আজ খবর ডেস্ক: বিশেষ প্রতিবেদন

দেশ জোড়া আর্থিক অনটনের মধ্যে আমজনতার ভরসা সরকারি ব্যাংক। বিশেষত প্রবীণ নাগরিকদের (Senior Citizen) একটা বড় অংশ মনে করেন, সরকারি ব্যাংক হল এমন জায়গা যেখানে জমানো টাকা সুরক্ষিত থাকবে।
অথচ ভারতবর্ষে গত কয়েক বছরে শুধু নয়, স্বাধীনতা-উত্তর সময়ে বারবার ব্যাংক জালিয়াতির ঘটনায় নাম জড়িয়েছে বিভিন্ন সরকারি ব্যাংকের।
ইন্দিরা গান্ধীর প্রধানমন্ত্রীত্বে ব্যাংক জাতীয়করণের কাজ হলেও, সার্বিক পরিস্থিতি যে খুব একটা বদলাই নি তার অন্যতম নিদর্শন সাম্প্রতিক মেহুল চোকসি (Mehul Choksi) বা নীরব (Nirav Modi) মোদির ঘটনা।


শুধুমাত্র আর্থিক সুরক্ষাই নয়, ব্যাংক সেক্টরে গ্রাহক পরিষেবা একটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। প্রত্যন্ত গ্রামের কথা বাদ দেওয়া যাক, শহর কলকাতায় বেহাল ব্যাঙ্কিং পরিষেবা। যা নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েছেন প্রবীণ নাগরিকদের একটা বড় অংশ।

ভারতের মত দেশে অধিকাংশ সরকারি প্রকল্পের টাকা সরকারি ব্যাংক এর মাধ্যমেই একাউন্টে ঢোকে। পেনশনভোগীদের ক্ষেত্রেও ব্যবস্থা সে রকমই। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সরকারি চাকরিজীবীদের স্যালারি একাউন্ট (Salary Account) হিসেবেও সরকারি ব্যাংকগুলিকে প্রাধান্য দেওয়া হয়।


এছাড়াও রয়েছে বিধবা ভাতা (Widow Pension), জীবন প্রমাণপত্র (Life Certificate), ফিক্স ডিপোজিট নবীকরণ (Fixed Deposit Renewal), কেওয়াইসি (kyc renewal) সহ একাধিক কাজে প্রবীণ নাগরিকদের ব্যাংকে যেতে হয়।
অনেক ক্ষেত্রে, বৃদ্ধ বাবা-মাকে প্রবাসী সন্তান নিয়মিত যে অর্থ পাঠিয়ে থাকেন তাও ঢোকে এই অ্যাকাউন্টে। ফলে সাধ বা সামর্থ্য না থাকলেও নিয়ম করে প্রবীণ নাগরিকদের আসতে হয় ব্যাংকে।

এমনই এক ছবি আজ আপনাদের সামনে তুলে ধরছে এই প্রতিবেদন। পাঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাংক (PNB) সম্পর্কে কমবেশি প্রায় সকলেই অবহিত।
সরকারি ব্যাংক হলেও গত কয়েক বছরে একাধিকবার “ব্যাংক জালিয়াতি”, “ব্যাংক প্রতারণা”র ঘটনায় সামনে এসেছে এই প্রতিষ্ঠানের নাম।
শুধু তাই নয়, গত কয়েক বছরে বেশ কয়েকটি রুগ্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক’কে পিএনবি’র সঙ্গে জুড়ে দেওয়ার ফলে এটি এখন স্টেট ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার (SBI) পরে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংক।

দক্ষিণ কলকাতার গড়িয়াহাট মোড়ে পিএনবি’র বালিগঞ্জ ব্রাঞ্চ। একটি বহুতলের দো’তলায় অফিস। শনি, রবি বাদে সপ্তাহের যে কোনও দিন অফিস টাইমে এই ব্রাঞ্চের সামনে আপনার চোখে পড়বে করুণ কিছু দৃশ্য।
১) ব্যাংকে কাজ করাতে এসে নিচে টুলের ওপর বসে রয়েছেন প্রবীণ নাগরিক।
২) পাশে শৌচালয়, নাক মুখ চেপে দুর্গন্ধ এড়ানোর ব্যর্থ চেষ্টায় বয়স্ক মানুষরা
৩) একটি মাত্র টুল। তাও চেয়ে নিতে হয় ব্যাংকের নিরাপত্তা রক্ষীর থেকে
৪) সিঁড়ির মুখে দাঁড়িয়ে হাঁপাচ্ছেন বহু বৃদ্ধ/বৃদ্ধা
৫) কেউ এসেছেন পরিজন নিয়ে। কেউ আবার বাড়ির পরিচারককে সঙ্গে নিয়ে ব্যাংকের কাজ করতে এসেছেন। শারীরিক অসুস্থতা অথবা বার্ধক্যের কারণে কার্যত
চোখের জল সামলে সিঁড়ি ভাঙছেন।


উপরের এই ঘটনাগুলোর মাত্র একটাই কারণ। তা হল, এই বহুতলে লিফ্ট (Lift) থাকলেও তা ব্যবহারের অনুমতি নেই ব্যাংকের গ্রাহকদের। যেহেতু ব্যাংক নিজেই এখানে ভাড়াটে।

aajkhobor.com কথা বলেছিল এমন একাধিক প্রবীণ নাগরিকদের সঙ্গে।


নিচে টুলে বসে থাকা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বয়স্ক মহিলা জানালেন, “ব্যাংকের একটা জরুরি কাজের জন্য এসেছি। আমার পা ভাঙা। ছেলে ওপর থেকে একজন ব্যাংক কর্মীকে ডেকে নিয়ে আসবে, ওনার সামনে আমাকে সই করতে হবে।”


আরেক গ্রাহক, বয়স প্রায় ৮০। কোমরে অর্থোপেডিক বেল্ট বাধা। কোনরকমে রাস্তা পার হয়ে এগিয়ে এলেন ব্যাংকের দিকে।

aajkhobor.com কে জানালেন নিজের ক্ষোভের কথা। বললেন, হাঁটতে অসুবিধা হয়, চিকিৎসকের ও বারণ আছে। কিন্তু বারবার ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়ে ও লিফট ব্যবহারের অনুমতি মেলেনি।

কখনও কেন্দ্রীয় সরকার নির্ধারিত ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে অনীহা। কখনও সামান্য একটি বিষয় জানাতে গ্রাহকদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার। শহর কলকাতার একাধিক রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের চিত্র কমবেশি এরকমই।
বেহাল ব্যাংক পরিষেবা নিয়ে আরো খবর জানতে চোখ রাখুন aajkhobor.com এর পাতায়। আপনাদের যদি কোনও অভিযোগ থাকে, জানান আমাদের।

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *