ষ থেকে এদিন কলকাতা মেডিকেল কলেজে যাওয়া হয়। সেখানে তাঁরা মেডিক্যাল কলেজের সুপার ও অধ‍্যক্ষের সঙ্গে দেখা করে এই ভয়ানক ঘটনায় অভিযুক্তদের শাস্তি ও আহত যুবকের দ্রুত সর্বোচ্চ চিকিৎসার দাবি জানান। কর্তৃপক্ষ সর্বোচ্চ চিকিৎসার আশ্বাস দিয়ে জানায় উক্ত ঘটনার তদন্ত ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গিয়েছে। দাবি এই সংগঠনের।
সংগঠনের সদস্যরা প্রশাসনের কাছে কর্মক্ষমতা হারানো গরিব পরিবারের একমাত্র রোজগেরে সদস‍্য সঞ্জয়ের জন‍্য উপযুক্ত ক্ষতিপূরণ দাবি করেছেন ।

লাস্ট আপডেট হিসেবে জানা গিয়েছে, শিলিগুড়ির ওই যুবকের হাত কেটে যাওয়া এবং সেই হাত হাসপাতাল থেকে কুকুর নিয়ে যাওয়ার ঘটনায় রাজ্য সরকারের ওপরমহল থেকে হস্তক্ষেপ করা হয়েছে।
কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে বলেও জানা যাচ্ছে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *