আজ খবর ডেস্ক: ফের জট পাহাড়ে। জিটিএ(GTA) নির্বাচন না করার দাবিতে রিলে অনশনে বসল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা (GJM)।
এই মুহূর্তে দার্জিলিং(Darjeeling) রীতিমত জমজমাট। পর্যটকদের ভিড় উপচে পড়ছে। ম্যাল, বাতাসিয়া লুপ, টয় ট্রেন অথবা গ্লেনারিজ! সর্বত্রই পর্যটক ভর্তি। লকডাউন কাটিয়ে উঠে একসঙ্গে এত ভিড় দেখে ব্যবসায়ীদের মুখেও চওড়া হাসি। কিন্তু তারমধ্যেই পাহাড় রাজনীতিতে ফের ঘনীভূত বিক্ষোভ, আন্দোলনের মেঘ।

দিন কয়েক আগেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে(Mamata Banerjee) চিঠি লিখে জিটিএ নির্বাচন পিছিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা বিমল গুরুং(Bimal Gurung)। তবে রাজ্য প্রশাসনের তরফে গুরুংয়ের ওই চিঠিকে মোটেও গুরুত্ব দেওয়া হয়নি।
সেই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছিল। এবার সত্যিই জিটিএ নির্বাচন ইস্যুতে রিলে অনশন শুরু করল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা।

পাহাড়ে এখন পর্যটনের মরসুম। সঙ্গে আবার বুদ্ধ পুর্ণিমা। তাই চৌরাস্তার মোড়ে কর্মসূচির অনুমতি মেলেনি। আপাতত সিংমারির দলীয় কার্যালয়েই রিলে অনশন শুরু করলেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার নেতা-কর্মীরা।
তবে সেখানে অন্যান্যরা থাকলেও নেই বিমল গুরুং। মুখে কিছু না বললেও, উপস্থিত বহু নেতা -কর্মীই আড়ালে আলোচনা করছেন গুরুং কে নিয়ে।

প্রসঙ্গত, জিটিএ নির্বাচন নিয়ে প্রথম থেকেই মোর্চার সঙ্গে মতবিরোধ তৈরি হয়েছে রাজ্যের। সম্প্রতি পাহাড়ে গিয়ে মমতা ঘোষণা করে এসেছিলেন জিটিএ নির্বাচন করতে চায় রাজ্য। প্রশাসনের অন্দরে খবর, পাহাড়ের উন্নয়ন বাবদ এই সংস্থাকে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয়েছিল, তার পূর্ণাঙ্গ হিসেব মেলেনি।
মূলত বিমল গুরুং এর আমলে বরাদ্দ হওয়া অর্থ থেকে কয়েক হাজার কোটি টাকার হিসেব দেওয়া বাকি আছে।

মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণার পর থেকেই দেখা গিয়েছে, পাহাড়ের অন্যান্য রাজনৈতিক দল জিটিএ নির্বাচনের জন্য তৈরি থাকলেও রাজি নন বিমলরা।
এমনকি নতুন দল হামরো পার্টি (Hamro Party) দার্জিলিং পুরসভার ক্ষমতায় আসার পর এবার জিটিএ নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত।
কিন্তু, বিমলদের দাবি ছিল, জিটিএ নির্বাচনের আগে গোর্খা টেরিটোরিয়্যাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে সর্বোচ্চ ক্ষমতা দিক রাজ্য সরকার।

১৪ তারিখ দার্জিলিঙের একটি হোটেলে দলের কর্মীদের সঙ্গে প্রস্তাবিত জিটিএ নির্বাচন নিয়ে বৈঠক করেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সুপ্রিমো বিমল গুরুং। সেখান থেকেই অনশনের হুঁশিয়ারি দেন বিমল গুরুং। দলের নেতাকর্মীদের কাছে তিনি বলেন, রাজ্য তাঁদের দাবি নিয়ে চুপ থাকলে বা জোর করে জিটিএ নির্বাচন চাপিয়ে দিলে চুপ থাকবে না গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। প্রয়োজনে আমরণ অনশনে নামবে। এই প্রসঙ্গে চিঠিও দেওয়া হয়েছে নবান্নে।
সেই সিদ্ধান্ত মেনেই সোমবার বুদ্ধ পুর্ণিমার দিন দার্জিলিংয়ের সিংমারি দলীয় কার্যালয়ে রিলে অনশন শুরু করেন মোর্চার কর্মীরা।

এরপরেই রহস্যের পর্দা ফাঁস। জানাযায় নেতাকর্মীদের রিলে অনশনের বসালেও বিমল গুরুং নিজেই পাহাড়ে নেই। দার্জিলিং পাহাড়ের বদলে বিমল গুরুং এই মুহূর্তে রয়েছেন হিমাচল প্রদেশে(Hinachal Pradesh)।
গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি(Roshan Giri) জানান, “সিমলা থেকে দলের সুপ্রিমো বার্তা দিয়েছেন চৌরাস্তায় অনশনের জন্য। তবে সংশ্লিষ্ট দফতর বন্ধ থাকায় চৌরাস্তায় কর্মসূচির অনুমতি মেলেনি। তাই দলীয় কার্যালয় থেকেই অনশনের শুরু। পাহাড়ের রাজনৈতিক সমস্যার সমাধান বা গোর্খাল্যান্ডের দাবি আমরা করছি না। আমাদের দাবি, শিলিগুড়ি, তরাই, ডুয়ার্সকে গোর্খা

টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের অন্তর্গত করা হোক। ২০১১ সালের ১৮ জুলাই যে চুক্তি সাক্ষর হয়েছিল জিটিএ নিয়ে সেই হিসেবে সমস্ত ক্ষমতা দেওয়া হোক। সমস্ত দফতর জিটিএ কে হস্তান্তর করা হোক। না হলে আজকে পাঁচজন অনশনে বসেছেন। আগামীকাল অন্য পাঁচজন বসবেন।”

রাজনৈতিক মহলের মতে, জিটিএ-র আড়ালে এভাবেই আরেকবার গোর্খাল্যান্ডের দাবি উস্কে দিলেন রোশন গিরি।
গোর্খাল্যান্ড দাবিতেও তাঁরা শিলিগুড়ি, তরাই ও ডুয়ার্সকে একসঙ্গে বেঁধেছিলেন।


তবে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার অনশন নিয়ে ভারতীয় গোর্খা প্রজাতান্ত্রিক মোর্চার সভাপতি অনিত থাপা বলেন, “আগে জিটিএ নির্বাচন দরকার, বোর্ড গঠন হওয়ার পর বিভিন্ন দাবি নিয়ে আলোচনা করে রেজিলিউশন পাশ করা যাবে। এই ধরনের কর্মকাণ্ডের কোনও মানে নেই।”


“হামরো পার্টি”র সুপ্রিমো অজয় এডওয়ার্ডও জানান, কোন দল কী করল তা নিয়ে তাঁদের মাথাব্যথা নেই। গোর্খাল্যান্ড কোনও একটি রাজনৈতিক দলের ইস্যু নয়। আলাদা রাজ্য গোর্খাল্যান্ড সকলের মনের ইচ্ছে। তবে জিটিএ নির্বাচনের কোনও মানে না থাকলেও জিটিএ নির্বাচন হলে তাঁরা সেখানে অংশ নেবেন।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *