আজ খবর ডেস্ক: সেই কবেই তো রবি ঠাকুর লিখেছিলেন, “ইহার চেয়ে হতেম যদি আরব বেদুইন/ চরণতলে বিশাল মরু, দিগন্তে বিলীন”।
বস্তুত গোটা বিশ্ব ভারতীয়দের চেনে “ভ্রমণপিপাসু” হিসেবে।
সত্যজিৎ রায়ের “সোনার কেল্লা”য় আমরা পেয়েছিলাম এক “গ্লোব ট্রটার”কে। জানা গিয়েছিল বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি “চাঁদের পাহাড়” লিখেছিলেন নিছকই বিদেশি ভ্রমণ ম্যাগাজিন পড়ে।
সুতরাং এ কথা বলাই যায়, বাঙালি তথা ভারতীয়রা একদিকে যেমন পর্যটন ভালোবাসেন অন্যদিকে বেড়ানো কে ঘিরে তাঁদের ফ্যান্টাসি (Fantasy), সৃষ্টিশীলতা (Creativity) এক অন্য মাত্রায় পৌঁছতে পারে।

তবে শুধু বেড়াতে যাওয়াই নয়, ভারতীয় সংস্কৃতি বলে, “অতিথি দেব ভব”। ফলে উন্নয়নশীল একটি দেশ হয়েও নিজেদের সীমিত সামর্থ্য নিয়ে নানান দেশ থেকে আসা পর্যটকদের মনোরঞ্জন ভারতীয়দের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারী, পাহাড়, মরুভূমি হয়ে সমুদ্র এককথায় প্রাকৃতিক সম্পদে আগাগোড়া ঠাসা আমাদের দেশ।


কিন্তু, ভ্রমণ ও পর্যটন বিভাগের সূচকে সম্প্রতি সামনে এসেছে এক নতুন তথ্য। বিশ্ব ভ্রমণ এবং পর্যটন সূচকে (International Travel And Tourism Index) ভারত ৫৪ তম স্থানে রয়েছে।


তবে, দক্ষিণ এশিয়ার (South Asia) ভ্রমণ তালিকায় ভারত এখনও শীর্ষে রয়েছে। ওয়ার্ল্ড ইকনমিক ফোরামের (World Economic Forum) এই সূচক নিয়ে আপাতত গবেষণায় ব্যস্ত বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা।


হঠাৎ কেন পাহাড়, জঙ্গল, মরুভূমি, সমুদ্র অথবা প্রাচীন আর্য সভ্যতা থেকে গৌতম বুদ্ধের চারণ ভূমির প্রতি বিদেশি পর্যটকদের অনীহা কেন?

তথ্য বলছে, দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশগুলোর মধ্যে পর্যটনের নিরিখে ভারত এখনও শীর্ষে। তবে মূলত পাশ্চাত্যের দেশগুলো যেমন ইউরোপ, আমেরিকা থেকে ভারতে পর্যটনের ঢল বেশ কিছুটা কমেছে।
যদিও বিশ্ব পর্যটন মানচিত্র নিজেদের একনম্বর জায়গায় নিয়ে গিয়েছে জাপান (Japan)। দ্বিতীয় স্থানে আছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (USA)।
গবেষকদের ধারণা, করোনা (Covid 19) অতিমারীর কারণে পর্যটন ক্ষেত্রে ভারতের এই পদস্খলন।
তবে গবেষকরা এও বলছেন, ভারত ধীরে ধীরে ধীরে অতিমারী দ্বারা সৃষ্ট ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে উঠছে।
ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরাম (WEF) সমীক্ষা অনুসারে , ভারত গত কয়েক মাসে ভ্রমণ ও পর্যটন ক্ষেত্রে নিজের জায়গা ‘পুনরুদ্ধারের লক্ষণ’ দেখিয়েছে।


সেইসঙ্গে একথা মনে রাখা জরুরি, ভারতীয় অর্থনীতির অন্যতম স্তম্ভ পর্যটন থেকে আসা রাজস্ব।

এই সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভ্রমণ ও পর্যটন ক্ষেত্র অর্থাৎ টিএন্ডটি সেক্টরকে টেকসই এবং বিকাশকে সক্ষম করার জন্য একদিকে যেমন পর্যটন স্থলকে পরিবেশবান্ধব করতে হবে, অন্যদিকে পর্যটকদের স্বাচ্ছন্দ্যের কথা মাথায় রাখা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।


এই তালিকায় উল্লিখিত শীর্ষ দশটি দেশ হল জাপান, এরপর রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, স্পেন, ফ্রান্স, জার্মানি, সুইজারল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাজ্য, সিঙ্গাপুর এবং ইতালি।
WEF উল্লেখ করেছে, কোভিড টিকা প্রদানের হার বৃদ্ধি, কঠোর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা এবং অর্থনৈতিক বৃদ্ধির কারণে ভারতের জন্য পর্যটন ক্ষেত্র পুনরুদ্ধার সফল হয়েছে।

তবে কিছু ক্ষেত্রে, অসম “ভ্যাকসিন বিতরণ, ক্ষমতার সীমাবদ্ধতা, শ্রমের ঘাটতি, সরবরাহ ব্যবস্থায় ব্যাঘাতের কারণে পুনরুদ্ধার এখনও ধীর।
আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে , ডব্লিউইএফ-এর বিমান চলাচল, ভ্রমণ এবং পর্যটনের প্রধান লরেন আপপিঙ্ক বলেছেন, “কোভিড শাটডাউনগুলি বিশ্বের অনেক অর্থনীতিতে ভ্রমণ এবং পর্যটনের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের উপর আবার জোর দিয়েছে। গোটা বিশ্ব মহামারী থেকে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে। এর জন্য আগামী কয়েক দশক ধরে ভ্রমণ, পর্যটন অভিজ্ঞতা এবং পরিষেবা প্রদানের জন্য অর্থনীতিগুলিকে একটি শক্তিশালী এবং স্থিতিস্থাপক পরিবেশ তৈরিতে বিনিয়োগ করতে হবে।”


দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন সমর্থন করার জন্য, কার্যকর প্রচেষ্টা গ্রহণ করা প্রয়োজন।
এর জন্য স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা ব্যবস্থা, পরিবেশের উন্নয়ন এবং ডিজিটাল প্রযুক্তিতে বিনিয়োগের মত বিষয়গুলিকে অগ্রাধিকার দিয়ে পর্যটকদের আস্থা বাড়াতে হবে।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *