আজ খবর ডেস্ক: এদিন কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় জানিয়ে দিলেন, আজই সন্ধে ৬ টার মধ্যে সিবিআই (CBI) দপ্তরে হাজিরা দিতে হবে রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে (Partha Chatterjee)।
সেই সঙ্গে বিচারপতির নির্দেশ, এদিন বিকেল চারটের মধ্যে সিবিআই দপ্তরে হাজিরা দিতে হবে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC) উপদেষ্টা কমিটির প্রাক্তন চেয়ারম্যান শান্তিপ্রসাদ সিনহা সহ কমিটির বাকি সদস্যদের।
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের রায় কে চ্যালেঞ্জ করে বিচারপতি হরিশ ট্যান্ডনের ডিভিশন বেঞ্চে গেছেন পার্থ চ্যাটার্জি। আজ বিকেল ৩: ৩০ শে এই মামলাটি ডিভিশন বেঞ্চে শুনানি হবে।
উচ্চ আদালতের এহেন নির্দেশের পরই চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে। ওয়াকিবহাল মহলের ধারণা, পার্থ ও শান্তি প্রসাদ কে কি মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করবে সিবিআই?
প্রসঙ্গত, এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের বর্তমান শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে কেবল নিজাম প্যালেসে (Nizam Palace) হাজিরার নির্দেশ দিয়ে থেমে থাকল না আদালত। তাঁকে স্বেচ্ছায় মন্ত্রিসভা থেকে পদত্যাগ করার জন্যও পরামর্শ দিল কলকাতা হাইকোর্ট।
বুধবার এই সংক্রাম্ত মামলার রায়ে বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় বলেন, যে ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে তা উদ্বেগজনক। খোদ মন্ত্রীর (Partha Chatterjee) বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। তদন্তের নিরপেক্ষতা ও স্বচ্ছতার স্বার্থে পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের উচিত মন্ত্রিসভা থেকে ইস্তফা (Resignation) দেওয়া। তিনি যদি তা না করেন, তা হলে আদালত সরকার ও রাজ্যপালের কাছে সুপারিশ করছে তাঁকে মন্ত্রিসভা থেকে অপসারণ করা হোক।
কলকাতা হাইকোর্টের এই রায়ের পরে রীতিমত নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য প্রশাসন।
সপ্তাহ দুয়েক আগে আদালতের তরফে পার্থ চট্টোপাধ্যায় কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল নিজাম প্যালেসে হাজিরা দেওয়ার জন্য। এমনকি শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে তিনি যাতে এসএসকেএম (SSKM) হাসপাতালে ভর্তি হন, সেই নির্দেশ ও দেওয়া হয়েছিল আদালতে তরফে।
এই মুহূর্তে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মেদিনীপুরে সাংগঠনিক বৈঠক করছেন। তবে সেখানে বসেই তৃণমূল নেত্রীর বক্তব্য, বিপদের সময় পুরনো কর্মীরাই দলের আসল সম্পদ হিসেবে কাজ করেন। যা এই প্রসঙ্গে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহল।
তবে শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই তদন্তে যে যথেষ্ট অস্বস্তিতে, তা একপ্রকার পরিষ্কার। বুধবার সকাল থেকেই চাঞ্চল্য ছড়ায় কলকাতায় আসার জন্য জলপাইগুড়ি থেকে ট্রেনে উঠলেও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছে না রাজ্যের শিক্ষা প্রতিমন্ত্রী পরেশ অধিকারীর।
মেখলিগঞ্জের বিধায়ক তথা রাজ্যের মন্ত্রী পরেশচন্দ্র অধিকারীর এদিন কলকাতায় আসার কথা থাকলেও শিয়ালদহ স্টেশনে তাঁর দেখা মেলেনি। রহস্যজনক ভাবে উধাও সকন্যা মন্ত্রী।
মেয়ে অঙ্কিতা অধিকারীর স্কুল সার্ভিসে নিয়োগে জালিয়াতির অভিযোগে পরেশ অধিকারীকে সিবিআইয়ের সামনে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়। সেই নির্দেশ পেয়েই মঙ্গলবার সন্ধেবেলা মেয়ে অঙ্কিতাকে নিয়ে কলকাতার উদ্দেশে রওনা দিয়েছিলেন পরেশ। দেখা গিয়েছিল, পরেশ গোলাপি রঙের পাঞ্জাবি এবং অঙ্কিতা একটি মেরুন টিশার্ট ও ডেনিম ব্লু জিনস পরে জলপাইগুড়ি রোড স্টেশন থেকে ট্রেনে উঠছেন। তার আগে সাংবাদিকদের মন্ত্রী জানিয়েছিলেন, তিনি আদালতের নির্দেশ পেয়ে কলকাতা যাচ্ছেন।
কিন্তু বুধবার সকাল থেকে জানা যায়নি পরেশ বা অঙ্কিতা কোথায়।
পাশাপাশি জানা গিয়েছে, সিঙ্গল বেঞ্চের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে ডিভিশন বেঞ্চে মামলা করেছেন পরেশের আইনজীবীরা। মন্ত্রীর খোঁজ চলছে।
প্রসঙ্গত , ২০১৮ সালের ২৩ অগস্ট। তার ঠিক তিন দিন আগে শাসক দলের মহাসচিব পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের হাত ধরেই তৃণমূলে যোগ দান করেছিলেন বাম জমানার খাদ্যমন্ত্রী পরেশ অধিকারী। তারপরই কাকতালীয় ভাবে স্কুল সার্ভিস কমিশনের মেধা তালিকার (Merit List) ওয়েট লিস্টে নাম উঠে যায় পরেশ কন্যা অঙ্কিতা অধিকারীর !
শুধু তাই নয় মেয়েদের ওয়েট লিস্টে (Wait List) ফার্স্ট গার্ল হয়ে যান অঙ্কিতা!
বিরোধীদের অভিযোগ, অথচ তার একদিন আগেও যে তালিকা প্রকাশ হয়েছিল, তাতে কোথাও ছিল না অঙ্কিতার নাম। ২৩ অগস্ট দুপুরে প্রেস কনফারেন্সে শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে এ নিয়েই প্রশ্ন করা করেছিলেন সাংবাদিকরা। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে মেধা তালিকা বদল হল কেন? কীভাবেই বা তালিকায় এল কোচবিহারের সদ্য প্রাক্তন ফরওয়ার্ড ব্লক নেতা পরেশ অধিকারীর মেয়ের নাম?
প্রশ্ন শুনেই রীতিমত ক্ষেপে গিয়েছিলেন পার্থ। তিনি পাল্টা বলেছিলেন,”প্রমাণ আছে? কে বলেছে, ওঁর নাম আগে তালিকায় ছিল না।”
ইতিমধ্যেই বেশ কিছু চাকরি প্রার্থীর নিয়োগ বাতিল হয়েছে আদালতের নির্দেশে। তারমধ্যে পার্থ চট্টোপাধ্যায় এর উদ্দেশ্যে এহেন নির্দেশ ঘিরে কার্যত উত্তেজনার পারদ চড়ছে রাজ্য রাজনীতিতে।