আজ খবর ডেস্ক: শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি মামলায় এই মুহূর্তে তোলপাড় রাজ্য রাজনীতি। একদিকে তৃণমূল কংগ্রেসের একাধিক মুখপাত্র জানাচ্ছেন, কোনও ব্যক্তির ভুলের দায় দল নেবে নেবে না। অন্যদিকে প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় (Partha Chatterjee) সিবিআই (CBI)- এর মুখোমুখি হওয়ার পর এবার খোঁজ চলছে, কোথায় হারিয়ে গেলেন শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারী?
হাইকোর্টের নির্দেশের পর গতকাল জলপাইগুড়ি থেকে কলকাতা আসার পথে কার্যত উধাও শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারী।
বুধবার বিকেলে একদিকে যখন সিপিএম (CPIM) ছাত্রসংগঠন এসএফআইয়ের (SFI) পক্ষ থেকে নিজাম প্যালেসের সামনে “চোর ধরো, জেলে ভরো” কর্মসূচি নেওয়া হল, অন্যদিকে টর্চ হাতে শহরের বিভিন্ন এলাকায় পরেশ অধিকারীকে খুঁজলেন এসএফআই নেতারা।
আদালতের নির্দেশ শুনে মঙ্গলবার রাতে জলপাইগুড়ি রোড স্টেশন থেকে শিয়ালদহগামী পদাতিক এক্সপ্রেসে ওঠেন পরেশ অধিকারী এবং তাঁর মেয়ে অঙ্কিতা৷ ট্রেনের এইচ -১ কামরার সি কেবিনে ছিলেন তাঁরা৷ ট্রেনে থাকা এক রেলকর্মী দাবি করেন, মন্ত্রী আসছেন বলে তাঁদের কাছে খবর ছিল৷
সেই মত ভোরবেলা মন্ত্রীর কিছু প্রয়োজন কি না, তা জানতে এইচ-১ কামরার সি কেবিনে যান তিনি৷ কিন্তু সেখানে ছিলেন না মন্ত্রী বা তাঁর মেয়ে৷ অন্যান্য কয়েকজন যাত্রী জানান, ট্রেন বর্ধমানে ঢোকার আগেই নিজেদের মালপত্র নিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যান পরেশ অধিকারী এবং তাঁর মেয়ে৷ বর্ধমান স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে যান তাঁরা।
রেল পুলিশ সূত্রে খবর, সিসি ক্যামেরায় (CCTV) ধরা পড়েছে সেই ছবি।
ভোর ৪.৫২ মিনিটে বর্ধমান স্টেশনে ঢোকে পদাতিক এক্সপ্রেস। ৪.৫৬ মিনিটে মেয়েকে নিয়ে মন্ত্রীকে দেখা যায় বর্ধমান স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে। ভোর ৫টার পরে সাদা রঙের গাড়িতে করে মন্ত্রীকে বেরিয়ে যেতে দেখা যায় বলে সূত্রের খবর।
জানা যায়, পরেশ বর্ধমানের সার্কিট হাউজে মেয়েকে নিয়ে উঠেছেন। সারা দিন সেখানেই ছিলেন। বিকেলে ওই সাদা গাড়ি চড়েই তিনি বেরিয়ে যান। তার পর থেকে পরেশের মোবাইল সুইচড অফ। কোথায় যাচ্ছেন তিনি, এখনও জানা যায়নি।
তাঁকে খুঁজতেই হাতে টর্চ নিয়ে প্রতীকী বিক্ষোভ দেখাতে রাস্তায় নামল এসএফআই। এদিন এসএফআই হুগলি জেলা কমিটির নেতাকর্মীরা শ্রীরামপুর স্টেশন, তার আশপাশ এলাকায় মিছিল করে ‘পরেশ খোঁজো’ অভিযানে নেমেছিলেন।
অন্যদিকে এসএফআই রাজ্য সভাপতি প্রতীক উর রহমানের নেতৃত্বে শিয়ালদহ চত্বরে পরেশ অধিকারী কে খুঁজতে নামে এই ছাত্র সংগঠন। সন্ধে ৭.৩০ নাগাদ এক হাতে টর্চ আরেক হাতে সংগঠনের পতাকা নিয়ে শিয়ালদহ স্টেশনের সামনে এসএফআই নেতৃত্বকে এই কর্মসূচিতে দেখা যায়।
তাঁদের বক্তব্য, “শিক্ষা প্রতিমন্ত্রীকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। আমরা তাই খুঁজতে বেরিয়েছি। কিন্তু পেলাম না। পেলে নিশ্চয়ই ওঁকে এবং ওঁর মেয়েকে যত্ন করে নিজাম প্যালেস পর্যন্ত পৌঁছে দিয়ে আসব। রাজ্য সরকারের যদি ন্যূনতম লাজলজ্জা থাকে তাহলে এখনই পরেশ অধিকারীকে মন্ত্রিসভা থেকে সরাক এবং সিবিআই বাবা-মেয়ে দু’জনকেই গ্রেপ্তার করুক।”
অন্যদিকে বিকেলে নিজাম প্যালেসের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকে এসএফআই রাজ্য নেতৃত্ব। ছিলেন রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্যসহ আরও অনেকে।
পরে তাঁদের পুলিশ গ্রেপ্তার করে।
এই প্রসঙ্গে সৃজনের অভিযোগ, “শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতিতে দোষী তৃণমূলী নেতাদের গ্রেপ্তারের দাবিতে ‘চোর ধরো জেলে ভরো’ বলে মিছিল করতে গিয়েছিলাম আমরা। পুলিশ ভয়ানক মারধোর করে আটক করেছে। আমরা ছাড়ব না এ লড়াই। আগামীকাল রাজ্যজুড়ে ছাত্রযুব থানা ঘেরাও, বিক্ষোভ, মিসিং ডায়রি করা হবে।”